◉ অস্থিতিশীলতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হওয়ার চাপ
◉ ফ্যসিবাদবিরোধী ছাত্র শক্তির ব্যানারে ছাত্রদলসহ ১৯ সংগঠন
◉ শহীদ মিনারে সমাবেশ থেকে হুঁশিয়ারি সমন্বয়কদের
◉ বায়তুল মোকারমে শিবিরের বড় শোডাউন
◉ যশোরে কমিটি ঘোষণার পরদিন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়কের পদত্যাগ
সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্থীতিশীলতা ও ইস্কনকে কেন্দ্র করে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ফের সক্রিয় হয়েছে চব্বিশের ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ অভ্যুত্থানে ভূমিকা রাখা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরসহ অন্য রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলো। এরই মধ্যে গত সোমবার রাতে বাংলা মোটরে এক বৈঠকে পতিত ফ্যসিবাদী শক্তির ষড়যন্ত্র রুখে দিতে পুনরায় একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছে ১৯টি ছাত্র সংগঠনের নেতারা। সংগঠনগুলো আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন ঠেকাতে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চলমান অস্থিরতা নিরসনের লক্ষ্যে আগামী এক সপ্তাহব্যাপী ফ্যাসিবাদবিরোধী সব ছাত্রসংগঠনের সমন্বয়ে ‘ছাত্র সংহতি সপ্তাহ’ পালনের ঘোষণা দেয়। এদিকে চলমান পরিস্থিতিতে অস্থিতিশীলতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হওয়ার জন্য সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাড়াও উপস্থিত ছিলো ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদের (নুর), ছাত্র অধিকার পরিষদের (রেজা কিবরিয়া), ছাত্র জমিয়ত, স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদ, ইসলামী ছাত্র মজলিশ, ছাত্র ফেডারেশন, ইনকিলাব মঞ্চ, কওমী ছাত্র ফোরাম, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ, জাতীয় ছাত্র সমাজের (জাফর), বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিশ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় ছাত্র সমাজের (পার্থ) প্রতিনিধিরা।
এদিকে গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চট্টগ্রামে নিহত অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের জন্য শোকসভা এবং সম্প্রীতি সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এতে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ অংশ নিয়েছেন। এ সময় বাংলাদেশ নিয়ে ভারতকে নাক না গলাতে হুঁশিয়ারি দেন সমন্বয়করা। পাশাপাশি পররাষ্ট্রনীতি নিয়েও অন্তর্বর্তী সরকারেরও সমালোচনা করেন তারা। আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুর ইস্যুটি একটি সেনসিটিভ বিষয়। এটাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ফিরতে চায়। হয়ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় নাই কিন্তু সংখ্যালঘু কার্ড আজীবন খেলে যাবে। গত ৫ আগস্ট যখন স্বৈরাচার শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যায়। তখন তার শেষ ট্রাম্পকার্ড ছিল সংখ্যালঘুর ওপর আক্রমণ। সে দেখাতে চায় বাংলাদেশে একটা ইসলামী আন্দোলন হয়েছে। এ দেশের মুসলমানরা হিন্দুদের বিপদে ফেলবে, তাদের নিরাপত্তা বাংলাদেশে নাই। এই পথ সৃষ্টি করেছে ভারত। ৫ আগস্টের পর থেকে ভারতের মিডিয়া সংখ্যালঘুর বিষয়টি সামনে আনে যেভাবে লিখছে, সেই ধরনের কিছুই বাংলাদেশে হয়নি। আমি মনে করি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে আছে তাদের একটা দায়িত্ব ছিল। সরকারের অবস্থা দেখেছি, তারা ভারতকে ছাড় দিতে চাচ্ছিল।
বাংলাদেশের মাটিতে বসে দিল্লির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, স্বৈরাচার হাসিনার নির্দেশনায় ইসকন বাংলাদেশে বসে দিল্লির এজেন্ডা বাস্তবায়নে নেমেছে। তারা বাংলাদেশকে ভাগ করে পৃথক রাষ্ট্র গঠন করতে চায়। বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলিমদের মুখোমুখি দাঁড় করানোর পরিকল্পনা কোনোদিন বাস্তবায়ন হবে না। আমাদের দেশের সার্বভৌমত্বের দিকে হাত বাড়ালে সেই হাত ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় সংগঠক নুসরাত তাবাসসুম বলেন, পতিত সরকারের ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের মানুষ বাস্তবায়ন করতে দেবে না। নাগরিক তাদের দায়িত্ব পালন করছে, সরকার এবার আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করুন। গোয়েন্দা বিভাগ কেন কাজ করছে না বলেও প্রশ্ন তোলেন তিনি। একই সঙ্গে প্রশাসনের সবগুলো ইউনিটকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
হিন্দুত্ববাদী উগ্র সংগঠন ইসকন বাংলাদেশে পরিকল্পিতভাবে হত্যালীলা খেলছে বলে মন্তব্য করে সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, ভারতীয় আগ্রাসন বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম শহীদ আবরার ফাহাদকে ইসকনের সদস্যরাই হত্যা করেছিল। এবার সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চট্টগ্রামে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামকে হত্যা করেছে। সুতরাং এই ইসকনের কোনো অস্তিত্ব আর বাংলাদেশে থাকতে পারে না। ভারতকে গতকাল দেখেছি আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। ভারতীয় মিডিয়াগুলো অনেক আগে থেকেই প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছিল, তখন কেন প্রতিবাদ জানানো হয়নি?
