০৬:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বহু সমস্যার ব্যাটারি রিকশা নিয়ে সমাধান কি?

সব সময় দেখা যেত ঈদের সময় শহর ফাঁকা। এবার রোজার ঈদেও ব্যতিক্রম ছিল। ঈদের দিনও নগরবাসীকে পড়তে হয় ভয়াবহ ট্রাফিক জটে। এক ঘণ্টার রাস্তা প্রায় ৪ ঘণ্টায় পেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানো লাগে। রাস্তার প্রত্যেকের ভাষ্য, পথে দেরির প্রধান কারণ ব্যাটারি রিকশা। কথা মিথ্যা তা বলা যাবে না। ভিআইপি রোড থেকে ফ্লাইওভারের ইঞ্চি ইঞ্চিতে ঠাঁসা ঢাকার এই নতুন আপদ।
সুস্পষ্টই এখানের ঢাকার সবচেয়ে বড় আপদ হিসেবে সনাক্ত করা যায় এই ব্যাটারি রিকশাকে। এগুলো একটা সময় ঢাকার নির্দিষ্ট কিছু সড়কে চলত। ২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থানের পর হঠাৎ শহর কেন সয়লাব হয়ে গেল এই রিকশায় সেটা ভাবনার বিষয়। আজকের ঢাকায় এমন কোনো রাস্তা নেই, যেখানে বিকট হর্ন বাজিয়ে এই রিকশা সারাক্ষণ চলে না।
একটা যান রাস্তায় নামার আগে এর ফিটনেস আছে কিনা সেটা দেখা প্রথম জরুরি। চালক পরীক্ষিত কিনা তাও জানতে হবে। কিন্তু এই ব্যাটারি রিকশাগুলোকে কোনো ধরনের পরীক্ষার ভিতর দিয়ে যেতে হয়নি। প্যাডালের পরিবর্তে ইঞ্জিন পেয়ে দেখা যাচ্ছে এর চালকরা পাল্লা দিচ্ছেন ট্রাক, বাস, লরির সঙ্গে। দুর্ঘটনা ঘটছে তাই অহরহ। রাস্তায় রাস্তায় জ্যাম লাগানোর প্রধান কারণ এখন এই ব্যাটারি রিকশা।
এই মহা আপদ ব্যাটারি রিকশা তুল্য হচ্ছে নব্য এক সন্ত্রাস হিসেবে। কিন্তু এ নিয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর মেলে না। এত রিকশার মালিক কারা? চালকরা কোত্থেকে আসছেন? কোথায় এগুলো চার্জ দেওয়া হয়? রুট পারমিট কে দেয়? এমন বিকট হর্ন কার অনুমতিতে এগুলো ব্যবহার করছে? – এমন তাবৎ প্রশ্নের উত্তর অজানা। কোন অথরিটির উদ্দেশ্যে প্রশ্ন তাও অজানা।
সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ব্যাটারি রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। বলা হচ্ছে, এগুলোর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এক এলাকার রিকশা অন্য এলাকায় যেতে পারবে না। এই রিকশাগুলো যেন একটা নির্দিষ্ট পয়েন্ট থেকে ব্যাটারিতে চার্জ দিতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে। একইসঙ্গে আটক করা রিকশার চালকদের অল্প হলেও কিছু ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
ইতোমধ্যে বুয়েট নিরাপদ, কম বিদ্যুৎ লাগে ও বেশি যাত্রী বহনে সক্ষম এমন ধরনের ব্যাটারি রিকশা ডিজাইন করেছে। সিটি করপোরেশন চায়, পুরনো রিকশাগুলো পরিবর্তে বুয়েট উদ্ভাবিত এই যানের রাস্তায় চলা নিশ্চিত করতে। যদিও এমন পরিকল্পনা কবে নাগাদ বাস্তব হবে তা কেউ বলতে পারছেন না।
যেন আশ্চর্য ভৌতিকতায় ভরা এই ব্যাটারি রিকশার জগৎ। সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষ কি ভাবছেন তার সবটা অজানা। কিন্তু মানুষ ভুগছেন রাস্তায় নামলেই। এ যন্ত্রণা বেড়েই চলেছে দিনে দিনে। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই রিকশা নিয়ে বাস্তবসম্মত ও কার্যকর করা সম্ভব এমন একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা দরকার। এর আগে পর্যন্ত প্রশ্ন তাই, ব্যাটারি রিকশার সন্ত্রাসী ভৌতিক জগৎ থেকে মুক্তি মিলবে কবে? আর এ মুক্তিই বা দেবে কে?
এমআর/সব

জনপ্রিয় সংবাদ

রংপুরে বাসের ধাক্কায় ইজিবাইক চালক নিহত, বাসচালক আটক

বহু সমস্যার ব্যাটারি রিকশা নিয়ে সমাধান কি?

