পর্ব – ৬
সকল মানুষ সমান। এই যে, কথায় কথায় বলা হয়, ইসলাম শান্তির ধর্ম এবং ইসলামে যত বেশি নারীর অধিকার দেয়া হয়েছে আর কোথাও দেয়া হয়নি। এগুলো হলো, বাকোয়াস। কোথায় দেয়া হয়েছে? সম্পত্তিতে সমান অধিকারের কথা বললেই বলে ইসলাম গেল। তাহলে ব্যাংকে যে সুদের কারবার করছে সেই ব্যাংকের বিরুদ্ধে তো কথা বলেনা। নারীর বিষয়টা আসলেই তখন ধর্মটাকে টেনে আনে।
এই ধর্ম ব্যবসায়ীরা কিন্তু একটা কথা বলে না, এই যে বিভিন্ন মাদ্রাসায়, মসজিদে মেয়েরা ধর্ষিত হচ্ছে। অন্য নির্যাতন তো হচ্ছেই, ধর্ষিত হচ্ছে এরা বলে না ইসলামটা কোথায়? আমি একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আজকে সকল মানুষ সমান এটার মূল ভিত্তিটা কি? আজকে দেখেন যে যে ধর্মেই বিশ্বাস করুক না কেন, সবাই বলে তাদের সৃষ্টিকর্তারা তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু সৃষ্টির পদ্ধতিটা কিন্তু একই। সকল মানুষ কিন্তু একই পদ্ধতিতে মায়ের গর্ভ থেকে জন্মগ্রহণ করছে।
তার মানেটা কি? আইদার, যারা কোন ধর্ম বিশ্বাস করে না, তারাও কিন্তু একইভাবে এই পৃথিবীতে আসছে। তার মানেটা কি? মানেটা হচ্ছে সকল সৃষ্টি যারা, ধর্মে বিশ্বাস করে, আমরা যারা ধর্মে বিশ্বাস করি তাদের মানতে হবে যে, সকল ধর্মের সৃষ্টিকর্তারা ঐক্যমত্য হয়েছে যে, সকল মানুষকে আমরা একই পদ্ধতিতে পৃথিবীতে পাঠাব। তার মানে কি সকলেই সমান। সমান পদ্ধতিতে আসছে। সকলেই সমান। এই পৃথিবীতে এসে তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।
ধর্ম হলো পরকালের আল্লাহ, ভগবান, ঈশ্বর, গড, যে যে ধর্মেই বিশ্বাস করিনা কেন তারা পরকালে বিচার করবে। এইখানে রাষ্ট্রর কিছু বলার থাকতে পারেনা। রাষ্ট্র হচ্ছে, মানুষ সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং এই পৃথিবীতে তাদের রাষ্ট্রের আওতায় যে সমস্ত নাগরিক বসবাস করে তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানীয় জল, মানবাধিকার এগুলো দেখার দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রের। এগুলো ব্যবস্থাপনা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাষ্ট্র পরিচালনা যারা করে তারা এগুলো দেখভাল করবে। পরকালের বিষয়গুলো সৃষ্টিকর্তারা দেখবেন। এইখানে রাষ্ট্রর কিছু বলার থাকতে পারেনা। ঐ খানে রাষ্ট্র গিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেনা। কারণ এটা মানবসৃষ্ট। সুতরাং পরকালের ইস্যু থেকে কিন্তু রাষ্ট্রকে হাত গুটিয়ে আনতে হবে। পরকালের ইস্যুটা যার যার ব্যক্তিগত।
যে ব্যক্তি, যে উপার্জন করবেন ইহকালে পরকালে গিয়ে তিনি সেটা ভোগ করবেন। তাদের সৃষ্টিকর্তা তাকে সেই পুরস্কারটা দেবেন। সেটা বেহেশত, দোজখ হোক। সেটা হলো সৃষ্টিকর্তার হাতে, সেখানে গিয়ে রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করতে পারেনা। সেই জন্য আমরা বলছি রাষ্ট্রধর্ম হতে পারে না। রাষ্ট্রের কোন ধর্ম হতে পারে না। মানুষের ধর্ম রাষ্ট্রের হতে পারে না।
এই বিষয়গুলো যতক্ষণ আমরা বের হতে না পারব, যতক্ষণ সমাজে গণতন্ত্র কায়েম না হবে, আইন না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত বৈষম্য থাকবে এবং বৈষম্য থাকলেই এই নির্যাতনগুলো হবে। নারীর প্রতি বৈষম্য সমাজের ৫০ ভাগ মানুষের বিরুদ্ধে যদি আকাশচুম্বী বৈষম্য থাকে সেই সমাজ কখনো গণতান্ত্রিক হতে পারে না এবং সেই সমাজ কর্তৃক সৃষ্ট রাষ্ট্র কখনো গণতান্ত্রিক হতে পারে না। বছর বছর নির্বাচন হতে পারে। নির্বাচনে দল পরিবর্তন হতে পারে কিন্তু গণতন্ত্র আসবে না। সুতরাং গণতন্ত্র আসতে হলে সকল প্রকার আধিপত্যের বিরুদ্ধে এবং এই আধিপত্যবাদটাকে দূর করতে পারলেই বৈষম্যটাকে নির্মূল করতে হবে। বৈষম্যগুলো নির্মূল হলেই কিন্তু একটা সমাজ গণতান্ত্রিক হবে।
আধিপত্যবাদের বিষয়টি যদি পরবর্তী প্রজন্ম বুঝতে পারে তাহলেই আমাদের সাফল্য আসবে। পরবর্তী প্রজন্ম, তাদেরকে তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে দায়িত্ব নিতে হবে। এই বিষয়গুলো আমাদের বয়ষ্কদের উপরে ছেড়ে দিলে হবে না। আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে এখন এই কথাগুলো বলছি, এখন পরবর্তী প্রজন্ম যদি এইগুলো বোঝে, এইগুলো যদি তারা ঠিক করে সেটাই হবে আসল বিষয়।
আগামীকাল প্রকাশিত হবে শেষ পর্ব। এই সাক্ষাতকারটি ২০২০ সালে নেয়া।


