এদিকে জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ উপলক্ষে জুলাই গণহত্যাকারী সন্ত্রাসীদের বিচারের দাবিতে বিভাগীয় শহরগুলোতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। এরই অংশ হিসেবে রাজধানীতে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, গণহত্যার বিচার ধীরগতিতে চলছে এবং অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নিয়ে অনেক গণহত্যাকারীকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা সুস্পষ্টভাবে শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানি। শহীদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে যে ক্ষমতার আসনে বসেছেন, সেই শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানি করলে আমরা আপনাদের বিরুদ্ধেও আন্দোলন করতে বাধ্য হবো।
সমাবেশে ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম অন্তর্র্বতী সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনারা যে ক্ষমতার চেয়ারে বসে আছেন, সেই চেয়ার শহীদদের পবিত্র রক্তে রঞ্জিত। সেই চেয়ারে বসে যদি ফ্যাসিবাদকে টিকিয়ে রাখার কোনও ষড়যন্ত্র বা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়, তবে এই ছাত্র-জনতা তা কোনোভাবেই মেনে নেবে না। শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানি করা হলে এই ছাত্রসমাজ উপযুক্ত এবং কঠোর জবাব দিতে কখনোই পিছপা হবে না।
যশোরে কমিটি ঘোষণার পরদিন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়কের পদত্যাগ : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোর জেলা কমিটি ঘোষণার একদিন পরই পদত্যাগ করেছেন যুগ্ম আহ্বায়ক-১ মাসুম বিল্লাহ। গতকাল বুধবার বিকালে প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘আমি শুরু থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে কাজ করে আসছি। মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোর জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটিতে এমন অনেককে রাখা হয়েছে, যারা সমাজের কাছে নৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ এবং তাদের গুণাবলীও প্রশ্নবিদ্ধ। এই কমিটির অধীনে কাজ করলে আমার নীতি-নৈতিকতার অধঃপতন হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছি। নৈতিকতার সঙ্গে আমি কখনও আপস করিনি। শুধুমাত্র নৈতিকতা ও মানবিক গুণাবলী অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর জেলার সদ্যঘেষিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পদ এবং কমিটি থেকে অব্যাহতি নিচ্ছি। তবে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক সব দাবির সঙ্গে আমি ছিলাম, আছি এবং থাকবো।’
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘এই কমিটিতে আমার গ্রুপের কেউ স্থান পায়নি। যাদের আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল হয়, ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত তারা বড় বড় পদ-পদবি পেয়েছেন। যশোরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুটি গ্রুপ ছিল। একটি রাশেদ খানের এবং আরেকটি আমার। রাশেদ খানের গ্রুপের অধিকাংশ সদস্য এই কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। কিন্তু আমার গ্রুপের কেউ কমিটিতে স্থান না পাওয়ায় স্বেচ্ছায় কমিটি থেকে পদত্যাগ করছি।’
৫ আগস্টের পর মাসুম বিল্লাহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোরের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গ্রুপিং তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। সেইসঙ্গে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত বলেও অভিযোগ করেন কেউ কেউ। এ বিষয়ে মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘আমি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না, যদি কারও কাছে কোনও প্রমাণ থাকে তাহলে দেখাক। যশোরে আগে থেকে আমার আর রাশেদের দুটি গ্রুপ। আর কোনও গ্রুপ তৈরি হয়নি।’


























