১২:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশের অতিরিক্ত চিকিৎসা ব্যয়ে বিদেশমুখী রোগীরা

◉ দেশে মানসম্মত সেবা পাচ্ছে না ৪৯ শতাংশ রোগী, পকেট থেকে খরচ হচ্ছে ৬৫ শতাংশ অর্থ
◉ অধিকাংশ হাসপাতালে নেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও পর্যাপ্ত সেবা
◉ অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নিঃস্ব হচ্ছে লাখো রোগী
◉ প্রতিবছর চিকিৎসা খাতে বিদেশে চলে যাচ্ছে ৪৮ হাজার কোটি টাকা

╰┈➤‘আমাদের দেশে জটিল রোগীর চিকিৎসা প্রদানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অভাব আর রোগীকে যথাযথ সময় না দেওয়ায় বিদেশমুখী প্রবণতা বাড়ছে। প্রয়োজনে টাস্কফোর্স গঠন করে রোগ নির্ণয় ও সুচিকিৎসা দিয়ে তা রোধ করা সম্ভব’-ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী, মহাসচিব, বিএমএ

‘চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে দেশের প্রতিটি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেলে ঢাকা বা বিদেশমুখী রোগীদের সংখ্যা কমবে’
অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দীন ফারুক, সভাপতি, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি

দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে নানা কারণে চিকিৎসাসেবার প্রতি অনাস্থা থেকে উন্নত চিকিৎসাসেবা নিতে প্রতি বছর বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন লাখ লাখ বাংলাদেশি রোগী। দেশের চিকিৎসাসেবার অপ্রতুল অগ্রগতি, রোগীকে পর্যাপ্ত সময় না দেওয়া ও সময়ের সাথে বিশ্ব মানের আধুনিকায়ন চিকিৎসাসেবা না দিতে পারায় রোগীরা বিদেশমুখী হচ্ছেন। দেশের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা পেতে রোগীরা নিজেদের পকেট থেকে অর্থ খরচ করছেন গড়ে ৬৫ শতাংশ। মানসম্মত সেবা পাচ্ছেন ৪৯ শতাংশ রোগী। অধিকাংশ হাসপাতালেই নেই জটিল রোগীর রোগ নির্ণয়ের পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সেবার মান। এক দশক আগেও কেবল সমাজের বিত্তশালীরা উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতেন। তবে এখন মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্তদের অনেকেই একই পথের যাত্রী হয়েছেন। বিশেষ করে নিউরো, হার্টের ব্লক, ক্যানসার, লিভার ও কিডনী প্রতিস্থাপসহ অন্যান্য জটিল রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসাসেবা নিতে রোগীরা ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে ছুটে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতার কারণে দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী বিশ্বের অন্যান্য দেশের সেবা নিয়ে থাকে। এতে করে প্রতিবছর চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ৪৮ হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। তারা বলেন, মূলত তিন কারণে বিদেশমুখী হচ্ছেন দেশের রোগীরা। আমাদের দেশে জটিল রোগীর চিকিৎসা প্রদানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অভাব আর রোগীকে যথাযথ সময় না দেওয়ায় বিদেশমুখীর প্রবণতা বাড়ছে। প্রয়োজনে টাস্কফোর্স গঠন করে রোগ নির্ণয় ও সুচিকিৎসা দিয়ে তা রোধ করা সম্ভভ। রোগীদের বিদেশমুখীতা কমিয়ে আনতে হলে রোগ নির্ণয় ও সেবা নিশ্চিতে স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে প্রতিটি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেলে ঢাকা বা বিদেশমুখী রোগীদের সংখ্যা কমবে। গতকাল শনিবার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশিদের পছন্দের শীর্ষে ভারত। বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা সেবা পেতে ভারতীয় দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করেন প্রায় ২৫ লাখ মানুষ। গত জুন মাসে ভাতর থেকে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরা মতিউর রহমান জানান, জন্মের কয়েক বছর পর তার ৯ বছরের শিশু মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ায় দেশের সরকারি-বেসরকারি নামি-দামি বিভিন্ন হাসপাতালে যান। চিকিৎসকের পরামর্শে একাধিক এমআরআই, সিটি স্ক্যানসহ অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। কিন্তু রোগ নির্ণয় করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। একের পর এক ওষুধ কিনেন। এতে ব্যয় হয় ৫-৬ লাখ টাকা। কিন্তু সুস্থ হয়নি। পরে প্রতিবেশী এক ব্যক্তির পরামর্শে ভারতের চেন্নাইয়ে যান। সেখানে মাত্র ৪/৫ দিন থেকে ডাক্তার দেখিয়ে সব মিলিয়ে ব্যয় হয় ২ লাখ টাকা। এখন তার সন্তান কিছুটা সুস্থ ও স্বাভাবিক রয়েছে। সেই থেকেই দেশের স্বাস্থসেবায় তার অনাস্থা তৈরি হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে নিবন্ধিত মোট বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ১৩ হাজার ৬১১টি। লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করেছে ২২ হাজার ৪২৭টি। নতুন হাসপাতাল তৈরির আবেদনের সংখ্যা ১৮ হাজার ৬২৫টি। এর বাইরেও রাজধানীসহ সারাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে কয়েক হাজার হাসপাতাল ও ক্লিনিক- যার সংখ্যা হতে পারে অর্ধ লক্ষাধিক। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, বেসরকারি ক্লিনিক হাসপাতালের অরাজক অবস্থার জন্য কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার ঘাটতি আর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারা বলেন, হাসপাতাল-ক্লিনিকের ভুল রিপোর্টসহ দৈনন্দিন কার্যক্রম মনিটরিংয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে এগুলোর লাগাম টানা এখন সময়ে দাবি।
জানা যায়, দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে চোখের রেটিনা, নিউরো, হার্টের ব্লক, ক্যানসার, লিভার ও কিডনি রোগীর সংখ্যা। পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেন্টার না থাকায় সেবাপ্রত্যাশীরা সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ঘুরে যেমন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন, অপরদিকে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে যথাযথ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন আক্রান্ত অনেক রোগী। দেশে সরকারি-বেসরকারিভাবে ৩০টি সেবা প্রতিষ্ঠান চালু থাকলেও দৈনন্দিন চাহিদার তুলনায় অনেকটাই অপ্রতুল। তবে দেশে চিকিৎসার সুযোগ বাড়লেও খরচ অনেক বেশি।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত একজন রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা পকেট থেকে খরচ করতে হয়। এ খরচ সর্বনিম্ন ৮১ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়। ক্যান্সারের প্রথম স্তরে গড়ে চিকিৎসা খরচ ৩ লাখ ৩১ হাজার টাকার কিছু বেশি। দ্বিতীয় স্তরে গড় খরচ প্রায় ৭ লাখ টাকা। ফলে, ক্যান্সারের চিকিৎসার খরচ যোগাতে নিঃস্ব হচ্ছে অনেক মানুষ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে ১৬ থেকে ১৭ লাখ মানুষ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারে ভুগছেন। প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ মানুষ নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। ২০৩০ সালের মধ্যে এ সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা আছে। ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ৭৫ শতাংশের বেশি বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, দেশে সরকারিভাবে ২২টি সেন্টার এবং বেসরকারিভাবে ১০টি সেন্টার ক্যান্সারের চিকিৎসা দিচ্ছে। তবে রোগীর চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা জানান, একজন মানুষের শরীরে অনেক ধরনের ক্যান্সার হতে পারে। এর মধ্যে আছে সলিড ক্যানসার, যেমন- ব্রেইন, লাং, ব্রেস্ট, পাকস্থলি, কোলন, লিভার, কিডনি, জরায়ু, ওভারি, প্রস্টেট ক্যানসার ইত্যাদি। ব্লাড ক্যান্সারের মধ্যে লিউকোমিয়া, লিম্ফোমা, মাল্টিপল মায়েলোমা ইত্যাদি। ক্যানসারের ব্যথা উপশমের সবচেয়ে ভালো ওষুধ মরফিন। দেশে ব্যথানাশক এ ওষুধ ক্রমান্বয়ে দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে। লাভ কম হওয়ায় ওষুধটি উৎপাদনে কোম্পানিগুলোর আগ্রহ কম। তারা বলছেন, দেশে ব্যথানাশক এ ওষুধ বছরে দরকার কমপক্ষে ৬০০ কিলোগ্রাম। পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২৩ কিলোগ্রাম, যা প্রয়োজনের মাত্র ৪ শতাংশ। ফলে, মরফিনের অভাবেই বিপুল সংখ্যক রোগী যন্ত্রণা নিয়ে মারা যাচ্ছেন।
বিএমএ মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, মূলত কয়েকটি কারণেই রোগীরা চিকিৎসা সেবা পেতে বিদেশমুখী হচ্ছেন। প্রথমত, যারা অর্থবিত্তে প্রতিষ্ঠিত, তারা যাবেই। দ্বিতীয়ত, দেশের সীমান্ত এলাকার একজন রোগী পরিচর্যাকারীসহ ঢাকায় এসে চিকিৎসকের কাছে যে অর্থ ব্যয় করে, তার চেয়ে ভিসা নিয়ে সীমান্তের ওপারে গিয়ে কোনো এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করছে। আমাদের দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থায় বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এতই ব্যস্ত থাকেন যে, রোগীকে বেশি সময় দিতে পারেন না। এর মূলে মাত্রাতিরিক্ত রোগী দেখা, প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। বিদেশে কিন্তু সেটি নেই, তারা সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫টি রোগী দেখেন, রোগীকে সময় দেন। মেডিসিন ও গাইনী বিভাগে চিকিৎসক থাকলেও ক্যানসার, লিভার, কিডনী, নিওরোলজির সার্জারি বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল রোগের রোগ নির্ণয় ও সুচিকিৎসা প্রদানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। বিদেশমুখী কমাতে হলে এবং স্বাস্থ্যখাতে দেশের রাজস্ব আহরণে প্রয়োজনে টাস্কফোর্স গঠন করে রোগ নির্ণয় ও সুচিকিৎসা দিয়ে তা রোধ করা সম্ভভ। বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দীন ফারুক বলেন, চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে প্রতিটি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেলে ঢাকা বা বিদেশমুখী রোগীদের সংখ্যা কমবে। এদিকে সম্প্রতি ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘স্বাস্থ্য খাতে বিদেশমুখিতা কমাতে দেশীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি’ বিষয়ক এক সেমিনারে বক্তারা বলেন, বিদেশে স্বাস্থ্যসেবা নিতে প্রতিবছর ব্যয় হচ্ছে ৪০০ কোটি ডলারের (বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৪৮ হাজার কোটি টাকা) বেশি। এ ছাড়া দেশে ৪৯ শতাংশ মানুষ মানসম্মত সেবা পায় না। ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী বলেন, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতার কারণে দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী বিশ্বের অন্যান্য দেশের সেবা নিয়ে থাকে। এ খাতে প্রতিবছর বিদেশে চলে যাচ্ছে ৪৮ হাজার কোটি টাকা।
প্রধান গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো থেকে বিরত থাকা ও রোগীকে পর্যাপ্ত সময় দিয়ে রোগের ধরণ জেনে সুচিকিৎসা সেবা প্রদান নিশ্চিত করা হলে বিদেশমুখীতা কমে আসবে।
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দীন ফারুক বলেন, ক্যান্সার চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এ খাতে সরকারকে ভর্তুকি দিয়ে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, দেশের হাসপাতালগুলোতে মান ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেলে রাজধানী ঢাকা ও বিদেশমুখী রোগীদের সংখ্যা কমবে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যেই বিদেশমুখীতা কমাতে স্বাস্থ্যসেবাকে জনমুখী, সহজলভ্য ও সর্বজনীন করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারে জন্য গঠিত ‘স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন’-এর সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান, স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সভাপতি এ কে আজাদ খানসহ স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সদস্যবৃন্দ। সভায় উপস্থিত সকল দপ্তর/সংস্থার প্রধানরা স্বাস্থ্যখাতের চ্যালেঞ্জ ও তা দূরীকরণের উপায় কমিশনের নিকট তুলে ধরেন। সংস্কার কার্যক্রমের রূপরেখা নিয়েও সভায় আলোচনা করা হয়। শিগগিরই সবার মতামত, সুপারিশ ও পরামর্শসমূহ গ্রহণ করে সংস্কার কার্যক্রমের রূপরেখা নিয়ে কার্যক্রম গৃহীত হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

