০৪:১৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শোকাচ্ছন্ন ইউক্রেন, নিহত বেড়ে ৪১

➤ ইউক্রেনজুড়ে রাশিয়ার বিধ্বংসী হামলা
➤ মোদিকে এক হাত নিলেন জেলেনস্কি
➤ ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে পুতিনকে সরাসরি আহ্বান মোদির
➤ মোদির রাশিয়া সফর নিয়ে পশ্চিমাদের কোনো মন্তব্য নেই

 

ইউক্রেনে বিগত কয়েক মাসের মধ্যে গত সোমবার সবচেয়ে বিধ্বংসী হামলা চালিয়েছে রাশিয়ান বাহিনী। সবচেয়ে মারাত্মক এ হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪১ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ১৭০ জন। ভয়াবহ এ হামলায় বহু হতাহতের ঘটনায় একদিনের শোক পালন করছে ইউক্রেন। গতকাল রাশিয়া যেসব ভবনে হামলা চালিয়েছে তার মধ্যে কিয়েভের প্রধান শিশু হাসপাতালও আছে। গতকাল ভোরের দিকেও নিখোঁজদের উদ্ধারে ধ্বংসাবশেষে তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে। অন্যদিকে রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় বেলগোরদ অঞ্চলের গভর্নর বলেছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ইউক্রেনের হামলায় চারজন নিহত হয়েছে। সেইসঙ্গে রাশিয়া দাবি করেছে, তারা ইউক্রেনের হাসপাতালে হামলা চালায়নি। তবে ইউক্রেন বলছে, তারা রাশিয়ান ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের অবশিষ্ট পেয়েছে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের জন্য ওয়াশিংটনে যাওয়ার আগে পোল্যান্ডে যাত্রাবিরতি করেন। সেখানে এই হামলাকে নৃশংসতা বলে উল্লেখ করে জেলেনস্কি বলেন, ‘রুশ সন্ত্রাসীরা’ আবারও বিভিন্ন শহর কিয়েভ, দিনিপ্রো, ক্রিভি রিগ, স্লোভিয়ানস্ক, ক্রামতোর্স্কে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনে ব্যাপকভাবে আক্রমণ করেছে। তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে নিষ্ঠুর অপরাধী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে এক বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, হামলায় শিশুদের হাসপাতাল, কিয়েভের একটি মাতৃত্ব কেন্দ্র, শিশুদের নার্সারি এবং ব্যবসায়িক কেন্দ্র ও বাড়িসহ ১০০ টিরও বেশি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রুশ সন্ত্রাসীদের অবশ্যই এর জবাব দিতে হবে।
ইউক্রেনের শহরগুলোতে ৪০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে রাশিয়া। বিমান প্রতিরক্ষা ৩৮টির মধ্যে ৩০টি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে বলে ইউক্রেনের বিমানবাহিনী জানিয়েছে। তবে কিয়েভের সামরিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাজধানীতে তিন শিশুসহ ২৭ জন মারা গেছে এবং দুই ঘণ্টা পরের হামলায় ৮২ জন আহত হয়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় শহর ক্রিভি রিহ, ডিনিপ্রো এবং দুটি পূর্বাঞ্চলীয় শহরগুলোতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরকার বলেছে, ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে জরুরিভাবে তাদের আকাশ প্রতিরক্ষার আপগ্রেড প্রয়োজন।

 

মোদিকে এক হাত নিলেন জেলেনস্কি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কড়া সমালোচনা করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। গত সোমবার মোদি যখন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে দেখা করেন, সেইদিনই ইউক্রেনে রুশ হামলায় অন্তত ৪১ জন নিহত হয়েছে। এ নিয়ে মোদিকে এক হাত নেন জেলেনস্কি। মস্কোতে মোদির এই সফরকে শান্তি প্রচেষ্টার জন্য ব্যাপক হতাশা এবং বিধ্বংসীকর করে বলে উল্লেখ করেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট। রুশ হামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জেলেনস্কি বলেন, এটা অনেক হতাশা ও বিধ্বংসীকর যে এমন দিনে বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশের নেতা এবং বিশ্বের সবচেয়ে নিষ্ঠুর অপরাধীর সঙ্গে কোলাকুলি করছেন। কিয়েভে গতকালের রুশ হামলা নিয়ে গতকাল ভাষণেও কোনো মন্তব্য করেননি মোদি। তবে মোদি এদিন ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে যে সম্পর্ক তার প্রশংসা করেছেন।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পুরো মাত্রার অভিযানের ঘোষণা দেন পুতিন। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর এটি মোদির দেশটিতে প্রথম সফর। প্রকাশিত বিভিন্ন ছবিতে দেখা যাচ্ছে, দুই নেতা একে অপরকে জড়িয়ে ধরেছেন। দুই জনের মধ্যে চায়ের আড্ডা হচ্ছে এবং ইলেক্ট্রনিক গাড়িতে বসে ঘোড়ার প্রতিযোগিতা উপভোগ করছেন।

 

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে পুতিনকে সরাসরি আহ্বান মোদির
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে পুতিনকে সরাসরি আহ্বান জানিয়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। মস্কোতে সরকারি ভবনে মোদি পুতিনকে বলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে কোনো সমাধান পাওয়া যায় না। ভারত সবসময় জাতিসংঘের সনদসহ আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে সম্মান জানানোর আহ্বান জানায়। যুদ্ধক্ষেত্রে কোনো সমাধান নেই, আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। ডিনারের সময় মোদি পুতিনকে এসব বলেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতারণার মাধ্যমে ভারতীয়দের রাশিয়ান বাহিনীতে যে নেওয়া হয়েছে- সেই উদ্বেগের কথাও পুতিনকে জানিয়েছেন মোদি। সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, রাশিয়া এসব ভারতীয়কে ফিরিয়ে আনবে বলে নিশ্চিত করেছে। এনডিটিভি বলছে, অন্তত দুই ডজন ভারতীয়কে জোরপূর্বক ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে প্রতারণা করে এসব ভারতীয়কে নিয়ে যাওয়া হয়।
২২তম ইন্দো-রাশিয়া সামিটে যোগ দিতে দুই দিনের রাশিয়া সফরে গেছেন নরেন্দ্র মোদি। গত সোমবার তিনি মস্কো বিমানবন্দরে পৌঁছান। রাশিয়া সফরের পর মোদি যাবেন অস্ট্রিয়ায়। ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে নরেন্দ্র মোদির এই সফরকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণভাবে দেখছে পুরো বিশ্বের কূটনীতি। ভারতে তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর এটি মোদির প্রথম রাশিয়া সফর।

রাশিয়ায় মোদি, ক্ষুব্ধ যুক্তরাষ্ট্র?
মোদির রাশিয়া সফর নিয়ে এখন পর্যন্ত পশ্চিমা দেশগুলোর নেতারা সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে গত বৃহস্পতিবার ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি জানান, ইউক্রেন আক্রমণের বিষয়ে একজোট হয়ে রাশিয়াকে জবাবদিহি করানোর বিষয়ে তার দেশ ভারতের সঙ্গে লাগাতার যোগাযোগ রাখছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিষয়টা স্পষ্ট যে, মোদি ও পুতিনকে একসঙ্গে দেখে যুক্তরাজ্য বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেউই খুশি হবে না। কারণ ওই দুই দেশই মনে করে, ইউরোপে অস্থিরতার কারণ হলো ইউক্রেনে রুশ হামলা এবং এর জন্য দায়ী পুতিন। মোদির রাশিয়া সফর একাধিক পশ্চিমা দেশের কাছে অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে। এই দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আর কী অর্থ হতে পারে, সেই বিষয়ে সন্দিহান পশ্চিমা দেশগুলো। ভারতের পক্ষ থেকে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের নিন্দা না করার বিষয়ে বহুবার দুঃখ প্রকাশ করেছে বহু পশ্চিমা দেশ। ভারতের অনেকে বিশ্বাস করেন, রাশিয়ার প্রসঙ্গ এলে নিজেদের নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেলে পশ্চিমা মিডিয়া। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরা মনে করে কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য তাদের চেষ্টাকে জটিল করে তুলেছে ভারতের এমন অবস্থান।

লন্ডনের কিংস কলেজে সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের প্রফেসর ক্রিস্টোফ জাফরেলট জানিয়েছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির রাশিয়া সফরের ভূ-রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। ভারত রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে তুলতে খুবই আগ্রহী। এবং সেটা শুধু তাদের (ভারতের) সামরিক সরঞ্জামের ক্ষেত্রে রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীলতার কারণেই নয়, ভারত একটা বহু মেরু বিশ্বকে তুলে ধরতে চায় যেখানে তারা (ভারত) সব অংশীদারের সঙ্গে তার নিজের স্বার্থ প্রচার করার মতো অবস্থায় আছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

