➤ইসরায়েলের সঙ্গে নতুন কোনো আলোচনা নয় : হামাস
➤ফের যুদ্ধবিরতি আলোচনা শিগগির শুরু হতে পারে
➤হামাসের বিনাশ সম্ভব নয় : সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী
➤ফের নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল ইসরায়েল
➤ইসরায়েলকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আহ্বান জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞের
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা আবার শুরু হওয়ার সম্ভাবনা বেড়েছে। যুদ্ধবিরতির আলোচনা শিগগির আবার শুরুর সম্ভাবনা গত শনিবার বাড়ার মধ্যেই গাজায় নতুন করে হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েল। এই হামলায় ৪০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। বিষয়টি সম্পর্কে জানাশোনা আছে- এমন এক কর্মকর্তা বলেছেন, আগামী সপ্তাহে আলোচনা আবার শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) প্রধান ও কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পরই এমন সিদ্ধান্ত হয়। যে কর্মকর্তা এই তথ্য দিয়েছেন, তিনি তার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। এমনকি তিনি তার জাতীয়তা প্রকাশেও রাজি নন। তিনি বলেছেন, আগামী সপ্তাহে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর নেতৃত্বে নতুন প্রস্তাবের ভিত্তিতে আলোচনা শুরু করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে থাকছে মিসর ও কাতার। এই প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকবে।
এদিকে গত শনিবার গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরুর খরব ইসরায়েলি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতা ওসামা হামদান বলেছেন, ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধবিরতি নিয়ে নতুন করে আলোচনার প্রয়োজন নেই। এখন অবিলম্বে ইসরায়েলের যা করা দরকার তা হলো গাজা থেকে তাদের পূর্ণ প্রত্যাহার এবং সকল ধরনের আগ্রাসন বন্ধ করা। হামাস এরই মধ্যে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে, যা ইসরায়েল প্রত্যাখ্যান করেছে। সুতরাং নতুন করে আলোচনার দরকার নেই। আলোচনার সময় নতুন প্রস্তাব ইসরায়েল গ্রহণ করবে, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।
হামাসের বিনাশ সম্ভব নয় : সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী
গত শনিবার ইসরায়েলের পাবলিক ব্রডকাস্টার কেএএন-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে গাজায় নিরঙ্কুশ বিজয় বা হামাসের বিনাশ কোনোটিই সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করে ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট বলেছেন, রাফাহতে সামরিক অভিযান বন্ধ করতে হবে। বন্দিদের ফিরিয়ে আনার জন্য চলমান গাজা যুদ্ধ বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। গাজার চলমান যুদ্ধে ইসরায়েলের কোনো লাভ নেই। এতে লাভ কেবল প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং তার সরকারের কিছু চরমপন্থি সদস্যের।
ফের নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল ইসরায়েল :
দখলদার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর পদত্যাগ ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তির জন্য একটি চুক্তির দাবিতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে ইসরায়েল। এ সময় আগাম নির্বাচনের দাবিও জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। গত শনিবার স্থানীয় সময় রাতে রাজধানী তেল আবিবসহ ইসরায়েলের একাধিক স্থানে এই বিক্ষোভ হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয় তেল আবিবে। এতে ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ অংশ নেয় বলে জানা গেছে। সেখান থেকে বেশ কিছু বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করে ইসরায়েলি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সম্প্রতি ফিলিস্তিনি হামাস যোদ্ধা কর্তৃক ইসরায়েলি নারী সেনাদের বন্দি করার একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ্যে আসে। এরপরই জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভে আরো উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশটি। বিক্ষোভকারীদের দাবি, নাহাল ওজে নারী সৈন্যদের ধরে নিয়ে যাওয়ার যে ভয়ঙ্কর ভিডিওগুলো প্রকাশ হয়েছে, সেগুলো ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের স্তরে স্তরে ব্যর্থতার প্রমাণ। নেতানিয়াহু, আপনাকে সতর্ক করা হয়েছিল এবং আপনি উপেক্ষা করেছিলেন। শুধুমাত্র এই কারণে, আপনাকে অবশ্যই দায়িত্ব ওই ঘটনার নিতে হবে এবং অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। আপনি ক্ষমতায় থাকার যোগ্য নন।
