◉ট্রানজিট থাকলেও আগ্রহ নেই ভারতীয় ব্যবসায়ীদের
◉ চুক্তির যৌক্তিকতা খতিয়ে দেখার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের
স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝে অভ্যন্তরীণ নৌ-ট্রানজিট ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এর সর্বশেষ সংযোজন চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর। নৌ ট্রানজিটে মাসুলের অর্থ কম নির্ধারণ ছাড়াও ভারতে বাংলাদেশের নৌসহ সব যোগাযোগে কোনো ট্রানজিট না থাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। তবে মাসুল কম হলেও ভারতীয় ব্যবসায়ীদের আগ্রহ নেই নৌ-ট্রানজিট ব্যবহারে। আদতে বাংলাদশের লাভের অঙ্ক নিয়েই প্রশ্ন ফিরে আসে বারবার। বিশ্লেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ ভারত অন্য ট্রাজিট চুক্তিগুলোর মতো নৌ ট্রানজিট চুক্তির বিষয়টিও অস্পষ্ট। তাই বিষয়টি খতিয়ে দেখা ও জনস্বার্থ বিরোধী হলে তা বাতিলেরও আহ্বান তাদের।
বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৩টি রাজ্যে নিয়মিত পণ্য পরিবহনে বহুমুখী ট্রানজিট ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ২০১৫ সালে দুদেশের মধ্যে সর্বপ্রথম একটি চুক্তি হয়। ওই চুক্তিতে একই সঙ্গে নদী ও সড়কপথে বহুমুখী ট্রানজিটের মাধ্যমে ব্যবহার করে কলকাতা ও মুর্শিদাবাদকে অসম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের কথা বলা হয়। ভারতের নিজ ভূখণ্ড ব্যবহার করে কলকাতা থেকে ত্রিপুরা রাজ্যে পণ্য পরিবহনের জন্য ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের নৌপথ ও স্থলপথ ব্যবহার করে মাত্র ৪০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আগরতলায় পণ্য পৌঁছানো যায়। এ রুটে পণ্য পরিবহনের জন্য টনপ্রতি মাসুল নির্ধারিত হয় ১৯২ টাকা। এছাড়াও নিরাপত্তা ও নৌবন্দর শিপিং মাসুলসহ প্রতি টন পণ্যে বাংলাদেশের আয় ২৭৭ টাকা। পরবর্তীতে, ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালীন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে অভ্যন্তরীণ ও তৃতীয় দেশের পণ্য পরিবহনের জন্য দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্টের রূপরেখা বিষয়ে এসওপি সই হয়। পরীক্ষামূলক চারটি চালানের জন্য স্ক্যানিং, নিরাপত্তা, ডকুমেন্ট প্রসেসিং মাসুল ও বিবিধ প্রশাসনিক চার্জসহ টনপ্রতি সর্বমোট মাসুল নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫৪ টাকা। বলা যায় অনেকটা নামমাত্র মূল্যেই ট্রানজিট সুবিধা পাচ্ছে ভারত। বিপরীতে ভারতে বন্দর ব্যবহারের দাবি থাকলৌ এই বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের তেমন কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি ভারতের পক্ষ থেকে।
এদিকে নামামাত্র মূল্যে নৌ ট্রানজিট সুবিধা থাকলেও তা ব্যবহারে আগ্রহ নেই ভারতীয় ব্যবসায়ীদের। ২০১৬ সালের জুন থেকে ভারতকে বিদ্যমান নৌ-প্রটোকলের আওতায় প্রথমে কলকাতা-আশুগঞ্জ নৌপথ এবং তারপর আশুগঞ্জ-আখাউড়া সড়কপথ ব্যবহার করে ত্রিপুরার আগরতলায় পণ্য পরিবহনের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ। প্রথম চার বছরে চার বছরে কলকাতা-আশুগঞ্জ নৌ-রুটের ১৭টি চালান থেকে মাসুলবাবদ সরকার পেয়েছে ৩৬ লাখ টাকা। পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকায় কলকাতা-আশুগঞ্জ-আখাউড়া রুটে খরচ কম হওয়া সত্ত্বেও পণ্য পরিবহনে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। ট্রানজিট চালুর পর থেকে কিন্তু গত ৮ বছরে ২০-২৫টি চালান গেছে এই পথে। এই পথে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা এখন আর আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। কম মাসুলে ট্রানজিটের চুক্তি করায় সে সময় বিভিন্ন মহলের
সার্বিক বিষয়ে কথা বলা হলে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, ভারতের সেভেন সিস্টার্স যে অংশটা বলা হয়, এর নিকটতম বন্দর চট্টগ্রাম। তাদের চিকেন নেক দিয়ে ঘুরে যাওয়ার থেকে বাংলাদেশে হয়ে যাওয়া তাদের জন্য সহজ। এছাড়াও কম মশুল সুবিধা থাকলেও ভারতের ব্যবসায়ীরা এই নৌ-ট্রানজিট ব্যবহারে আগ্রহী আগ্রহী না। আমার মনে হয় বাংলাদেশের স্ট্রাটেজিতে ভুল ছিল। তারা যে আমাদের বন্দর ও সড়ক পথ ব্যবহার করছে, এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণসহ সব খরচ বিবেচনা করে মশুল নির্ধারণ করা উচিত। এখন যে মশুল নির্ধারণ করা আছে, সেটা কতটা যৌক্তিক দেখতে হবে। ন্যাযতার ভিত্তিতে এই মশুল নির্ধারণ করতে হবে। এরপর তারা নিতে চাচ্ছে কিনা সেটা দেখেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, চুক্তির সময় আমাদের কৌশলগত দুর্বলতা যেমন ছিলো, আমাদের বোঝাপড়াটাও ঠিকঠাক হয়নি। অর্থাৎ, ছাড় দিয়ে তাদের সুবিধাটা দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে ভূরাজনীতি, ন্যয্যতা ও সমতার জায়গায় আমাদের বোঝাপড়াটা দুর্বল ছিল। ভারতের সঙ্গে এই চুক্তিগুলো জনগণের সমানে আশা উচিত। ভবিষ্যতে যেনো দেশ নিরাপত্তা হুমকিতে না পরে। বিভিন্ন জায়গায় যে ট্রানজিট দিচ্ছি তখন চুলচেরা বিশ্লেষণ করা সম্ভব। সেগুলো আমাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি কিনা। যদি তেমন হয় চুক্তিগুলো বাতিল করতে হবে।


























