১২:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নির্বাচনের আগে মুখোমুখি দুই প্রার্থী

FILE PHOTO: Presidential candidates Masoud Pezeshkian and Saeed Jalili ​attend an election debate at a television studio in Tehran, Iran July 1, 2024. Morteza Fakhri Nezhad/IRIB/WANA (West Asia News Agency)/Handout via REUTERS/File Photo

ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এখনও চূড়ান্ত ফলাফল পাওয়া যায়নি। গত শুক্রবার কোনো প্রার্থী এককভাবে ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় ভোট দ্বিতীয় ধাপে গড়িয়েছে। এক্ষেত্রে প্রথম ভোটের গণনায় এগিয়ে আছেন কট্টরপন্থী সাঈদ জালিলি এবং সংস্কারপন্থি নেতা মাসুদ পেজেশকিয়ান। ক্রমাগত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে ইরানের অর্থনৈতিক অবস্থা অস্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। দিন দিন দেশটিতে ভোগ্যপণ্য ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এই অবস্থায় দেশটিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে রাইসির পর কে হচ্ছেন ইরানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট এবং তিনি কীভাবে দেশটির ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থা মোকাবিলা করবেন। আগামীকাল শুক্রবার ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ শুরু হবে।

এর আগে মঙ্গলবার দেশটির অর্থনৈতিক সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মুখোমুখি হয়েছিলেন প্রথম রাউন্ডে এগিয়ে থাকা জালিলি এবং পেজেশকিয়ান। সেখানে তারা যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার প্রভাব এবং বিশ্ব শক্তির সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি পুনরুদ্ধারের বিষয়ে নিজ নিজ প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন। পেজেশকিয়ান একজন কার্ডিয়াক সার্জন। তিনি মনে করেন, পশ্চিমাদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ইরানের অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। গত চার বছরে ৪০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি এবং ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্যের হার উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, আমরা এমন একটি সমাজে বাস করি যেখানে অনেকেই রাস্তায় ভিক্ষা করে। তার প্রশাসন ‘অবিলম্বে’ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করার জন্য কাজ করবে এবং অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়া তিনি ইরানের পারমাণবিক নিষেধাজ্ঞা কমাতেও কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন তিনি। সংস্কারপন্থি নেতা হিসেবে পরিচিত ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। ২০১৫ সালে বিশ্ব পারমাণবিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন তিনি। পরে ২০১৮ সালে চুক্তি থেকে ইরানকে বাদ দেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবারের নির্বাচনে রুহানি সংস্কারপন্থি হিসেবে পেজেশকিয়ানকে সমর্থন করেছেন।

২০১৫ সালে ইরানের ওই পারমাণবিক চুক্তির বিরোধিতা করেছিলেন পেজেশকিয়ানের প্রতিদ্বন্দ্বী কট্টরপন্থী সাঈদ জালিলি। বিতর্কে জালিলি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই আমাদের প্রতিশ্রুতিগুলোকে সম্মান করতে হবে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। এছাড়া পেজেশকিয়ানের পরিকল্পনায় নিষেধাজ্ঞার প্রতি নিন্দা না থাকায় তার সমালোচনা করেছেন তিনি। জালিলি ইরানে ‘জীবন্ত শহীদ’ হিসেবে পরিচিত। ১৯৮০ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধে একটি পা হারিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া তিনি পশ্চিমাদের সমালোচনার জন্য ইরানে কট্টরপন্থিদের কাছে বেশ জনপ্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত। উভয় প্রার্থীই অর্থনীতি এবং পারমাণবিক ইস্যুতে তাদের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করেছেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন আগামী শুক্রবারের নির্বাচনে এ দুই নেতার কে নির্বাচিত হচ্ছেন তার উপরেই নির্ভর করছে ইরানের ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিকল্পনা।

ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহীম রাইসির হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর দেশটিতে সংবিধান অনুযায়ী ৫০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের নির্দেশ দেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ জুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেন ইরানের জনগণ। এবারের নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে মোট ছয় প্রার্থীকে অনুমোদন করে দেশটির গার্ডিয়ান কাউন্সিল। তারমধ্যে ভোটের আগের দিন কট্টরপন্থী দুই প্রার্থী তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। পরে গত শুক্রবার মোট চার প্রার্থীর মধ্যে ভোট হয়। ভোটের ফলাফলে সাঈদ জালিলি এবং মাসুদ পেজেশকিয়ান এগিয়ে রয়েছে। যেহেতু তাদের কেউই এককভাবে ৫০ শতাংশ ভোট পাননি তাই আগামীকাল শুক্রবার দ্বিতীয় ধাপের ভোট গণনার মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন ইরানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট।