সম্প্রতি ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, গত বছর প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে চারবার সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করেননি তিনি। বিক্ষোভ থেকে আশঙ্কা করা হয়, ইসরায়েল সরকার যদি এখনই হামাসের সঙ্গে একটি চুক্তিতে না পৌঁছায়, তাহলে শেষ পর্যন্ত হয়তো জিম্মিদের ফিরিয়ে না এনেই যুদ্ধ শেষ করতে বাধ্য হবে।
‘ফাইটিং কম্পাউন্ড’ ব্যবহার করছে হামাস, বিপাকে ইসরায়েল :
গাজার ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়া উদ্বাস্তু শিবিরে ‘ফাইটিং কম্পাউন্ড’ প্রতিষ্ঠা করেছে। এর ফলে তারা ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিভিন্ন ভবনের মধ্য দিয়ে দ্রুত এবং নিরাপদে চলাচল করতে পারছে। এতে করে আগের মতো তাদেরকে রাস্তায় দেখা যাচ্ছে না। আর রাস্তায় তাদের দেখামাত্র ইসরায়েলি হামলার যে শিকার হতো, তা থেকেও রক্ষা পাচ্ছে। যুদ্ধ পর্যবেক্ষকেরা এ তথ্য জানিয়েছেন। গত ১১ মে থেকে ইসরায়েলি বাহিনী জাবালিয়ায় যুদ্ধ করছে। তারা জানিয়েছে, এই এলাকার ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা গাজার অন্যান্য অংশের চেয়ে অনেক বেশি ‘সাহসী’ আর তারা এখন পর্যন্ত যুদ্ধে সবচেয়ে সহিংসভাবে লড়াই করছে। ইনস্টিটিউট ফর দি স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) এবং ক্রিটিক্যাল থ্রেটস প্রজেক্ট (সিটিপি) তাদের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিরক্ষা থিঙ্ক ট্যাঙ্ক জানিয়েছে, জাবালিয়া দখল করার জন্য দুই সপ্তাহ ধরে চলা যুদ্ধে দেখা যাচ্ছে যে হামাস ‘সেখানে পরিকল্পিত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে’ এবং ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর তাদের ‘অস্বাভাবিক উচ্চ মাত্রার আক্রমণ’ প্রমাণ করেছ যে, হামাস এখনও তাদের ‘যুদ্ধ ক্ষমতা কার্যকর’ রাখতে পেরেছে। এমনকি অক্টোবরে তাদের জাবালিয়া কমান্ডার নিহত হওয়া সত্ত্বেও তারা দুর্বল হয়নি।
ফাঁদে ফেলে ইসরায়েলি সেনাদের জিম্মি হামাসের :
এদিকে গাজায় ইসরায়েলের একদল সৈনিককে ফাঁদে ফেলে বন্দি করার দাবি করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেড। একটি রেকর্ড করা অডিও বার্তায় এই দাবি করে ফিলিস্তিনি গ্রুপটি। গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অভিযানের সময় তাদের বন্দি করা হয় বলে এতে জানানো হয়। কাসসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবায়দা অবশ্য কতজন ইসরায়েলি সৈন্যকে বন্দি করা হয়েছে, সে তথ্য দেননি। তবে তিনি জানিয়েছেন, ওই ইসরায়েলি সৈন্যদলে যত সৈন্য ছিল তারা সবাই হয় নিহত বা আহত অথবা বন্দি হয়েছে। হামাস এ নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা এক ইসরায়েলি সৈন্যকে টেনে হামাসের একটি সুড়ঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে।
উত্তর গাজার জাবালিয়ায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানানো হয়েছে। এখানে আগে থেকেই ইসরায়েলি সৈন্যরা প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ছিল। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অবশ্য হামাস যোদ্ধাদের হাতে তাদের সৈন্য আটক হওয়ার দাবি অস্বীকার করেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্স পোস্টে জানায়, তাদের কোনো সৈন্য অপহরণ বা দুর্ঘটনার শিকার হয়নি।
ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞের :
গত শনিবার ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টার ফ্রান্সেসকা আলবানেস। তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রুলিং অমান্য করে গাজার দক্ষিণাঞ্চলের শহর রাফাহয় হামলার বিস্তৃত বাড়িয়েছে ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ইসরায়েল কোনোভাবেই এই মাতলামি ও নৃশংসতা বন্ধ করবে না। সুতরাং ইসরায়েলের ওপর অবশ্যই নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে। দেশটির অস্ত্র আমদানিও নিষিদ্ধ করতে হবে। সেই সাথে তেল আবিবের সাধে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্কও ছিন্ন করতে হবে। গাজায় ইসরায়েলের এমন নারকীয় হামলার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, অচিরেই রাফায় গণহত্যামূলক ইসরায়েলি কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।


























