দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এই বিজয়ের মধ্য দিয়েই বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ। যারা সেই সময়ের প্রত্যক্ষ সাক্ষী, তাদের কাছে বিজয় দিবস মানেই স্মৃতি, বেদনা ও গৌরবের এক অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়। তবে মুক্তিযুদ্ধ না দেখা আজকের তরুণ প্রজন্মের কাছে বিজয় দিবসের অর্থ কী?
১৬ ডিসেম্বর বাঙালির আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের চূড়ান্ত প্রতীক। অগণিত শহীদের প্রাণের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনা এই বিজয়ের তাৎপর্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুনভাবে ধরা দিচ্ছে তরুণদের ভাবনায়। বিশেষ করে ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্ট বিপ্লবের পর ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর বাস্তবতায় এবারের বিজয় দিবস পেয়েছে ভিন্ন মাত্রা।
এই প্রেক্ষাপটে বিজয় দিবস নিয়ে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও অনুভূতির কথা উঠে এসেছে খবরের কাগজের -র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি কাউসার আহমেদের এই ফিচারে।
লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত বিজয়, রক্ষার দায় আমাদের সবার
এ বিজয় অনেক কষ্টে অর্জিত। লাখো শহীদের রক্ত এবং মা–বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে পাওয়া এই বিজয় আমাদের গর্বের ইতিহাস। এই বিজয় রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সবার। কোনো অপশক্তি যেন অপপ্রচার বা দমননীতির মাধ্যমে বিজয়ের চেতনাকে ম্লান করতে না পারে—সেজন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে।
দল-মত নির্বিশেষে আমরা সবাই বাংলাদেশি; এই দেশ আমাদের সবার। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বিজয় দিবস ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। যাদের আছে, তারা সত্যিই দেশকে ভালোবাসে কি না, তা প্রশ্নের দাবি রাখে। বিজয়ের এই দিনে আমি চাই—আমার দেশ আরও এগিয়ে যাক; দুর্নীতি, হত্যা ও অরাজকতা চিরতরে নির্মূল হোক।
নুসরাত জাহান হ্যাপি
শিক্ষা বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বিজয় দিবস: স্বাধীনতার শিক্ষা ও প্রেরণার উৎস
বিজয় দিবস আমাদের জাতীয় জীবনের এক গৌরবময় অধ্যায়। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে এই দিনটি আমাকে স্বাধীনতার প্রকৃত মূল্য উপলব্ধি করতে শেখায়। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। বিজয় দিবস আমাদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে, ইতিহাস জানার আগ্রহ বাড়ায় এবং দেশকে ভালোবাসার দায়িত্ববোধ জাগ্রত করে।
৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ আমার কাছে আমার অস্তিত্ব। এই অস্তিত্বের লড়াই আজও আমাকে সব ধরনের আধিপত্যবাদ, আগ্রাসন ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে অনুপ্রেরণা জোগায়। আজাদীর এই সংগ্রামে ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জন্য পাথেয়। এই শেকড় আঁকড়ে ধরে রাখতে পারলে, একদিন আমরা চূড়ান্ত মুক্তির দিকে এগোতে পারব বলে বিশ্বাস করি।
জিহাদুল ইসলাম রাফি
ওশানোগ্রাফি বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বিজয় দিবস: ঐক্য, দেশপ্রেম ও দায়িত্বের আহ্বান
অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয় আমাদের জাতীয় জীবনে অহংকার ও অনুপ্রেরণার উৎস। আমার কাছে বিজয় দিবস মানে শুধু অতীত স্মরণ নয়, বরং ভবিষ্যতের প্রতি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। আজকের এই বিজয় দিবসে আসুন, আমরা সবাই কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলি—জাতি হিসেবে আমরা ঐক্যবদ্ধ হব।
ধর্ম, বর্ণ ও রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করব, দুর্নীতি দূর করব। নতুন প্রজন্মকে শেখাব মূল্যবোধ, দেশপ্রেম ও মানবিকতা। নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখব, দেশকে ভালোবেসে কাজ করব—যাতে শহীদদের স্বপ্ন অপূর্ণ না থাকে। আমরা সবাই মিলে গড়ে তুলব এক ন্যায়ভিত্তিক, সমৃদ্ধ ও ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ, যা বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
সালমান হোসেন
শিক্ষা বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বিজয় দিবস: জাতীয় আত্মপরিচয়ের স্মারক ও দায়বোধের প্রেরণা
বিজয় দিবস আমার কাছে কেবল একটি ঐতিহাসিক উপলক্ষ নয়; বরং এটি আমাদের জাতীয় আত্মপরিচয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ স্মারক। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি মনে করি, এই দিনটি আমাদের শুধু অতীতের গৌরবময় ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেয় না, বরং দায়িত্বশীল নাগরিক হয়ে ওঠার প্রেরণাও জাগায়।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের শিখিয়েছে—স্বাধীনতা সহজে আসে না; এটি অর্জিত হয় অসংখ্য বীরের ত্যাগ, সংগ্রাম ও অদম্য সাহসের বিনিময়ে। সেই রক্তক্ষয়ী পথচলার প্রতিটি গল্প আমাদের চেতনায় কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধার গভীর ছাপ ফেলে।
বিজয় দিবস তাই শুধু অতীতের স্মৃতিচারণ নয়, বরং ভবিষ্যতের পথনির্দেশকও। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের দায়িত্ব কেবল পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং সমাজের প্রতি সচেতন, নৈতিক ও দায়বদ্ধ নাগরিক হয়ে ওঠাই আমাদের প্রকৃত কর্তব্য। বিজয়ের এই চেতনা হৃদয়ে ধারণ করলেই জাতীয় ঐক্য, দায়িত্ববোধ ও প্রগতির ভিত আরও সুদৃঢ় হবে।
উম্মে হাবিবা
শিক্ষা বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

























