০৬:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘অধিকার নিশ্চিতকরণে সংস্কার নাকি ওয়েবসাইট রাজনীতি ’

সম্প্রতি অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস সংস্কার নিয়ে রাজনীতিক দলগুলোর বক্তব্য ওয়েবসাইটে তুলে ধরার কথা তিনি বলেন — ‘কোন বিষয়ের প্রতি তার সম্মতি আছে, কোন বিষয়ের প্রতি মানুষের সম্মতি নাই, এটা কোনো গোপন জিনিস না!
এটা রাজনীতিক দলের একটা বক্তব্য, আপনি বলেন যে আমি কোনোটার দিকে সম্মতি নাই লিখে দেন ;আমরা ওটা ওয়েবসাইটে দিয়ে দেবো ’

রাজনীতির যে পাওয়ার বাটন জনগণ ড.ইউনূসের হাতে তুলে দিয়েছেন, তা বাংলাদেশের ক্রান্তিলগ্নে সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে যেন পরিক্রাণ পায় তাই এই দেশের মানুষের আশা-আখাঙ্খা।

৩৬ শে জুলাই পরবর্তী বাংলার রাজনীতিতে যে পরিবর্তন সাধিত হয়েছে সেখানে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের কোনো স্হান নেই বললেই সবশেষ হয়ে যাবে না। তার জন্য প্রয়োজন সঠিক পদ্ধতি যার মাধ্যমে দীর্ঘদিনের এই অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করা যায়। সেই পথে এগিয়ে যাচ্ছে ড.ইউনূসের ইন্টারিম গভারমেন্ট। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে এই সরকারের উপর জনসাধারণের আশা-আখাঙ্খা বেড়েছে পাল্লা দিয়ে এখনো এদেশের মানুষ আশাবাদী। সেই আশা-আকাঙ্খা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ যাই হোক দেশের মানুষ চায় ‘সংস্কার’।

সম্প্রতি ড. ইউনূস যে শর্ত ভিত্তিক রাজনীতি দলগুলোর উপর আরোপ করে দিয়েছেন তা কেবল সুদূরপ্রসারী বিপ্লবী চেতনাকেই নিশ্চিত করবে না বরং সময় উপযোগী অধিকারের লড়াইকে আরো বহুধাপ এগিয়ে নিবে বলে বিশ্বাস করি।

সংস্কার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন —‘আপনারা আপনাদের বক্তব্য দিন আমরা ওয়েবসাইটে দিয়ে দেবো ’ সত্যিকার অর্থে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে গণমানুষের অধিকারের স্বাদেশিক আলামত পাওয়া যায়। কারা সংস্কার চায় আর কারা সংস্কার চায় না! এটি জানার কিংবা অবগত হওয়ার অধিকার বাংলাদেশের জনগণের আছে। ৩৬ শে জুলাই অধিকার নিশ্চিতকরণের অধিকার দেয়। তাই যদি না হয় তাহলে কেন এতো এতো ছাত্রজনতা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে দিলো? প্রশ্নটি ছাত্রজনতার কাছে স্পষ্ট করা জরুরি। এটি এজন্যই জরুরি যে — যে আশা নিয়ে ছাত্রজনতা বুক উঁচিয়ে লড়াই করেছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তার শাস্তি নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন নিরপেক্ষ সরকার। দলীয় সরকারের অধীনে বিচার নিশ্চিত করার মানে আরেক রাজনীতিক ভবিষ্যত সংঘাতের বীজ বপন করা। যে বীজ একদিন বটবৃক্ষে পরিণত হবে রাজনীতির ইতিহাস তাই বলে।
যার ফলে তৈরী হতে পারে আরেক প্রতিহিংসার আতুরঘর।

বর্তমানে রাজনীতিক দলগুলো অবস্থা বিবেচনা করলে এর চেয়ে উত্তর সিদ্ধান্ত আর হতেই পারে না।
হয় আপনি ৩৬ শে জুলাইয়ের অন্তর্নিহিত বেদনার মমার্থ জাতির সামনে স্পষ্ট করবেন সংস্কারের পক্ষ নিয়ে আর না হয় আপনি নিজের অবস্থান জাতির সামনে উপযুক্ত যুক্তির মাধ্যমে তুলে ধরবেন। ড.ইউনূসের এমন প্রস্তাব এতো গভীর অর্থবহ যে —সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল হলে আপনি জাতির সামনে দল হিসেবে কিংবা নেতা হিসেবে বিশ্বাসঘাতক বলে বিবেচিত হবেন অবলীলায়।

এমন এক পরিস্থিতির সম্মুখিন বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলো যেখান থেকে বের হতে হলে — ৩৬ শে’র পক্ষে অথবা বিপক্ষে, হ্যাঁ অথবা না, সাগর অথবা মরুভূমির রাজনীতিকে বেঁচে নিতেই হবে। তা না হলে সামনের দিকে শুধুই অন্ধকারের অতল তলে তলিয়ে যেতেই হবে প্রকৃতির নিয়মে।

যদি এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা যায় বাংলাদেশের রাজনীতিক দলগুলোর মাঝে, তাহলে এটি বাংলাদেশের রাজনীতির ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে। অধিকার নিশ্চিতকরণে সংস্কার নাকি ওয়েবসাইট রাজনীতি নির্ভর করছে দলগুলোর উপরে, তারা কী সংস্কারের পক্ষ নিয়ে একটি সুন্দর রাজনীতিক পরিবেশ নিশ্চিত করবে, নাকি তারা ওয়েবসাইটের রাজনীতি করে ইতিহাসকে ঠেলে দিবে আরেক দিগন্ত উন্মোচনের পথে! যদি তাই হয় তাহলে সংস্কারের পক্ষে কিংবা বিপক্ষের দলগুলোকে ছাত্রজনতা ক্ষমা করবে কী? এবার সময় এসেছে দলগুলোর সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার।

ইতাঙ্গীর খন্দকার
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

জনপ্রিয় সংবাদ

‘অধিকার নিশ্চিতকরণে সংস্কার নাকি ওয়েবসাইট রাজনীতি ’

আপডেট সময় : ০৮:৫৪:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সম্প্রতি অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস সংস্কার নিয়ে রাজনীতিক দলগুলোর বক্তব্য ওয়েবসাইটে তুলে ধরার কথা তিনি বলেন — ‘কোন বিষয়ের প্রতি তার সম্মতি আছে, কোন বিষয়ের প্রতি মানুষের সম্মতি নাই, এটা কোনো গোপন জিনিস না!
এটা রাজনীতিক দলের একটা বক্তব্য, আপনি বলেন যে আমি কোনোটার দিকে সম্মতি নাই লিখে দেন ;আমরা ওটা ওয়েবসাইটে দিয়ে দেবো ’

রাজনীতির যে পাওয়ার বাটন জনগণ ড.ইউনূসের হাতে তুলে দিয়েছেন, তা বাংলাদেশের ক্রান্তিলগ্নে সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে যেন পরিক্রাণ পায় তাই এই দেশের মানুষের আশা-আখাঙ্খা।

৩৬ শে জুলাই পরবর্তী বাংলার রাজনীতিতে যে পরিবর্তন সাধিত হয়েছে সেখানে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের কোনো স্হান নেই বললেই সবশেষ হয়ে যাবে না। তার জন্য প্রয়োজন সঠিক পদ্ধতি যার মাধ্যমে দীর্ঘদিনের এই অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করা যায়। সেই পথে এগিয়ে যাচ্ছে ড.ইউনূসের ইন্টারিম গভারমেন্ট। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে এই সরকারের উপর জনসাধারণের আশা-আখাঙ্খা বেড়েছে পাল্লা দিয়ে এখনো এদেশের মানুষ আশাবাদী। সেই আশা-আকাঙ্খা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ যাই হোক দেশের মানুষ চায় ‘সংস্কার’।

সম্প্রতি ড. ইউনূস যে শর্ত ভিত্তিক রাজনীতি দলগুলোর উপর আরোপ করে দিয়েছেন তা কেবল সুদূরপ্রসারী বিপ্লবী চেতনাকেই নিশ্চিত করবে না বরং সময় উপযোগী অধিকারের লড়াইকে আরো বহুধাপ এগিয়ে নিবে বলে বিশ্বাস করি।

সংস্কার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন —‘আপনারা আপনাদের বক্তব্য দিন আমরা ওয়েবসাইটে দিয়ে দেবো ’ সত্যিকার অর্থে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে গণমানুষের অধিকারের স্বাদেশিক আলামত পাওয়া যায়। কারা সংস্কার চায় আর কারা সংস্কার চায় না! এটি জানার কিংবা অবগত হওয়ার অধিকার বাংলাদেশের জনগণের আছে। ৩৬ শে জুলাই অধিকার নিশ্চিতকরণের অধিকার দেয়। তাই যদি না হয় তাহলে কেন এতো এতো ছাত্রজনতা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে দিলো? প্রশ্নটি ছাত্রজনতার কাছে স্পষ্ট করা জরুরি। এটি এজন্যই জরুরি যে — যে আশা নিয়ে ছাত্রজনতা বুক উঁচিয়ে লড়াই করেছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তার শাস্তি নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন নিরপেক্ষ সরকার। দলীয় সরকারের অধীনে বিচার নিশ্চিত করার মানে আরেক রাজনীতিক ভবিষ্যত সংঘাতের বীজ বপন করা। যে বীজ একদিন বটবৃক্ষে পরিণত হবে রাজনীতির ইতিহাস তাই বলে।
যার ফলে তৈরী হতে পারে আরেক প্রতিহিংসার আতুরঘর।

বর্তমানে রাজনীতিক দলগুলো অবস্থা বিবেচনা করলে এর চেয়ে উত্তর সিদ্ধান্ত আর হতেই পারে না।
হয় আপনি ৩৬ শে জুলাইয়ের অন্তর্নিহিত বেদনার মমার্থ জাতির সামনে স্পষ্ট করবেন সংস্কারের পক্ষ নিয়ে আর না হয় আপনি নিজের অবস্থান জাতির সামনে উপযুক্ত যুক্তির মাধ্যমে তুলে ধরবেন। ড.ইউনূসের এমন প্রস্তাব এতো গভীর অর্থবহ যে —সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল হলে আপনি জাতির সামনে দল হিসেবে কিংবা নেতা হিসেবে বিশ্বাসঘাতক বলে বিবেচিত হবেন অবলীলায়।

এমন এক পরিস্থিতির সম্মুখিন বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলো যেখান থেকে বের হতে হলে — ৩৬ শে’র পক্ষে অথবা বিপক্ষে, হ্যাঁ অথবা না, সাগর অথবা মরুভূমির রাজনীতিকে বেঁচে নিতেই হবে। তা না হলে সামনের দিকে শুধুই অন্ধকারের অতল তলে তলিয়ে যেতেই হবে প্রকৃতির নিয়মে।

যদি এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা যায় বাংলাদেশের রাজনীতিক দলগুলোর মাঝে, তাহলে এটি বাংলাদেশের রাজনীতির ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে। অধিকার নিশ্চিতকরণে সংস্কার নাকি ওয়েবসাইট রাজনীতি নির্ভর করছে দলগুলোর উপরে, তারা কী সংস্কারের পক্ষ নিয়ে একটি সুন্দর রাজনীতিক পরিবেশ নিশ্চিত করবে, নাকি তারা ওয়েবসাইটের রাজনীতি করে ইতিহাসকে ঠেলে দিবে আরেক দিগন্ত উন্মোচনের পথে! যদি তাই হয় তাহলে সংস্কারের পক্ষে কিংবা বিপক্ষের দলগুলোকে ছাত্রজনতা ক্ষমা করবে কী? এবার সময় এসেছে দলগুলোর সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার।

ইতাঙ্গীর খন্দকার
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।