সব রেকর্ড ভেঙে স্বর্ণের দামে নতুন ইতিহাস, ভরি ছাড়াল দুই লাখ ২৭ হাজার

শোকাচ্ছন্ন ইউক্রেন, নিহত বেড়ে ৪১

আপডেট সময় : ০৯:০৬:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ জুলাই ২০২৪

➤ ইউক্রেনজুড়ে রাশিয়ার বিধ্বংসী হামলা
➤ মোদিকে এক হাত নিলেন জেলেনস্কি
➤ ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে পুতিনকে সরাসরি আহ্বান মোদির
➤ মোদির রাশিয়া সফর নিয়ে পশ্চিমাদের কোনো মন্তব্য নেই

 

ইউক্রেনে বিগত কয়েক মাসের মধ্যে গত সোমবার সবচেয়ে বিধ্বংসী হামলা চালিয়েছে রাশিয়ান বাহিনী। সবচেয়ে মারাত্মক এ হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪১ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ১৭০ জন। ভয়াবহ এ হামলায় বহু হতাহতের ঘটনায় একদিনের শোক পালন করছে ইউক্রেন। গতকাল রাশিয়া যেসব ভবনে হামলা চালিয়েছে তার মধ্যে কিয়েভের প্রধান শিশু হাসপাতালও আছে। গতকাল ভোরের দিকেও নিখোঁজদের উদ্ধারে ধ্বংসাবশেষে তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে। অন্যদিকে রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় বেলগোরদ অঞ্চলের গভর্নর বলেছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ইউক্রেনের হামলায় চারজন নিহত হয়েছে। সেইসঙ্গে রাশিয়া দাবি করেছে, তারা ইউক্রেনের হাসপাতালে হামলা চালায়নি। তবে ইউক্রেন বলছে, তারা রাশিয়ান ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের অবশিষ্ট পেয়েছে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের জন্য ওয়াশিংটনে যাওয়ার আগে পোল্যান্ডে যাত্রাবিরতি করেন। সেখানে এই হামলাকে নৃশংসতা বলে উল্লেখ করে জেলেনস্কি বলেন, ‘রুশ সন্ত্রাসীরা’ আবারও বিভিন্ন শহর কিয়েভ, দিনিপ্রো, ক্রিভি রিগ, স্লোভিয়ানস্ক, ক্রামতোর্স্কে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনে ব্যাপকভাবে আক্রমণ করেছে। তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে নিষ্ঠুর অপরাধী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে এক বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, হামলায় শিশুদের হাসপাতাল, কিয়েভের একটি মাতৃত্ব কেন্দ্র, শিশুদের নার্সারি এবং ব্যবসায়িক কেন্দ্র ও বাড়িসহ ১০০ টিরও বেশি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রুশ সন্ত্রাসীদের অবশ্যই এর জবাব দিতে হবে।
ইউক্রেনের শহরগুলোতে ৪০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে রাশিয়া। বিমান প্রতিরক্ষা ৩৮টির মধ্যে ৩০টি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে বলে ইউক্রেনের বিমানবাহিনী জানিয়েছে। তবে কিয়েভের সামরিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাজধানীতে তিন শিশুসহ ২৭ জন মারা গেছে এবং দুই ঘণ্টা পরের হামলায় ৮২ জন আহত হয়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় শহর ক্রিভি রিহ, ডিনিপ্রো এবং দুটি পূর্বাঞ্চলীয় শহরগুলোতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরকার বলেছে, ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে জরুরিভাবে তাদের আকাশ প্রতিরক্ষার আপগ্রেড প্রয়োজন।

 

মোদিকে এক হাত নিলেন জেলেনস্কি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কড়া সমালোচনা করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। গত সোমবার মোদি যখন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে দেখা করেন, সেইদিনই ইউক্রেনে রুশ হামলায় অন্তত ৪১ জন নিহত হয়েছে। এ নিয়ে মোদিকে এক হাত নেন জেলেনস্কি। মস্কোতে মোদির এই সফরকে শান্তি প্রচেষ্টার জন্য ব্যাপক হতাশা এবং বিধ্বংসীকর করে বলে উল্লেখ করেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট। রুশ হামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জেলেনস্কি বলেন, এটা অনেক হতাশা ও বিধ্বংসীকর যে এমন দিনে বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশের নেতা এবং বিশ্বের সবচেয়ে নিষ্ঠুর অপরাধীর সঙ্গে কোলাকুলি করছেন। কিয়েভে গতকালের রুশ হামলা নিয়ে গতকাল ভাষণেও কোনো মন্তব্য করেননি মোদি। তবে মোদি এদিন ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে যে সম্পর্ক তার প্রশংসা করেছেন।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পুরো মাত্রার অভিযানের ঘোষণা দেন পুতিন। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর এটি মোদির দেশটিতে প্রথম সফর। প্রকাশিত বিভিন্ন ছবিতে দেখা যাচ্ছে, দুই নেতা একে অপরকে জড়িয়ে ধরেছেন। দুই জনের মধ্যে চায়ের আড্ডা হচ্ছে এবং ইলেক্ট্রনিক গাড়িতে বসে ঘোড়ার প্রতিযোগিতা উপভোগ করছেন।

 

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে পুতিনকে সরাসরি আহ্বান মোদির
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে পুতিনকে সরাসরি আহ্বান জানিয়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। মস্কোতে সরকারি ভবনে মোদি পুতিনকে বলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে কোনো সমাধান পাওয়া যায় না। ভারত সবসময় জাতিসংঘের সনদসহ আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে সম্মান জানানোর আহ্বান জানায়। যুদ্ধক্ষেত্রে কোনো সমাধান নেই, আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। ডিনারের সময় মোদি পুতিনকে এসব বলেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতারণার মাধ্যমে ভারতীয়দের রাশিয়ান বাহিনীতে যে নেওয়া হয়েছে- সেই উদ্বেগের কথাও পুতিনকে জানিয়েছেন মোদি। সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, রাশিয়া এসব ভারতীয়কে ফিরিয়ে আনবে বলে নিশ্চিত করেছে। এনডিটিভি বলছে, অন্তত দুই ডজন ভারতীয়কে জোরপূর্বক ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে প্রতারণা করে এসব ভারতীয়কে নিয়ে যাওয়া হয়।
২২তম ইন্দো-রাশিয়া সামিটে যোগ দিতে দুই দিনের রাশিয়া সফরে গেছেন নরেন্দ্র মোদি। গত সোমবার তিনি মস্কো বিমানবন্দরে পৌঁছান। রাশিয়া সফরের পর মোদি যাবেন অস্ট্রিয়ায়। ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে নরেন্দ্র মোদির এই সফরকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণভাবে দেখছে পুরো বিশ্বের কূটনীতি। ভারতে তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর এটি মোদির প্রথম রাশিয়া সফর।

রাশিয়ায় মোদি, ক্ষুব্ধ যুক্তরাষ্ট্র?
মোদির রাশিয়া সফর নিয়ে এখন পর্যন্ত পশ্চিমা দেশগুলোর নেতারা সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে গত বৃহস্পতিবার ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি জানান, ইউক্রেন আক্রমণের বিষয়ে একজোট হয়ে রাশিয়াকে জবাবদিহি করানোর বিষয়ে তার দেশ ভারতের সঙ্গে লাগাতার যোগাযোগ রাখছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিষয়টা স্পষ্ট যে, মোদি ও পুতিনকে একসঙ্গে দেখে যুক্তরাজ্য বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেউই খুশি হবে না। কারণ ওই দুই দেশই মনে করে, ইউরোপে অস্থিরতার কারণ হলো ইউক্রেনে রুশ হামলা এবং এর জন্য দায়ী পুতিন। মোদির রাশিয়া সফর একাধিক পশ্চিমা দেশের কাছে অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে। এই দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আর কী অর্থ হতে পারে, সেই বিষয়ে সন্দিহান পশ্চিমা দেশগুলো। ভারতের পক্ষ থেকে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের নিন্দা না করার বিষয়ে বহুবার দুঃখ প্রকাশ করেছে বহু পশ্চিমা দেশ। ভারতের অনেকে বিশ্বাস করেন, রাশিয়ার প্রসঙ্গ এলে নিজেদের নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেলে পশ্চিমা মিডিয়া। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরা মনে করে কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য তাদের চেষ্টাকে জটিল করে তুলেছে ভারতের এমন অবস্থান।

লন্ডনের কিংস কলেজে সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের প্রফেসর ক্রিস্টোফ জাফরেলট জানিয়েছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির রাশিয়া সফরের ভূ-রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। ভারত রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে তুলতে খুবই আগ্রহী। এবং সেটা শুধু তাদের (ভারতের) সামরিক সরঞ্জামের ক্ষেত্রে রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীলতার কারণেই নয়, ভারত একটা বহু মেরু বিশ্বকে তুলে ধরতে চায় যেখানে তারা (ভারত) সব অংশীদারের সঙ্গে তার নিজের স্বার্থ প্রচার করার মতো অবস্থায় আছে।