সব রেকর্ড ভেঙে স্বর্ণের দামে নতুন ইতিহাস, ভরি ছাড়াল দুই লাখ ২৭ হাজার

দেশের অতিরিক্ত চিকিৎসা ব্যয়ে বিদেশমুখী রোগীরা

আপডেট সময় : ০৭:৩৫:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪

◉ দেশে মানসম্মত সেবা পাচ্ছে না ৪৯ শতাংশ রোগী, পকেট থেকে খরচ হচ্ছে ৬৫ শতাংশ অর্থ
◉ অধিকাংশ হাসপাতালে নেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও পর্যাপ্ত সেবা
◉ অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নিঃস্ব হচ্ছে লাখো রোগী
◉ প্রতিবছর চিকিৎসা খাতে বিদেশে চলে যাচ্ছে ৪৮ হাজার কোটি টাকা

╰┈➤‘আমাদের দেশে জটিল রোগীর চিকিৎসা প্রদানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অভাব আর রোগীকে যথাযথ সময় না দেওয়ায় বিদেশমুখী প্রবণতা বাড়ছে। প্রয়োজনে টাস্কফোর্স গঠন করে রোগ নির্ণয় ও সুচিকিৎসা দিয়ে তা রোধ করা সম্ভব’-ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী, মহাসচিব, বিএমএ

‘চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে দেশের প্রতিটি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেলে ঢাকা বা বিদেশমুখী রোগীদের সংখ্যা কমবে’
অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দীন ফারুক, সভাপতি, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি

দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে নানা কারণে চিকিৎসাসেবার প্রতি অনাস্থা থেকে উন্নত চিকিৎসাসেবা নিতে প্রতি বছর বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন লাখ লাখ বাংলাদেশি রোগী। দেশের চিকিৎসাসেবার অপ্রতুল অগ্রগতি, রোগীকে পর্যাপ্ত সময় না দেওয়া ও সময়ের সাথে বিশ্ব মানের আধুনিকায়ন চিকিৎসাসেবা না দিতে পারায় রোগীরা বিদেশমুখী হচ্ছেন। দেশের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা পেতে রোগীরা নিজেদের পকেট থেকে অর্থ খরচ করছেন গড়ে ৬৫ শতাংশ। মানসম্মত সেবা পাচ্ছেন ৪৯ শতাংশ রোগী। অধিকাংশ হাসপাতালেই নেই জটিল রোগীর রোগ নির্ণয়ের পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সেবার মান। এক দশক আগেও কেবল সমাজের বিত্তশালীরা উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতেন। তবে এখন মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্তদের অনেকেই একই পথের যাত্রী হয়েছেন। বিশেষ করে নিউরো, হার্টের ব্লক, ক্যানসার, লিভার ও কিডনী প্রতিস্থাপসহ অন্যান্য জটিল রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসাসেবা নিতে রোগীরা ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে ছুটে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতার কারণে দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী বিশ্বের অন্যান্য দেশের সেবা নিয়ে থাকে। এতে করে প্রতিবছর চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ৪৮ হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। তারা বলেন, মূলত তিন কারণে বিদেশমুখী হচ্ছেন দেশের রোগীরা। আমাদের দেশে জটিল রোগীর চিকিৎসা প্রদানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অভাব আর রোগীকে যথাযথ সময় না দেওয়ায় বিদেশমুখীর প্রবণতা বাড়ছে। প্রয়োজনে টাস্কফোর্স গঠন করে রোগ নির্ণয় ও সুচিকিৎসা দিয়ে তা রোধ করা সম্ভভ। রোগীদের বিদেশমুখীতা কমিয়ে আনতে হলে রোগ নির্ণয় ও সেবা নিশ্চিতে স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে প্রতিটি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেলে ঢাকা বা বিদেশমুখী রোগীদের সংখ্যা কমবে। গতকাল শনিবার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশিদের পছন্দের শীর্ষে ভারত। বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা সেবা পেতে ভারতীয় দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করেন প্রায় ২৫ লাখ মানুষ। গত জুন মাসে ভাতর থেকে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরা মতিউর রহমান জানান, জন্মের কয়েক বছর পর তার ৯ বছরের শিশু মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ায় দেশের সরকারি-বেসরকারি নামি-দামি বিভিন্ন হাসপাতালে যান। চিকিৎসকের পরামর্শে একাধিক এমআরআই, সিটি স্ক্যানসহ অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। কিন্তু রোগ নির্ণয় করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। একের পর এক ওষুধ কিনেন। এতে ব্যয় হয় ৫-৬ লাখ টাকা। কিন্তু সুস্থ হয়নি। পরে প্রতিবেশী এক ব্যক্তির পরামর্শে ভারতের চেন্নাইয়ে যান। সেখানে মাত্র ৪/৫ দিন থেকে ডাক্তার দেখিয়ে সব মিলিয়ে ব্যয় হয় ২ লাখ টাকা। এখন তার সন্তান কিছুটা সুস্থ ও স্বাভাবিক রয়েছে। সেই থেকেই দেশের স্বাস্থসেবায় তার অনাস্থা তৈরি হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে নিবন্ধিত মোট বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ১৩ হাজার ৬১১টি। লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করেছে ২২ হাজার ৪২৭টি। নতুন হাসপাতাল তৈরির আবেদনের সংখ্যা ১৮ হাজার ৬২৫টি। এর বাইরেও রাজধানীসহ সারাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে কয়েক হাজার হাসপাতাল ও ক্লিনিক- যার সংখ্যা হতে পারে অর্ধ লক্ষাধিক। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, বেসরকারি ক্লিনিক হাসপাতালের অরাজক অবস্থার জন্য কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার ঘাটতি আর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারা বলেন, হাসপাতাল-ক্লিনিকের ভুল রিপোর্টসহ দৈনন্দিন কার্যক্রম মনিটরিংয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে এগুলোর লাগাম টানা এখন সময়ে দাবি।
জানা যায়, দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে চোখের রেটিনা, নিউরো, হার্টের ব্লক, ক্যানসার, লিভার ও কিডনি রোগীর সংখ্যা। পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেন্টার না থাকায় সেবাপ্রত্যাশীরা সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ঘুরে যেমন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন, অপরদিকে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে যথাযথ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন আক্রান্ত অনেক রোগী। দেশে সরকারি-বেসরকারিভাবে ৩০টি সেবা প্রতিষ্ঠান চালু থাকলেও দৈনন্দিন চাহিদার তুলনায় অনেকটাই অপ্রতুল। তবে দেশে চিকিৎসার সুযোগ বাড়লেও খরচ অনেক বেশি।