◉ বেশি দামে চাল বিক্রি করায় ১১ জনকে আটক
মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে বন্যায় অন্তত ১০ হাজার মানুষ তাদের বাড়িতে আটকা পড়েছে এবং বিদ্যুৎ ও ফোন লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এদিকে রাজ্য আবহাওয়া অফিস আরও ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কবার্তা দিয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম রেডিও ফ্রি এশিয়া এই তথ্য জানিয়েছে। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম পরিবেশিত খবরে বলা হয়, উত্তর কাচিন রাজ্যের শহর মাইটকিনাতে কয়েকদিনের ভারী বর্ষণের পর আয়ারওয়াদি নদীর পানি ‘বিপৎসীমার’ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে অনেক ভবন প্লাবিত হতে এবং লোকজনকে তাদের জিনিসপত্র মাথায় করে নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে।
মাইটকিনারের একজন বাসিন্দা এএফপি’কে বলেছেন, ‘সেখানে বন্যার পানি খুব দ্রুত বাড়ছে। অনেক বাসিন্দা এখনো তাদের বাড়িতে আটকা পড়াবস্থায় রয়েছে। বন্যার কারণে রোববার থেকে বিদ্যুত ও ফোন নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে গেছে। শহরে জ্বালানির ঘাটতি দেখা দিয়েছে এবং উদ্ধারকারীরা মোটর বোটে মানুষের কাছে পৌঁছাতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।’ মাইটকিনারের আরেক বাসিন্দা বলেন, তার বাড়ির নিচতলা পানিতে ডুবে গেছে এবং উদ্ধারকারী দল তাদের কাছে না পৌঁছানো পর্যন্ত তিনি প্রতিবেশীদের সাথে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত বন্যার পানি কিছুটা কমতে দেখা গেছে। কিন্তু এখনও বৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে চাল বিক্রি করায় ১১ জনকে আটক করেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। তাদের মধ্যে একজন জাপানি নাগরিকও আছেন। গত সোমবার মিয়ানমারের কর্মকর্তারা জানান, আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে চাল ব্যবসায়ী, মিলার ও খুচরা বিক্রেতা রয়েছেন। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৭০ শতাংশের বেশি দামে তারা চাল বিক্রি করে আসছিলেন। জাপানের চিফ কেবিনেট সেক্রেটারি ইয়োশিমাসা হায়াশি জানান, মিয়ানমারের বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুন থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক জাপানি নাগরিককে আটক করেছে দেশটির পুলিশ।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ২০২১ সালে সেনা অভ্যুত্থান হয়। উৎখাত করা হয় গণতন্ত্রকামী নেত্রী অং সান সু চির দলের বেসামরিক সরকারকে। এরপর থেকে জান্তাবিরোধী সহিংস বিক্ষোভে উত্তাল রয়েছে পুরো মিয়ানমার। এই বিক্ষোভ রূপ নিয়েছে সশস্ত্র সংগ্রামে। বিক্ষোভ ও সংঘাতের জেরে মিয়ানমারে ৩০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এই হিসাব জাতিসংঘের। সংকটে পড়েছে দেশটির অর্থনীতিও। গত মাসের শুরুর দিকে মিয়ানমারে সোনা ও বৈদেশিক মুদ্রার কারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। আটক করা হয় ৩৫ জনকে। তাঁদের মধ্যে বিদেশে আবাসন কেনাবেচার এজেন্টও ছিলেন। যাইহোক, মিয়ানমারের চাল বিক্রেতাদের মতে, দেশের বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়হার ও কালোবাজারে এই হারের মধ্যকার অসামঞ্জস্য তাদের ব্যবসার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া সশস্ত্র সংঘাতে ধানের আবাদ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিঘ্নিত হচ্ছে চালের পরিবহন। বিশ্লেষকদের মতে, এসব সমস্যা মিয়ানমারে চালের দাম বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এর সুযোগ নিচ্ছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। মিয়ানমারে সম্প্রতি চালের দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, সরকার অনুমোদিত দামে চাল বিক্রি করায় লোকসান হচ্ছে।


