আপডেট সময় : ০৫:৪৮:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

সব সময় দেখা যেত ঈদের সময় শহর ফাঁকা। এবার রোজার ঈদেও ব্যতিক্রম ছিল। ঈদের দিনও নগরবাসীকে পড়তে হয় ভয়াবহ ট্রাফিক জটে। এক ঘণ্টার রাস্তা প্রায় ৪ ঘণ্টায় পেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানো লাগে। রাস্তার প্রত্যেকের ভাষ্য, পথে দেরির প্রধান কারণ ব্যাটারি রিকশা। কথা মিথ্যা তা বলা যাবে না। ভিআইপি রোড থেকে ফ্লাইওভারের ইঞ্চি ইঞ্চিতে ঠাঁসা ঢাকার এই নতুন আপদ।
সুস্পষ্টই এখানের ঢাকার সবচেয়ে বড় আপদ হিসেবে সনাক্ত করা যায় এই ব্যাটারি রিকশাকে। এগুলো একটা সময় ঢাকার নির্দিষ্ট কিছু সড়কে চলত। ২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থানের পর হঠাৎ শহর কেন সয়লাব হয়ে গেল এই রিকশায় সেটা ভাবনার বিষয়। আজকের ঢাকায় এমন কোনো রাস্তা নেই, যেখানে বিকট হর্ন বাজিয়ে এই রিকশা সারাক্ষণ চলে না।
একটা যান রাস্তায় নামার আগে এর ফিটনেস আছে কিনা সেটা দেখা প্রথম জরুরি। চালক পরীক্ষিত কিনা তাও জানতে হবে। কিন্তু এই ব্যাটারি রিকশাগুলোকে কোনো ধরনের পরীক্ষার ভিতর দিয়ে যেতে হয়নি। প্যাডালের পরিবর্তে ইঞ্জিন পেয়ে দেখা যাচ্ছে এর চালকরা পাল্লা দিচ্ছেন ট্রাক, বাস, লরির সঙ্গে। দুর্ঘটনা ঘটছে তাই অহরহ। রাস্তায় রাস্তায় জ্যাম লাগানোর প্রধান কারণ এখন এই ব্যাটারি রিকশা।
এই মহা আপদ ব্যাটারি রিকশা তুল্য হচ্ছে নব্য এক সন্ত্রাস হিসেবে। কিন্তু এ নিয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর মেলে না। এত রিকশার মালিক কারা? চালকরা কোত্থেকে আসছেন? কোথায় এগুলো চার্জ দেওয়া হয়? রুট পারমিট কে দেয়? এমন বিকট হর্ন কার অনুমতিতে এগুলো ব্যবহার করছে? – এমন তাবৎ প্রশ্নের উত্তর অজানা। কোন অথরিটির উদ্দেশ্যে প্রশ্ন তাও অজানা।
সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ব্যাটারি রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। বলা হচ্ছে, এগুলোর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এক এলাকার রিকশা অন্য এলাকায় যেতে পারবে না। এই রিকশাগুলো যেন একটা নির্দিষ্ট পয়েন্ট থেকে ব্যাটারিতে চার্জ দিতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে। একইসঙ্গে আটক করা রিকশার চালকদের অল্প হলেও কিছু ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
ইতোমধ্যে বুয়েট নিরাপদ, কম বিদ্যুৎ লাগে ও বেশি যাত্রী বহনে সক্ষম এমন ধরনের ব্যাটারি রিকশা ডিজাইন করেছে। সিটি করপোরেশন চায়, পুরনো রিকশাগুলো পরিবর্তে বুয়েট উদ্ভাবিত এই যানের রাস্তায় চলা নিশ্চিত করতে। যদিও এমন পরিকল্পনা কবে নাগাদ বাস্তব হবে তা কেউ বলতে পারছেন না।
যেন আশ্চর্য ভৌতিকতায় ভরা এই ব্যাটারি রিকশার জগৎ। সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষ কি ভাবছেন তার সবটা অজানা। কিন্তু মানুষ ভুগছেন রাস্তায় নামলেই। এ যন্ত্রণা বেড়েই চলেছে দিনে দিনে। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই রিকশা নিয়ে বাস্তবসম্মত ও কার্যকর করা সম্ভব এমন একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা দরকার। এর আগে পর্যন্ত প্রশ্ন তাই, ব্যাটারি রিকশার সন্ত্রাসী ভৌতিক জগৎ থেকে মুক্তি মিলবে কবে? আর এ মুক্তিই বা দেবে কে?
এমআর/সব