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত একজন রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা পকেট থেকে খরচ করতে হয়। এ খরচ সর্বনিম্ন ৮১ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়। ক্যান্সারের প্রথম স্তরে গড়ে চিকিৎসা খরচ ৩ লাখ ৩১ হাজার টাকার কিছু বেশি। দ্বিতীয় স্তরে গড় খরচ প্রায় ৭ লাখ টাকা। ফলে, ক্যান্সারের চিকিৎসার খরচ যোগাতে নিঃস্ব হচ্ছে অনেক মানুষ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে ১৬ থেকে ১৭ লাখ মানুষ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারে ভুগছেন। প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ মানুষ নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। ২০৩০ সালের মধ্যে এ সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা আছে। ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ৭৫ শতাংশের বেশি বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, দেশে সরকারিভাবে ২২টি সেন্টার এবং বেসরকারিভাবে ১০টি সেন্টার ক্যান্সারের চিকিৎসা দিচ্ছে। তবে রোগীর চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা জানান, একজন মানুষের শরীরে অনেক ধরনের ক্যান্সার হতে পারে। এর মধ্যে আছে সলিড ক্যানসার, যেমন- ব্রেইন, লাং, ব্রেস্ট, পাকস্থলি, কোলন, লিভার, কিডনি, জরায়ু, ওভারি, প্রস্টেট ক্যানসার ইত্যাদি। ব্লাড ক্যান্সারের মধ্যে লিউকোমিয়া, লিম্ফোমা, মাল্টিপল মায়েলোমা ইত্যাদি। ক্যানসারের ব্যথা উপশমের সবচেয়ে ভালো ওষুধ মরফিন। দেশে ব্যথানাশক এ ওষুধ ক্রমান্বয়ে দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে। লাভ কম হওয়ায় ওষুধটি উৎপাদনে কোম্পানিগুলোর আগ্রহ কম। তারা বলছেন, দেশে ব্যথানাশক এ ওষুধ বছরে দরকার কমপক্ষে ৬০০ কিলোগ্রাম। পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২৩ কিলোগ্রাম, যা প্রয়োজনের মাত্র ৪ শতাংশ। ফলে, মরফিনের অভাবেই বিপুল সংখ্যক রোগী যন্ত্রণা নিয়ে মারা যাচ্ছেন।
বিএমএ মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, মূলত কয়েকটি কারণেই রোগীরা চিকিৎসা সেবা পেতে বিদেশমুখী হচ্ছেন। প্রথমত, যারা অর্থবিত্তে প্রতিষ্ঠিত, তারা যাবেই। দ্বিতীয়ত, দেশের সীমান্ত এলাকার একজন রোগী পরিচর্যাকারীসহ ঢাকায় এসে চিকিৎসকের কাছে যে অর্থ ব্যয় করে, তার চেয়ে ভিসা নিয়ে সীমান্তের ওপারে গিয়ে কোনো এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করছে। আমাদের দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থায় বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এতই ব্যস্ত থাকেন যে, রোগীকে বেশি সময় দিতে পারেন না। এর মূলে মাত্রাতিরিক্ত রোগী দেখা, প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। বিদেশে কিন্তু সেটি নেই, তারা সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫টি রোগী দেখেন, রোগীকে সময় দেন। মেডিসিন ও গাইনী বিভাগে চিকিৎসক থাকলেও ক্যানসার, লিভার, কিডনী, নিওরোলজির সার্জারি বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল রোগের রোগ নির্ণয় ও সুচিকিৎসা প্রদানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। বিদেশমুখী কমাতে হলে এবং স্বাস্থ্যখাতে দেশের রাজস্ব আহরণে প্রয়োজনে টাস্কফোর্স গঠন করে রোগ নির্ণয় ও সুচিকিৎসা দিয়ে তা রোধ করা সম্ভভ। বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দীন ফারুক বলেন, চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে প্রতিটি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেলে ঢাকা বা বিদেশমুখী রোগীদের সংখ্যা কমবে। এদিকে সম্প্রতি ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘স্বাস্থ্য খাতে বিদেশমুখিতা কমাতে দেশীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি’ বিষয়ক এক সেমিনারে বক্তারা বলেন, বিদেশে স্বাস্থ্যসেবা নিতে প্রতিবছর ব্যয় হচ্ছে ৪০০ কোটি ডলারের (বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৪৮ হাজার কোটি টাকা) বেশি। এ ছাড়া দেশে ৪৯ শতাংশ মানুষ মানসম্মত সেবা পায় না। ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী বলেন, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতার কারণে দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী বিশ্বের অন্যান্য দেশের সেবা নিয়ে থাকে। এ খাতে প্রতিবছর বিদেশে চলে যাচ্ছে ৪৮ হাজার কোটি টাকা।
প্রধান গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো থেকে বিরত থাকা ও রোগীকে পর্যাপ্ত সময় দিয়ে রোগের ধরণ জেনে সুচিকিৎসা সেবা প্রদান নিশ্চিত করা হলে বিদেশমুখীতা কমে আসবে।
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দীন ফারুক বলেন, ক্যান্সার চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এ খাতে সরকারকে ভর্তুকি দিয়ে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, দেশের হাসপাতালগুলোতে মান ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেলে রাজধানী ঢাকা ও বিদেশমুখী রোগীদের সংখ্যা কমবে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যেই বিদেশমুখীতা কমাতে স্বাস্থ্যসেবাকে জনমুখী, সহজলভ্য ও সর্বজনীন করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারে জন্য গঠিত ‘স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন’-এর সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান, স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সভাপতি এ কে আজাদ খানসহ স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সদস্যবৃন্দ। সভায় উপস্থিত সকল দপ্তর/সংস্থার প্রধানরা স্বাস্থ্যখাতের চ্যালেঞ্জ ও তা দূরীকরণের উপায় কমিশনের নিকট তুলে ধরেন। সংস্কার কার্যক্রমের রূপরেখা নিয়েও সভায় আলোচনা করা হয়। শিগগিরই সবার মতামত, সুপারিশ ও পরামর্শসমূহ গ্রহণ করে সংস্কার কার্যক্রমের রূপরেখা নিয়ে কার্যক্রম গৃহীত হবে।