জনপ্রিয় সংবাদ

সব রেকর্ড ভেঙে স্বর্ণের দামে নতুন ইতিহাস, ভরি ছাড়াল দুই লাখ ২৭ হাজার

নির্বাচনের আগে মুখোমুখি দুই প্রার্থী

আপডেট সময় : ০৮:৪১:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ জুলাই ২০২৪

ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এখনও চূড়ান্ত ফলাফল পাওয়া যায়নি। গত শুক্রবার কোনো প্রার্থী এককভাবে ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় ভোট দ্বিতীয় ধাপে গড়িয়েছে। এক্ষেত্রে প্রথম ভোটের গণনায় এগিয়ে আছেন কট্টরপন্থী সাঈদ জালিলি এবং সংস্কারপন্থি নেতা মাসুদ পেজেশকিয়ান। ক্রমাগত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে ইরানের অর্থনৈতিক অবস্থা অস্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। দিন দিন দেশটিতে ভোগ্যপণ্য ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এই অবস্থায় দেশটিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে রাইসির পর কে হচ্ছেন ইরানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট এবং তিনি কীভাবে দেশটির ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থা মোকাবিলা করবেন। আগামীকাল শুক্রবার ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ শুরু হবে।

এর আগে মঙ্গলবার দেশটির অর্থনৈতিক সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মুখোমুখি হয়েছিলেন প্রথম রাউন্ডে এগিয়ে থাকা জালিলি এবং পেজেশকিয়ান। সেখানে তারা যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার প্রভাব এবং বিশ্ব শক্তির সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি পুনরুদ্ধারের বিষয়ে নিজ নিজ প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন। পেজেশকিয়ান একজন কার্ডিয়াক সার্জন। তিনি মনে করেন, পশ্চিমাদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ইরানের অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। গত চার বছরে ৪০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি এবং ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্যের হার উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, আমরা এমন একটি সমাজে বাস করি যেখানে অনেকেই রাস্তায় ভিক্ষা করে। তার প্রশাসন ‘অবিলম্বে’ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করার জন্য কাজ করবে এবং অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়া তিনি ইরানের পারমাণবিক নিষেধাজ্ঞা কমাতেও কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন তিনি। সংস্কারপন্থি নেতা হিসেবে পরিচিত ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। ২০১৫ সালে বিশ্ব পারমাণবিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন তিনি। পরে ২০১৮ সালে চুক্তি থেকে ইরানকে বাদ দেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবারের নির্বাচনে রুহানি সংস্কারপন্থি হিসেবে পেজেশকিয়ানকে সমর্থন করেছেন।

২০১৫ সালে ইরানের ওই পারমাণবিক চুক্তির বিরোধিতা করেছিলেন পেজেশকিয়ানের প্রতিদ্বন্দ্বী কট্টরপন্থী সাঈদ জালিলি। বিতর্কে জালিলি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই আমাদের প্রতিশ্রুতিগুলোকে সম্মান করতে হবে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। এছাড়া পেজেশকিয়ানের পরিকল্পনায় নিষেধাজ্ঞার প্রতি নিন্দা না থাকায় তার সমালোচনা করেছেন তিনি। জালিলি ইরানে ‘জীবন্ত শহীদ’ হিসেবে পরিচিত। ১৯৮০ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধে একটি পা হারিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া তিনি পশ্চিমাদের সমালোচনার জন্য ইরানে কট্টরপন্থিদের কাছে বেশ জনপ্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত। উভয় প্রার্থীই অর্থনীতি এবং পারমাণবিক ইস্যুতে তাদের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করেছেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন আগামী শুক্রবারের নির্বাচনে এ দুই নেতার কে নির্বাচিত হচ্ছেন তার উপরেই নির্ভর করছে ইরানের ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিকল্পনা।

ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহীম রাইসির হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর দেশটিতে সংবিধান অনুযায়ী ৫০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের নির্দেশ দেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ জুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেন ইরানের জনগণ। এবারের নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে মোট ছয় প্রার্থীকে অনুমোদন করে দেশটির গার্ডিয়ান কাউন্সিল। তারমধ্যে ভোটের আগের দিন কট্টরপন্থী দুই প্রার্থী তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। পরে গত শুক্রবার মোট চার প্রার্থীর মধ্যে ভোট হয়। ভোটের ফলাফলে সাঈদ জালিলি এবং মাসুদ পেজেশকিয়ান এগিয়ে রয়েছে। যেহেতু তাদের কেউই এককভাবে ৫০ শতাংশ ভোট পাননি তাই আগামীকাল শুক্রবার দ্বিতীয় ধাপের ভোট গণনার মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন ইরানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট।