আওয়ামী সরকারের শাসনামলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিনিয়ত ঘটা বিভিন্ন র্যাগিংয়ের আতুড়ঘর লালন শাহ হলের ৩৩০ নম্বর কক্ষটি তথা সেই গণরুমকে শিক্ষার্থীদের রিডিংরুমে রূপান্তর করা হয়েছে। রুমটিতে এখন একটি ছোট লাইব্রেরি এবং শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য আলাদা আলাদা ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে।
বুধবার (৭ মে) সন্ধ্যায় ফিতা কেটে হলের এই রিডিংরুম উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। এসময় উপস্থিত ছিলেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম, ইবি সমন্বয়ক এস এম সুইট, শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক সাহেদ আহম্মেদ, ছাত্রশিবির সেক্রেটারি ইউসুফ আলী, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত এবং হলের আবাসিক শিক্ষার্থীবৃন্দ।
দীর্ঘদিন যাবত লালন শাহ হলের ৩৩০ নং কক্ষটি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গণরুম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। দূরদূরান্ত থেকে উচ্চশিক্ষা নিতে আসা শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটের কারণে শেষ ঠিকানা হতো লালন শাহ হলের এই গণরুম। হলের সিট না পাওয়া পর্যন্ত বাধ্য হয়ে গাদাগাদি করে অবস্থান করতো প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী। বিভিন্ন সময় পাওয়া যেত ভয়াবহ সব র্যাগিংয়ের খবর। বড় বড় ঘটনা গুলো গণমাধ্যমে উঠে এলেও র্যাগিংয়ের অনেক অজানা গল্প থেকে যেত লোকচক্ষুর আড়ালে।
তবে জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে গণরুম বিলুপ্ত করে দেয় হল প্রশাসন। পরবর্তীতে দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের পর রুমটিকে সুসজ্জিত রিডিংরুমে রূপান্তর করা হয়েছে। এখন এখানে ২৩ জন শিক্ষার্থী নিজ নিজ ডেস্কে নিরিবিলি পরিবেশে পড়াশোনা করতে পারবেন। আপাতত ২৩ জন নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও পরবর্তীতে আরো ১৫ টি ডেস্ক বাড়ানো হবে বলে হল সূত্রে জানা গেছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের আমলে এই রুমে নির্বিচারে শিক্ষার্থীদের র্যাগিং করা হতো। জোর করে মিছিলে নেওয়া হতো। কেও প্রতিবাদ করা ত দূরে থাক, টু শব্দটি করলেও তাকে হল ছাড়া হতে হতো। আর্থিক সমস্যায় থাকা সেসব শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়ে থাকতে হতো গণরুমে। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে হল প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবীর প্রেক্ষিতে প্রথমে গণরুম বিলুপ্ত, তারপর শিক্ষার্থীদের আবাসিকতা প্রদান এবং গণরুমকে রিডিংরুমে রূপান্তর করেছে। আর কখনো শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের শিকার হতে হবে না বলে আশাবাদী তারা।
এসময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব নসরুল্লাহ বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলেই এধরণের উদ্যোগ নেওয়া উচিত৷ ছাত্রদের পড়াশোনার জন্য পাঠাগার প্রতিটি হলের অংশ হওয়া উচিত। ছোট আকারের এধরণের পাঠাগার দেখলেই মন ভরে যা। ব্যক্তিগত দান এবং প্রশাসনিক সহযোগীতার মাধ্যমে এই পাঠাগার আরো সমৃদ্ধ হবে৷ আমাদের দেশ সহ কম উন্নত দেশে হল গড়ে উঠেছে ক্যামব্রিজ মডেলে। ওই হলের ছাত্ররা পড়াশোনা করে কিনা তা হাউজ টিউটররা দেখাশোনা করে। আমরা আগামীতে চেষ্টা করবো যেন হলের সাথেই হাউজ টিউটররা থাকেন।


























