নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর সবুজ প্রকৃতির মাঝে স্বচ্ছ জলে ফোটা পদ্মফুল ছড়াচ্ছে মুগ্ধতা। লাল-সবুজের সৌন্দর্য সহজেই নাড়া দিচ্ছে মনকে। স্বচ্ছ পানিতে ফোঁটা পদ্ম ফুল দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসে ভিড় করছে পাদ্মবিলে। স্থানীয়রা বলছেন, সরকারিভাবে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিলে এটা হতে পারে জেলার অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান।জেলা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ বিল ইতোমধ্যে পদ্মবিল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ( বর্ষাকালে এ বিলের অধিকাংশ জমিতেই প্রাকৃতিকভাবে পদ্মফুল জন্মায়।
এ সময় পুরো বিল পদ্মফুলে ভরে ওঠে। চারিদিকে শুধু পদ্ম আর পদ্ম। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গোলাপি পদ্মের সমাহার। এ যেন বিধাতার এক অপরূপ সৃষ্টি।
পদ্মবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহর থেকে আসে ইয়াসমিন , সিনতিয়া ও জামাল কালবেলাকে বলেন, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পদ্মবিল ঘুরতে আসি। এ বিলের সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করে। এখানে ঘুরতে আসলে মন ভাল হয়ে যায়।
কুমিল্লা থেকে পদ্মবিল ঘুরতে আসা জসিম উদ্দিন বলেন, বর্ষার সময় কসবা এলে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে পদ্মবিলে ঘুরতে আসি। এ বিলের সৌন্দর্য আমার খুব ভাল লাগে। এখানে এলে আমি প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যায়।
শুধু সৌন্দর্যই নয়, বর্ষা মৌসুমে কাজ না থাকায় এ বিলে জন্ম নেওয়া পদ্ম ফুল বিক্রি করে ও দর্শনার্থীদের নৌকায় ঘুরিয়ে ১৫টি দরিদ্র পরিবার জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন। শহরে এক একটি পদ্ম ফুল ১০-১৫ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া তারা পদ্মফুল বিক্রি করে উপার্জন করছেন।
অন্যদিকে, পদ্মবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা দর্শনার্থীদের নৌকায় ঘুরিয়ে এক এক জন দৈনিক ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা আয় করছেন। আর এ কাজ করছেন বিল পাড়ের অন্তত ১৫টি পরিবার। ছোট-বড় ২০টি নৌকা দিয়ে তারা পদ্মবিলের সৌন্দর্য ঘুরিয়ে দেখান। এতে তাদের পরিবারের স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে বলে জানান।
নোয়ামুড়া গ্রামের আলী আকবর কালবেলাকে জানান, মা-বাবাসহ ৬ সদস্যের পরিবার। বাবা শ্রমিক। তার আয় দিয়ে সংসার ঠিকমতো চলে না। তাই পদ্মবিলে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের নৌকায় ঘুরিয়ে দৈনিক ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা আয় করেছি। এতে সংসার খুব ভালভাবেই চলে যাচ্ছে। তার মতো আরও ৮-১০ জন আছে তারাও বর্ষা মৌসুমে দর্শনার্থীদের নৌকায় ঘুরান। এতে তাদের সংসারও ভালভাবে চলছে।
জামাল মিয়া,কাসেম আলী ও শরীপুল ইসলাম বলেন, বর্ষার সময় বিলের জমি পানিতে তলিয়ে থাকে। তাই ৫/৬ মাস কোনো কাজ থাকে এখানকার মানুষের। আর এ সময় দর্শনার্থীদের নৌকায় ঘুরিয়ে আমরা সংসার চালায়। সপ্তাহের প্রতি শুক্র-শনিবার দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি থাকে। এ দুইদিন দর্শনার্থীদের নৌকায় ঘুরিয়ে তাদের আয় একটি বেশি হয়। সপ্তাহের অন্য পাঁচদিনও কম বেশি আয় হয়। এখানে ছোট সাইজের নৌকা ৩-৪শ’ টাকায় ভাড়া হয় আর বড় সাইজের নৌকা ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায় ভাড়া হয়। বছরের ৩-৪ মাস তারা দর্শনার্থীদের নৌকায় ঘুরিয়ে আয় করে সংসার চালান।
পদ্মবিল পাড়ের বাসিন্দা শওকত খান বলেন, বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে মানুষ পদ্মবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। তবে এখানে আসার যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না। তাই অনেকেই গাড়ি নিয়ে আসতে পারেন না। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হলে এখানে অনেক পর্যটক আসবে। আমি জন্মের পর থেকেই এ বিলে পদ্ম ফোটা দেখছি। এটাকে অনেকে কালীবাড়ি বিল বলে, আমরা বলি গোসাইস্হল পদ্মবিল।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক দিলারা জামান খান কালবেলাকে বলেন, পদ্মফুল দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি এর অনেক গুণাগুন রয়েছে। পদ্মফুলের মধু চোখের অসুখের মহৌষধ। এর স্কন্ধ শ্বেতী ও হৃদ রোগের ওষুধ হিসেব ব্যবহার করা হয়। এই ফুল আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ শাহরিয়ার মুক্তার বলেন, গোসাইস্হল পদ্নবিল জুলাই-আগষ্ট থেকে নভেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত পদ্ম ফোটে। এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।
তিনি আরও জানান, ‘পর্যটন দপ্তরকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য গেষ্ট ও রেষ্ট হাউজ তৈরির পরিকল্পনা আছে। আর দর্শনার্থীরা যেন বিলে ময়লা অবর্জনা না ফেলে সেজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।


























