১২:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাক-ভারত যুদ্ধে অস্ত্র ব্যবসার পোয়াবারো

যুদ্ধ-বিরতিতে সম্মত হলেও থামেনি পাক-ভারত সংঘাত। গতরাত থেকে মিসাইল হামলার খবর পাওয়া গেছে দুদেশেই। দুপক্ষের দোষারোপের ভেতর চলছে এখনও যুদ্ধ। তবে এর ধরনটা আগের চেয়ে মৃদু।

সব যুদ্ধের মতো পাক-ভারত মুখোমুখি অবস্থানে মূলত অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কপাল খুলেছে নগদে। সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার এ অঞ্চলে অস্ত্র বাণিজ্যের চিত্র আগের চেয়ে বদলে গেছে। তৈরি হয়েছে কিছু নতুন সমীকরণ।

পাকিস্তান এখন তাদের সামরিক অস্ত্রসম্ভারের ৮১ শতাংশ ক্রয় করে চীনের অস্ত্র প্রস্তুতকারক কোম্পানি থেকে। আগে যে আমেরিকা তাদের প্রধান অস্ত্র সাপ্লায়ার ছিল, সেটা এখন অতীত।

অন্য দিকে ভারত দু’দশক আগেও তাদের তিন-চতুর্থাংশ অস্ত্রশস্ত্র কিনত রাশান কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে। সে পরিমাণ এখন আগের চেয়ে অর্ধেকেরও কম। সম্প্রতি ভারত বেশি অস্ত্র কিনছে ফ্রান্স ও আমেরিকার কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে।

বিশ্ব রাজনীতির নিয়ন্ত্রকরা যুদ্ধে যে ভূমিকা রাখে সেটা নির্ভর করে এই অস্ত্র ব্যবসায়ী কোম্পানিগুলোর লাভ-লসের ওপর ভিত্তি করে। বৈশ্বিক ভূরাজনীতি কোনো কালেই নিরপেক্ষ বা নিঃস্বার্থ ছিল না। বরং তা সমান্তরালে বয়ে চলে অস্ত্র ব্যবসার প্রবৃদ্ধির সাথে।

এবারের পাক-ভারত যুদ্ধে চীনা কোম্পানির থেকে কেনা জে-টেন সি এয়ারক্র্যাফট ব্যবহার করে পাকিস্তান ভারতের অত্যাধুনিক ফরাসী রাফাল জেট জঙ্গীবিমানগুলোকে আক্রমণ করে ভূপাতিত করেছে। এই ঘটনার সতত্য প্রকাশ পাওয়া মাত্রই চীনের শেয়ার বাজারে ঐ কোম্পানির প্রতিরক্ষা স্টকগুলোর দাম রাতারাতি হু হু করে বেড়েছে। চীনের ‘এভিআইসি চেংডু এয়ারক্র্যাফট’ সংস্থা যারা জে-টেন সি বিমান তৈরি করে থাকে, এ কোম্পানিটির শেয়ার দর চলতি সপ্তাহেই ৪০% বেড়েছে।

লন্ডন ভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক এশিয়া-প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের মতে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এখন যেকোনো সংঘর্ষই চীনের সামরিক রফতানির জন্য কার্যত এক নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্র হয়ে উঠছে।

রাশিয়া এই যুদ্ধে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। এর ঠিক আগেই দেশটির যুদ্ধাস্ত্র কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ভারত অত্যাধুনিক মিসাইল সিস্টেম কিনেছে। যুদ্ধে তাই রাশিয়ার অবস্থান মোটেও নিরপেক্ষ নয়। পাকিস্তান তাদের মধ্যস্থতার প্রস্তাব সহজেই মেনে নেবে এমন ভাবার কোনো কারণ নেই।

চাইনিজ সংবাদমাধ্যম ‍দ্য সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, ২২ এপ্রিল পহেলগাম হামলার ঠিক পর পরই ভারত রাশিয়ার কাছে থেকে ‘ইগলা-এস’ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম কিনেছে। এই বিশেষ ধরনের মিসাইল সিস্টেম তুলনামূলক কম উচ্চতা দিয়ে ওড়া এয়ারক্র্যাফট ও ড্রোনে আঘাত করার করার ক্ষমতা রাখে। ভারত এই সিস্টেম পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর মোতায়েন করেছে। এখন পর্যন্ত সফলভাবে কাজে দিচ্ছে এই রাশান সিস্টেম। ফলে আশা করা যায়, রাশান অস্ত্র কোম্পানি ভারতের থেকে ভবিষ্যতে আরও অস্ত্র কেনার অর্ডার পাবে। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে গত বছরও রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ৬৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ভারত যে সামরিক অস্ত্রসম্ভার কেনে এর মধ্যে ৩৬ শতাংশ এখনও রাশান কোম্পানগুলোর কাছ থেকে।
ফলে চলমান পাক-ভারত সংঘাতে রাশিয়ার অবস্থান এই অস্ত্র বাণিজ্যের স্বার্থে ভারতের দিকেই ঝুঁকে থাকবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন।

এভাবেই অস্ত্র বাণিজ্য প্রভাবিত কূটনীতিতে সয়লাব ভারত পাকিস্তানের সাম্প্রতিক যুদ্ধ। বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র অঞ্চল হলেও যেখানে দীনতা নেই আধুনিক মারণাস্ত্রের। জীবনের আয়োজনের চেয়ে মৃত্যুর নিকাশ যে দশায় মুখ্য তেমন পরিস্থিতির সাক্ষ্য হচ্ছি আমরা প্রতিদিন।

জনপ্রিয় সংবাদ

সানজিদা তন্বীর বিয়ের খবর জানালেন ফেসবুকে নিজের হৃদয়গ্রাহী পোস্টে

পাক-ভারত যুদ্ধে অস্ত্র ব্যবসার পোয়াবারো

আপডেট সময় : ০১:৫৮:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫

যুদ্ধ-বিরতিতে সম্মত হলেও থামেনি পাক-ভারত সংঘাত। গতরাত থেকে মিসাইল হামলার খবর পাওয়া গেছে দুদেশেই। দুপক্ষের দোষারোপের ভেতর চলছে এখনও যুদ্ধ। তবে এর ধরনটা আগের চেয়ে মৃদু।

সব যুদ্ধের মতো পাক-ভারত মুখোমুখি অবস্থানে মূলত অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কপাল খুলেছে নগদে। সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার এ অঞ্চলে অস্ত্র বাণিজ্যের চিত্র আগের চেয়ে বদলে গেছে। তৈরি হয়েছে কিছু নতুন সমীকরণ।

পাকিস্তান এখন তাদের সামরিক অস্ত্রসম্ভারের ৮১ শতাংশ ক্রয় করে চীনের অস্ত্র প্রস্তুতকারক কোম্পানি থেকে। আগে যে আমেরিকা তাদের প্রধান অস্ত্র সাপ্লায়ার ছিল, সেটা এখন অতীত।

অন্য দিকে ভারত দু’দশক আগেও তাদের তিন-চতুর্থাংশ অস্ত্রশস্ত্র কিনত রাশান কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে। সে পরিমাণ এখন আগের চেয়ে অর্ধেকেরও কম। সম্প্রতি ভারত বেশি অস্ত্র কিনছে ফ্রান্স ও আমেরিকার কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে।

বিশ্ব রাজনীতির নিয়ন্ত্রকরা যুদ্ধে যে ভূমিকা রাখে সেটা নির্ভর করে এই অস্ত্র ব্যবসায়ী কোম্পানিগুলোর লাভ-লসের ওপর ভিত্তি করে। বৈশ্বিক ভূরাজনীতি কোনো কালেই নিরপেক্ষ বা নিঃস্বার্থ ছিল না। বরং তা সমান্তরালে বয়ে চলে অস্ত্র ব্যবসার প্রবৃদ্ধির সাথে।

এবারের পাক-ভারত যুদ্ধে চীনা কোম্পানির থেকে কেনা জে-টেন সি এয়ারক্র্যাফট ব্যবহার করে পাকিস্তান ভারতের অত্যাধুনিক ফরাসী রাফাল জেট জঙ্গীবিমানগুলোকে আক্রমণ করে ভূপাতিত করেছে। এই ঘটনার সতত্য প্রকাশ পাওয়া মাত্রই চীনের শেয়ার বাজারে ঐ কোম্পানির প্রতিরক্ষা স্টকগুলোর দাম রাতারাতি হু হু করে বেড়েছে। চীনের ‘এভিআইসি চেংডু এয়ারক্র্যাফট’ সংস্থা যারা জে-টেন সি বিমান তৈরি করে থাকে, এ কোম্পানিটির শেয়ার দর চলতি সপ্তাহেই ৪০% বেড়েছে।

লন্ডন ভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক এশিয়া-প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের মতে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এখন যেকোনো সংঘর্ষই চীনের সামরিক রফতানির জন্য কার্যত এক নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্র হয়ে উঠছে।

রাশিয়া এই যুদ্ধে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। এর ঠিক আগেই দেশটির যুদ্ধাস্ত্র কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ভারত অত্যাধুনিক মিসাইল সিস্টেম কিনেছে। যুদ্ধে তাই রাশিয়ার অবস্থান মোটেও নিরপেক্ষ নয়। পাকিস্তান তাদের মধ্যস্থতার প্রস্তাব সহজেই মেনে নেবে এমন ভাবার কোনো কারণ নেই।

চাইনিজ সংবাদমাধ্যম ‍দ্য সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, ২২ এপ্রিল পহেলগাম হামলার ঠিক পর পরই ভারত রাশিয়ার কাছে থেকে ‘ইগলা-এস’ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম কিনেছে। এই বিশেষ ধরনের মিসাইল সিস্টেম তুলনামূলক কম উচ্চতা দিয়ে ওড়া এয়ারক্র্যাফট ও ড্রোনে আঘাত করার করার ক্ষমতা রাখে। ভারত এই সিস্টেম পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর মোতায়েন করেছে। এখন পর্যন্ত সফলভাবে কাজে দিচ্ছে এই রাশান সিস্টেম। ফলে আশা করা যায়, রাশান অস্ত্র কোম্পানি ভারতের থেকে ভবিষ্যতে আরও অস্ত্র কেনার অর্ডার পাবে। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে গত বছরও রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ৬৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ভারত যে সামরিক অস্ত্রসম্ভার কেনে এর মধ্যে ৩৬ শতাংশ এখনও রাশান কোম্পানগুলোর কাছ থেকে।
ফলে চলমান পাক-ভারত সংঘাতে রাশিয়ার অবস্থান এই অস্ত্র বাণিজ্যের স্বার্থে ভারতের দিকেই ঝুঁকে থাকবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন।

এভাবেই অস্ত্র বাণিজ্য প্রভাবিত কূটনীতিতে সয়লাব ভারত পাকিস্তানের সাম্প্রতিক যুদ্ধ। বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র অঞ্চল হলেও যেখানে দীনতা নেই আধুনিক মারণাস্ত্রের। জীবনের আয়োজনের চেয়ে মৃত্যুর নিকাশ যে দশায় মুখ্য তেমন পরিস্থিতির সাক্ষ্য হচ্ছি আমরা প্রতিদিন।