গ্রামের নাম ঔষুধি গ্রাম। ২২ বছর আগে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পেটভাতা গ্রামে ঔষুধি গাছের চাষ শুরু করেছিলেন কবিরাজ আব্দুল জব্বার। এক সময় সারা দেশের অনেক মানুষ এ গ্রামটিকে ঔষুধি গ্রাম হিসেবে জানতেন। কিন্তু তিন বছর আগে কবিরাজ আব্দুল জব্বারের মৃত্যু হলে গ্রামটির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। পরে তার দেখানো পথে ঔষুধি গাছগুলোর হাল ধরেন স্ত্রী সালেহা বেগম। পীরগাছা উপজেলার পেটভাতা গ্রামের প্রবেশপথের দুই পাশে সারি সারি তুলশি ও বাসক গাছ। একটু পা বাড়ালেই বাড়ির আনাচে কানাচে চোখে পড়বে বিভিন্ন আকৃতির লতাপাতার গাছ। কোনো বাড়ির আঙিনা বা উঠানে তেমন ফাঁকা জায়গা নেই, যেদিকে চোখ যায় শুধু গাছ আর গাছ। আর এগুলো লতাপাতা বা কোনো আগাছা নয়, সবই ঔষুধি গাছ। এখানেই শেষ না, গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে গেলে দেখা যাবে বিলুপ্তপ্রায় অশোক, চিরতা, কর্পূর, পুনর্বভা, তেজবল, নাগেশ্বর, অশ্বগন্ধা, জাতিপু®প,গোরখ চাকুলিয়া ও কূটরাজ গাছ। এছাড়াও জীবন রক্ষাকারী মহৌষধ হিসেবে পরিচিত তুলশি পাতা, বাসক পাতা, কলোমেঘ, ওলট কম্বল, হরতকি, বহেরা, অর্জুন, স্বর্ণলতা, তেজপাতা ও বস গাছের দেখা মেলে সবখানে। এভাবে গ্রামটি ঔষুধি গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এলাকায় কবিরাজ হিসেবে পরিচিত আব্দুল জব্বার ২০০২ সালে নিজের প্রয়োজনে স্বল্প পরিসরে বাড়ির আশেপাশে ঔষুধি গাছের চারা রোপণ ছিলেন। পরে বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে এলাকার দরিদ্র কৃষকদের বাড়ির আঙিনা বা উঠানের পরিত্যক্ত জমিতে ঔষুধি গাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। প্রথম দিকে এলাকার ১২ থেকে ১৫ জন কৃষককে নিজ উদ্যোগে চারা সংগ্রহ করে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে সেগুলো লাগিয়ে দেন আব্দুল জব্বার। সেই সঙ্গে পরিচর্যাও করেছিলেন তিনি। পরে এক বছরের মাথায় সেসব কৃষকদের বাড়িতে লাগানো ঔষুধি গাছ মাসে থেকে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়। বর্তমানে গ্রামটিতে প্রায় ৩শত কৃষক ঔষুধি গাছ লাগিয়ে প্রতি মাসে দুই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। সালেহা বেগম এলাকার কৃষকদের কাছে থেকে ঔষুধি গাছ ও পাতা ক্রয় করেন। পরে ক্রয় করা গাছ ও পাতা প্রক্রিয়াজাত করে একাধিক আয়ুর্বেদিক ঔষধ কো¤পানির কাছে বিক্রয় করেন তিনি। এ থেকে সালেহা বেগমের প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় হয়। এলাকাবাসী বলেন, বর্তমানে গ্রামটি চিকিৎসকবিহীন গ্রাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। গ্রামের লোকজন অসুস্থ হলে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে ঔষুধি গাছ ব্যবহার করেন। এছাড়া প্রতিটি বাড়ির লোকজনেরই বেশিরভাগ ঔষুধি গাছের গুণাগুণ জানা আছে। পেটভাতা গ্রামের আমেনা বেগম বলেন, পাঁচ শতক জমির উপর আমার বাড়ি। এখানে বসবাসের পাশাপাশি ঔষুধি গাছ লাগিয়েছি। প্রতি মাসে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত ঔষুধি গাছ ও পাতা বিক্রয় করা হয়। এটা আমাদের বাড়তি আয়। আয়নাল মিয়া বলেন, ঔষুধি গাছ লাগিয়ে প্রতি মাসে ভালোই আয় হয়। ঔষুধি গাছের জন্য আলাদা খরচ করতে হয় না। শুধু পরিচর্যা করলেই আয় করা সম্ভব। সালেহা বেগম বলেন, আমার স্বামীর ইচ্ছা ছিল গ্রামটিকে ঔষুধি গ্রাম বানানোর। তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তার চেষ্টা বিফলে যায়নি। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান মন্ডল বলেন, পেটভাতা গ্রামে বহু প্রজাতির ঔষুধি গাছ আছে। এসব গাছের মাধ্যমে ভুক্তভোগীরা উপকৃত হচ্ছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, এখানকার চাষিরা কম জমিতে ভেষজ চাষ করে অনেক বেশি লাভবান হচ্ছেন। তাদের উৎপাদন ও ব্যবসা সম্প্রসারণ হচ্ছে। কৃষি বিভাগ চাষিদের পাশে থেকে নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
শিরোনাম
পেটভাতা গ্রাম এখন ঔষুধি গ্রাম
-
রংপুর ব্যুরো - আপডেট সময় : ০৫:৪৮:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- ।
- 117
জনপ্রিয় সংবাদ

























