০৬:২১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুড়িগ্রামে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পেশা বদলাচ্ছেন চরাঞ্চলের মানুষ 

  • সবুজ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৭:৪৩:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর ২০২৩
  • 258
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমুল পরিবর্তন এসেছে চরাঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকায়। নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় নিত্যনতুন পেশা বেছে নিচ্ছে মানুষ। বিশেষ করে কৃষিতে জলবায়ুর প্রভাবে কৃষিকাজ ছেড়ে অন্য পেশায় ঝুঁকছে চরাঞ্চলের মানুষরা।
কখনো অসময়ে নদীভাঙন, বন্যা কিংবা খরা। আবার কখনো আগাম শীতের কারণে ফসলের ক্ষতি হওয়ায় অর্থনৈতিক মন্দা এড়াতে দিন দিন বিকল্প পেশাকে পুঁজি করছেন চরাঞ্চলের মানুষ।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের মো. নুর ইসলাম  বলেন, বইয়ের পাতায় ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ পড়ে আসলেও বর্তমানে প্রেক্ষাপট পাল্টেছে। জলবায়ুর কারণে কাল-পরিক্রমার বদল হয়েছে। কেননা গত কয়েক বছর ধরে আশানুরূপ বন্যা নেই। শুকনো মৌসুমে হচ্ছে প্রচুর বৃষ্টিপাত। এছাড়া ব্রহ্মপুত্র-ধরলায় বন্যা মৌসুমেও হচ্ছে নাব্য সংকট। ঝুঁকি এড়াতে কৃষিনির্ভর চরের মানুষজন পেশা বদল করে গবাদি পশুপালনে আগ্রহ বাড়ছে।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের আলোর চরের এলাকার নুরনাহার বেগম বলেন, কয়েক বছর আগে চরে হাতেগোনা কয়েকটি বাড়িতে হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল পালন করছি। এখন চরের অধিকাংশ বাড়িতে গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ পালন করছে। এছাড়া অল্প পুঁজিতে অধিক লাভের আশায় গতানুগতিক খামার ছেড়ে ভেড়ার প্রজাতি গারল, উন্নত জাতের ছাগল, বিদেশি গরু পালনে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কেননা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিকল্প কিছু ভাবা ছাড়া উপায় নেই।
একই এলাকার  সাইফুর রহমান বলেন, আবহাওয়ার কারণে চরে এখন কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে মানুষকে। অসময়ে বন্যা, খরার কারণে কৃষিতে তেমন ফসল ফলে না। তাই এই চরের মানুষের গবাদি পশুপালনে আগ্রহ বেড়েছে। একটি গরু পালন করে ৬ মাস থেকে এক বছর পর বিক্রি করলে খরচের তুলনায় লাভ কম হয়। কিন্তু একটা ছোট মহিষ ৫০ হাজার দিয়ে কিনে লালন পালন করলে বছর শেষে প্রায় দেড়-পৌনে দু’লাখ টাকায় বিক্রি করা যায়। মহিষের জন্য আলাদা করে ফিড, ভিটামিন,ভুষি, খড় কিনতে হয় না। ফলে স্বল্প ব্যয়ে বেশি লাভ হয় মহিষে। চরের প্রতিটি বাড়ির লোকজন এখন আবহাওয়ার কারণে পেশাও পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে।
চিলমারী ইউনিয়নের শাখাহাতি এলাকার অবসরপ্রাপ্ত ওই সেনা সদস্যের নাম রফিকুল ইসলাম। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক সার্জেন্ট ছিলেন । গত বছরের শেষ দিকে তিনি নিজ বাড়িতে তিনি  ভারত থেকে নিয়ে আসা ৫২টি গাড়ল নিয়ে আসেন। দ্বিতীয় দফায় আরও ৩৬ টি সহ ৮৭ টি গাড়ল নিয়ে তার খামারের যাত্রা শুরু হয়।
খামারী   রফিকুল ইসলাম  জানান, চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার সময় আমি  সিদ্ধান্ত নেই গরু ও ভেড়ার খামার করার। পরে গাড়ল সম্পর্কে জেনে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে গাড়লের খামার গড়ে তুলি। এজন্য তিনি দেশের অর্ধশতাধিক খামার ঘুরে হাতে কলমে গাড়ল পালন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা সঞ্চার করেছি।  খামারেরগাড়লের যাবতীয় পরিচচা ও চিকিৎসা তিনি নিজেই করি।
এই খামারি  আরো বলেন, ‘ছাগল বা ভেড়ার চেয়ে গাড়ল পালন অনেক বেশি লাভজনক।  কুড়িগ্রামে  আবহাওয়া ও ভূ-প্রকৃতি গাড়ল পালনের জন্য উপযোগী। আমাদের চরে যেসকল ঘাস হয় তা গাড়লের পছন্দের খাবার। আর এর মাংস ও দাম ভেড়ার চেয়ে অনেক বেশি। ফলে এর খামার লাভজনক।’
কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোনাক্কা আলী বলেন, কুড়িগ্রামে জলবায়ুর প্রভাবের ফলে চরাঞ্চলের মানুষ জীবন জীবিকায় পরিবর্তন আনতে শুরু করেছে। অনাকাঙ্খিত দুযোর্গ মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বাড়াতে দিন দিন গবাদি পশু পালনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে মানুষ। জেলার প্রায় ৪৫০টি চরাঞ্চলের জমি গবাদি পশু পালনের জন্য বেশ উপযোগী। ফলে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও গারল পালনের সংখ্যাও বেড়েছে। এসব মানুষের দ্বোরগোড়ায় জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ ভ্যাকসিনেশন ও চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেওয়ায় তারাও গবাদি পশু পালনে আস্থাশীল হয়ে পড়েছে।
জনপ্রিয় সংবাদ

স্মৃতিসৌধে তারেক রহমান

কুড়িগ্রামে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পেশা বদলাচ্ছেন চরাঞ্চলের মানুষ 

আপডেট সময় : ০৭:৪৩:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর ২০২৩
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমুল পরিবর্তন এসেছে চরাঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকায়। নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় নিত্যনতুন পেশা বেছে নিচ্ছে মানুষ। বিশেষ করে কৃষিতে জলবায়ুর প্রভাবে কৃষিকাজ ছেড়ে অন্য পেশায় ঝুঁকছে চরাঞ্চলের মানুষরা।
কখনো অসময়ে নদীভাঙন, বন্যা কিংবা খরা। আবার কখনো আগাম শীতের কারণে ফসলের ক্ষতি হওয়ায় অর্থনৈতিক মন্দা এড়াতে দিন দিন বিকল্প পেশাকে পুঁজি করছেন চরাঞ্চলের মানুষ।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের মো. নুর ইসলাম  বলেন, বইয়ের পাতায় ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ পড়ে আসলেও বর্তমানে প্রেক্ষাপট পাল্টেছে। জলবায়ুর কারণে কাল-পরিক্রমার বদল হয়েছে। কেননা গত কয়েক বছর ধরে আশানুরূপ বন্যা নেই। শুকনো মৌসুমে হচ্ছে প্রচুর বৃষ্টিপাত। এছাড়া ব্রহ্মপুত্র-ধরলায় বন্যা মৌসুমেও হচ্ছে নাব্য সংকট। ঝুঁকি এড়াতে কৃষিনির্ভর চরের মানুষজন পেশা বদল করে গবাদি পশুপালনে আগ্রহ বাড়ছে।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের আলোর চরের এলাকার নুরনাহার বেগম বলেন, কয়েক বছর আগে চরে হাতেগোনা কয়েকটি বাড়িতে হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল পালন করছি। এখন চরের অধিকাংশ বাড়িতে গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ পালন করছে। এছাড়া অল্প পুঁজিতে অধিক লাভের আশায় গতানুগতিক খামার ছেড়ে ভেড়ার প্রজাতি গারল, উন্নত জাতের ছাগল, বিদেশি গরু পালনে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কেননা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিকল্প কিছু ভাবা ছাড়া উপায় নেই।
একই এলাকার  সাইফুর রহমান বলেন, আবহাওয়ার কারণে চরে এখন কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে মানুষকে। অসময়ে বন্যা, খরার কারণে কৃষিতে তেমন ফসল ফলে না। তাই এই চরের মানুষের গবাদি পশুপালনে আগ্রহ বেড়েছে। একটি গরু পালন করে ৬ মাস থেকে এক বছর পর বিক্রি করলে খরচের তুলনায় লাভ কম হয়। কিন্তু একটা ছোট মহিষ ৫০ হাজার দিয়ে কিনে লালন পালন করলে বছর শেষে প্রায় দেড়-পৌনে দু’লাখ টাকায় বিক্রি করা যায়। মহিষের জন্য আলাদা করে ফিড, ভিটামিন,ভুষি, খড় কিনতে হয় না। ফলে স্বল্প ব্যয়ে বেশি লাভ হয় মহিষে। চরের প্রতিটি বাড়ির লোকজন এখন আবহাওয়ার কারণে পেশাও পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে।
চিলমারী ইউনিয়নের শাখাহাতি এলাকার অবসরপ্রাপ্ত ওই সেনা সদস্যের নাম রফিকুল ইসলাম। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক সার্জেন্ট ছিলেন । গত বছরের শেষ দিকে তিনি নিজ বাড়িতে তিনি  ভারত থেকে নিয়ে আসা ৫২টি গাড়ল নিয়ে আসেন। দ্বিতীয় দফায় আরও ৩৬ টি সহ ৮৭ টি গাড়ল নিয়ে তার খামারের যাত্রা শুরু হয়।
খামারী   রফিকুল ইসলাম  জানান, চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার সময় আমি  সিদ্ধান্ত নেই গরু ও ভেড়ার খামার করার। পরে গাড়ল সম্পর্কে জেনে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে গাড়লের খামার গড়ে তুলি। এজন্য তিনি দেশের অর্ধশতাধিক খামার ঘুরে হাতে কলমে গাড়ল পালন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা সঞ্চার করেছি।  খামারেরগাড়লের যাবতীয় পরিচচা ও চিকিৎসা তিনি নিজেই করি।
এই খামারি  আরো বলেন, ‘ছাগল বা ভেড়ার চেয়ে গাড়ল পালন অনেক বেশি লাভজনক।  কুড়িগ্রামে  আবহাওয়া ও ভূ-প্রকৃতি গাড়ল পালনের জন্য উপযোগী। আমাদের চরে যেসকল ঘাস হয় তা গাড়লের পছন্দের খাবার। আর এর মাংস ও দাম ভেড়ার চেয়ে অনেক বেশি। ফলে এর খামার লাভজনক।’
কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোনাক্কা আলী বলেন, কুড়িগ্রামে জলবায়ুর প্রভাবের ফলে চরাঞ্চলের মানুষ জীবন জীবিকায় পরিবর্তন আনতে শুরু করেছে। অনাকাঙ্খিত দুযোর্গ মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বাড়াতে দিন দিন গবাদি পশু পালনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে মানুষ। জেলার প্রায় ৪৫০টি চরাঞ্চলের জমি গবাদি পশু পালনের জন্য বেশ উপযোগী। ফলে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও গারল পালনের সংখ্যাও বেড়েছে। এসব মানুষের দ্বোরগোড়ায় জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ ভ্যাকসিনেশন ও চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেওয়ায় তারাও গবাদি পশু পালনে আস্থাশীল হয়ে পড়েছে।