১২:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিবিএস’র জরিপ

আত্মীয়স্বজন-বন্ধুদের দ্বারস্থ ৩৬ শতাংশ বেকার

দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ২৪ হাজার

সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে, এর সংখ্যা ৬ লাখ ৮৭ হাজার

সবচেয়ে কম ময়মনসিংহে, এর সংখ্যা ১ লাখ ৪ হাজার

দেশের পট পরিবর্তনেও বেকারত্বের সংখ্যা কমেনি। বরং সময়ের ব্যবধানে ক্রমেই তা বাড়ছে। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে এমনকি সংসারের হাল ধরতে বেকার তরুণ-তরুণীরা আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের মাধ্যমেই বেশি চাকরি খোঁজেন। তারা মনে করেন- বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনই তাদের কাক্সিক্ষত চাকরি দিতে পারবেন। তাই চাকরির বাজারে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুরাই সবচেয়ে বেশি আস্থার জায়গা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ অনুসারে, চাকরির জন্য আত্মীয় ও বন্ধুদের কাছে দ্বারস্থ হচ্ছেন প্রায় ৩৬ শতাংশ চাকরিপ্রত্যাশী। অর্থাৎ প্রতিজন বেকারের একজনই বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে চাকরি খোঁজেন। আর সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে চাকরি খুঁজেছেন প্রায় ২৬ শতাংশ প্রত্যাশী। আর প্রায় ১২ শতাংশ চাকরিপ্রত্যাশী সরাসরি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে চাকরি চেয়েছেন। সম্প্রতি শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৪ প্রকাশ করেছে বিবিএস। সেখানে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
বিবিএসের জরিপে চাকরি খোঁজা বা কর্মসংস্থানের নানা ধরনের পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে। যেমন- সরাসরি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেও চাকরি চান প্রায় ৯ শতাংশ বেকার। সাড়ে ৫ শতাংশ বেকার বিজ্ঞাপন দেখে চাকরির আবেদন করবেন কি না, তা মনস্থির করেন। সরাসরি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমেও অনেকে চাকরি চান। এই হার বেকারদের মধ্যে সাড়ে তিন শতাংশ।
বিবিএসের জরিপে উঠে আসা চাকরি খোঁজার অন্য উপায়গুলো হলো- প্রফেশনাল নেটওয়ার্কে নিজের জীবনবৃত্তান্ত জমা রাখা; সরকারি কর্মসংস্থান কেন্দ্রে নিবন্ধন নেওয়া; বেসরকারি কর্মসংস্থান কেন্দ্রে নিবন্ধন নেওয়া; রাস্তায় দাঁড়িয়ে চাকরি খোঁজা; ব্যবসা করার জন্য আর্থিক সহায়তা চাওয়া; ব্যবসার জন্য জমি, জায়গা চাওয়া; ব্যবসার লাইসেন্সের আবেদন করা ইত্যাদি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ অনুসারে, ২০২৪ সাল শেষে বাংলাদেশের বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ২৪ হাজার। সবচেয়ে বেশি বেকার ঢাকা বিভাগে। এই বিভাগে ৬ লাখ ৮৭ হাজার বেকার আছেন। এরপরের দু’টি স্থানে আছে যথাক্রমে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগে।
দেশের বিভাগওয়ারি হিসেবে ঢাকা বিভাগের পর চট্টগ্রাম বিভাগে ৫ লাখ ৮৪ হাজার, রাজশাহীতে ৩ লাখ ৫৭ হাজার, খুলনায় ৩ লাখ ৩১ হাজার, সিলেটে ২ লাখ ১৬ হাজার, রংপুরে ২ লাখ ৬ হাজার, বরিশালে ১ লাখ ৩৯ হাজার এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১ লাখ ৪ হাজার বেকার আছেন।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞা অনুযায়ী, সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করে মজুরি পেলে তাকে বেকার হিসেবে ধরা হবে না। গত এক মাস ধরে কাজপ্রত্যাশী এবং সর্বশেষ এক সপ্তাহে কেউ যদি এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজ করার সুযোগ না পান, তাদের বেকার হিসেবে গণ্য করা হবে। এটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সংজ্ঞা। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করে জীবনধারণ অসম্ভব। এদিকে মনমতো কাজ না পাওয়া এমন ব্যক্তি আছেন প্রায় এক কোটি। তাদের ছদ্মবেকার হিসেবে ধরা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিবিএস’র ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা জানান, বেকারেরা চাকরির জন্য নানা ধরনের উপায় খোঁজেন। যেকোনো উপায়ে তাদের চাকরি বা কাজ চাই। প্রথমেই দ্বারস্থ হন আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের কাছে। বেকারেরা মনে করেন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবেরা তাদের সহায়তা করতে পারবেন। মামা-আত্মীয়স্বজনদের কাছে চাকরির অনুরোধ করার প্রবণতা এ দেশের দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

