দ্বিতীয় বারের মতো প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও ধীরগতির কাজে থমকে গেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অবকাঠামো উন্নয়নমূলক তিন প্রকল্প। বাজেট পাশের সাড়ে ৫ বছর পার হলেও কাজ শেষ হয়েছে ৫২ শতাংশ। অথচ কাজ শেষের নির্ধারিত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল ২০২২ সালের জুনে। এরপর আবার মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে এক প্রকল্পের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হলেও, অন্য দুই প্রকল্পের কাজ দ্বিতীয় দফায় বাড়নো নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক।
সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মাণাধীন শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হলের ১০ তলা দৃশ্যমান হয়েছে। এখন প্লাস্টার, জানালা লাগানো সহ শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। অন্যদিকে ২০ তলা একাডেমিক ভবন এবং ১০ তলাবিশিষ্ট শেখ হাসিনা হলের কাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে। একাডেমিক ভবনের ৪ তলার কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং ১০ তলাবিশিষ্ট শেখ হাসিনা হলের তিন তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সংকট দীর্ঘদিনের। নির্দিষ্ট সময়ে হলের কাজ শেষ হলে অনেক শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা পেত। কিন্তু বর্তমানে সুবিধা তো দূরের কথা দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণাধীন ভবনের কাজে ব্যবহৃত ভারী যানবাহন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে যাতায়াতের ফলে রাস্তার বেহাল দশা তৈরি হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই কাঁদা পানিতে আর হাঁটা চলার উপযোগী থাকছে না। তারা বলছেন, সুষ্ঠু তদারকি, অদক্ষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দিয়ে কাজ করানো ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আন্তরিকতার অভাবে কাজ ধীরগতিতে চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানান তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রকল্পের জন্য পাস হয় ৩৬৩ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় দশ তালা বিশিষ্ট শেখ হাসিনা হল ও শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হল এবং ২০তলা একাডেমিক ভবনসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। তবে পরবর্তীতে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি এবং আনুষাঙ্গিক খরচের দিক বিবেচনায় প্রকল্পের সংশোধিত বাজেট পাশ হয় । ফলে ২০১৪ সালে বিভিন্ন সামগ্রীর যে দাম ধরা হয়েছিল তা পরিবর্তন করে ২০১৮ সালের বাজারদর অনুসারে একনেক ২০১৯ সালে ৫১০ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হল ও একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মজিদ সন্স’ ও শেখ হাসিনা হল নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘দ্যা বিল্ডার্স’।
শেখ হাসিনা হলের সাইট ইঞ্জিনিয়ার জাকির বলেন, কাজটা ২০১৮ সালের নির্ধারিত যে মূল্য ধরা হয়েছিল তা অনুযায়ী করা হচ্ছে। তখন সিমেন্ট, লোহার দাম অনেক কম ছিল। কিন্তু এখন সবকিছুর দাম অনেক বেশি। একারণে আমরা বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছি। আর্থিক সমস্যার কারণে আমরা চাইলেও দ্রুতগতিতে কাজ করতে পারছি না। তবে আশা করি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মাহবুব আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সংকট প্রবল। কিন্তু একটা প্রকল্পের কাজ ৫ বছর পার হলেও আলোর মুখ দেখেনি। হলগুলো দ্রুত তৈরি হয়ে গেলে, অনেক শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা হতো। আবার এ কাজ যতদিন শেষ হবে না, ততদিন রাস্তার অবস্থাও ঠিক হবে না। তাই শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাগবে এ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা উচিত।
কাজের ধীরগতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) খন্দকার শাহরিয়ার রহমান বলেন, ২০১৯ সালে এ প্রকল্পের ডিজাইন ও ড্রয়িং হাতে পাই। দ্রব্যমূল্যে বৃদ্ধির কারণে ২০১৪ সালের রেট শিডিউলে থাকা প্রকল্পের বাজেট ২০১৮ সালের রেট শিডিউলে করার জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। নতুন রেট শিডিউলে মন্ত্রণালয় থেকে বাজেট পাস হয় ২০২০ সালের শেষের দিকে। পরবর্তীতে নতুন রেট শিডিউলে টেন্ডার দেয়া হয়। এরমধ্যে দেশে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় কাজ কিছুদিন বন্ধ ছিল।
তিনি বলেন, কাজ শুরুর পর থেকে বেশ কিছুদিন কাজ ভালোই এগিয়েছিল। কিন্তু বেশ কিছু জটিলতার কারণে মাঝে কিছুদিন কাজ বন্ধ ছিল। শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হলের ৮০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে। আগামী বছরের শুরুতেই এ হলের শতভাগ কাজ সম্পন্ন হবে বলে আমরা আশাবাদী। শেখ হাসিনা হলের কাজ ৩৫ শতাংশ এবং একাডেমিক ভবনের কাজ ৪০ শতাংশ শেষ হয়েছে। আশা করি এ দুইটি কাজও সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।
প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। আর মেয়াদ বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ঠিকাদারদের কাজ শেষ করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষে দায়িত্বরত উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ঠিকাদারদের কাজের ধীরগতির বিষয়ে আমরা মন্ত্রণালয়কে বেশ কয়েকবার অবহিত করেছি। আমরা ঠিকাদারদের সাথে নিয়মিত মিটিং করে, কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছি। দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।

