বিবিএস’র জরিপ

আত্মীয়স্বজন-বন্ধুদের দ্বারস্থ ৩৬ শতাংশ বেকার

আপডেট সময় : ০৭:৪০:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ২৪ হাজার

সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে, এর সংখ্যা ৬ লাখ ৮৭ হাজার

সবচেয়ে কম ময়মনসিংহে, এর সংখ্যা ১ লাখ ৪ হাজার

দেশের পট পরিবর্তনেও বেকারত্বের সংখ্যা কমেনি। বরং সময়ের ব্যবধানে ক্রমেই তা বাড়ছে। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে এমনকি সংসারের হাল ধরতে বেকার তরুণ-তরুণীরা আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের মাধ্যমেই বেশি চাকরি খোঁজেন। তারা মনে করেন- বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনই তাদের কাক্সিক্ষত চাকরি দিতে পারবেন। তাই চাকরির বাজারে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুরাই সবচেয়ে বেশি আস্থার জায়গা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ অনুসারে, চাকরির জন্য আত্মীয় ও বন্ধুদের কাছে দ্বারস্থ হচ্ছেন প্রায় ৩৬ শতাংশ চাকরিপ্রত্যাশী। অর্থাৎ প্রতিজন বেকারের একজনই বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে চাকরি খোঁজেন। আর সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে চাকরি খুঁজেছেন প্রায় ২৬ শতাংশ প্রত্যাশী। আর প্রায় ১২ শতাংশ চাকরিপ্রত্যাশী সরাসরি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে চাকরি চেয়েছেন। সম্প্রতি শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৪ প্রকাশ করেছে বিবিএস। সেখানে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
বিবিএসের জরিপে চাকরি খোঁজা বা কর্মসংস্থানের নানা ধরনের পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে। যেমন- সরাসরি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেও চাকরি চান প্রায় ৯ শতাংশ বেকার। সাড়ে ৫ শতাংশ বেকার বিজ্ঞাপন দেখে চাকরির আবেদন করবেন কি না, তা মনস্থির করেন। সরাসরি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমেও অনেকে চাকরি চান। এই হার বেকারদের মধ্যে সাড়ে তিন শতাংশ।
বিবিএসের জরিপে উঠে আসা চাকরি খোঁজার অন্য উপায়গুলো হলো- প্রফেশনাল নেটওয়ার্কে নিজের জীবনবৃত্তান্ত জমা রাখা; সরকারি কর্মসংস্থান কেন্দ্রে নিবন্ধন নেওয়া; বেসরকারি কর্মসংস্থান কেন্দ্রে নিবন্ধন নেওয়া; রাস্তায় দাঁড়িয়ে চাকরি খোঁজা; ব্যবসা করার জন্য আর্থিক সহায়তা চাওয়া; ব্যবসার জন্য জমি, জায়গা চাওয়া; ব্যবসার লাইসেন্সের আবেদন করা ইত্যাদি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ অনুসারে, ২০২৪ সাল শেষে বাংলাদেশের বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ২৪ হাজার। সবচেয়ে বেশি বেকার ঢাকা বিভাগে। এই বিভাগে ৬ লাখ ৮৭ হাজার বেকার আছেন। এরপরের দু’টি স্থানে আছে যথাক্রমে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগে।
দেশের বিভাগওয়ারি হিসেবে ঢাকা বিভাগের পর চট্টগ্রাম বিভাগে ৫ লাখ ৮৪ হাজার, রাজশাহীতে ৩ লাখ ৫৭ হাজার, খুলনায় ৩ লাখ ৩১ হাজার, সিলেটে ২ লাখ ১৬ হাজার, রংপুরে ২ লাখ ৬ হাজার, বরিশালে ১ লাখ ৩৯ হাজার এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১ লাখ ৪ হাজার বেকার আছেন।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞা অনুযায়ী, সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করে মজুরি পেলে তাকে বেকার হিসেবে ধরা হবে না। গত এক মাস ধরে কাজপ্রত্যাশী এবং সর্বশেষ এক সপ্তাহে কেউ যদি এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজ করার সুযোগ না পান, তাদের বেকার হিসেবে গণ্য করা হবে। এটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সংজ্ঞা। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করে জীবনধারণ অসম্ভব। এদিকে মনমতো কাজ না পাওয়া এমন ব্যক্তি আছেন প্রায় এক কোটি। তাদের ছদ্মবেকার হিসেবে ধরা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিবিএস’র ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা জানান, বেকারেরা চাকরির জন্য নানা ধরনের উপায় খোঁজেন। যেকোনো উপায়ে তাদের চাকরি বা কাজ চাই। প্রথমেই দ্বারস্থ হন আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের কাছে। বেকারেরা মনে করেন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবেরা তাদের সহায়তা করতে পারবেন। মামা-আত্মীয়স্বজনদের কাছে চাকরির অনুরোধ করার প্রবণতা এ দেশের দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে।