চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাখা ছাত্রলীগ বছরের শুরু থেকেই লাগামহীন হয়ে পড়েছে । তুচ্ছ ঘটনায় কথা-কাটাকাটি করে বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দেওয়ার অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। নিজেদের মধ্যকার আধিপত্য, অন্তর্কোন্দল, নেতৃত্বে দ্বন্দ্ব সংঘর্ষে লিপ্ত, এবং বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিপরীক্ষার সময় প্রশাসন থেকে উৎকোচ দাবিসহ নানা বিতর্কিত ও নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে শিরোনামে মধ্যমণি হয়েছে এ শাখা। একের পর এক অপকর্মের ফলে বিনষ্ট হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ। বহিষ্কার, সমঝোতা, আটক করেও টেনে ধরা যাচ্ছে না অস্থিরতার লাগাম। এতে করে সংগঠনের অর্জন, সাফল্য ম্লান হচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ছাত্রলীগকে নিয়ে তৈরি হচ্ছে নেতিবাচক মনোভাব।
তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, শাখা ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি ও নেতা-কর্মীদের কাউন্সিলিং করা হলে পুনরায় প্রাণের সঞ্চার হবে এই শাখাটিতে। অভিযোগ উঠেছে, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র সংগঠনগুলোর মাঝে এই কোন্দল চলে এলেও তা নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রশাসন অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত না করে সমঝোতাকেই সমস্যা সমাধানের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছে। ফলে শাস্তি না পাওয়ায় অপরাধীরা বারবার পার পেয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে আছে।
ছাত্রলীগ নেতাদের মন্তব্য, খুব দ্রুত নতুন কমিটি করা না হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংগঠিত এই সংঘর্ষ আরও বাড়বে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, ‘ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এখন নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ। কথা কাটাকাটিসহ বিভিন্ন কারণে প্রায় প্রতিদিনই তারা ছোটখাট মারামারিতে লিপ্ত হচ্ছে। আগে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে তাদের থামানো যেতো। কিন্তু এখন সেই দায়িত্ব নেবে কে? এখন তো কেউ কাউকে মানবে না।’
সর্বশেষ গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিজয় ও সিক্সটি নাইন গ্রুপের সংঘর্ষে দুই পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়। এছাড়া এর আগে গত ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে সিক্সটি নাইন ও বিজয় গ্রুপের সংঘাতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ছাত্রলীগের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। পাঁচদিনের এই সংঘর্ষে সবমিলিয়ে আহত হয়েছে অন্তত ৫০ জন। সংঘর্ষগুলো পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সামনেই হচ্ছে। প্রশাসনেরও নেই সক্রিয়তা। এমনকি সংঘর্ষ চলাকালীন প্রক্টরুয়াল বডির মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই সংঘর্ষগুলোতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সিক্সটি নাইন গ্রুপের নেতা ও সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম সাইদ, সিএফসি গ্রুপের নেতা ও সাবেক সহ-সভাপতি মির্জা খবির সাদাফ খান এবং বিজয় গ্রুপের নেতা সাখাওয়াত হোসেন।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, আগামী মাসে ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে বাড়তি সুবিধা ও কমিটি নিয়ে ছাত্রলীগের এই সংঘাত। সাংবাদিক মারধর ও দফায় দফায় সংঘর্ষের জেরে গত ২৪ সেপ্টেম্বর চবি ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর কয়েকমাস বিরতি দিয়ে গত ১১ ফেব্রুয়ারি আবার সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের ১১টি গ্রুপ গেল এক বছরে অর্ধশতাধিক বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে। সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের এমন সহিংস অবস্থানে শঙ্কায় রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। নেতারা এসব কোন্দলের জন্য কমিটির অনুপস্থিতি ও প্রশাসনের দুর্বলতাকে দায়ী করেছেন। আর প্রশাসনের দাবি, সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন তারা।
চবি ছাত্রলীগ ১১টি উপগ্রুপে বিভক্ত। গ্রুপগুলোর নাম -বিজয় সিএফসি, সিক্সটি নাইন, ভার্সিটি এক্সপ্রেস, কনকর্ড, এপিটাফ, বাংলার মুখ, রেড সিগন্যাল, উল্কা, একাকার ও স্বাধীনতা সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরের অনুসারী। গ্রুপগুলোর মধ্যে বিজয় ও সিএফসি শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।
ছাত্রলীগের বিজয় গ্রুপের নেতা আবু বকর চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছে চবি ছাত্রলীগ। এছাড়া সামনে ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে প্রশাসন থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিতে যাচ্ছে ছাত্রলীগ। আবার টেন্ডার বাণিজ্য তো আছেই।
আরেক গ্রুপ সিএফসির নেতা সাদাফ খান বলেন, একটা চক্র চাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে এবং ফোকাসে আসতে। এগুলোর মূলেই হল কমিটি। তবে আমরা চাই তৃণমূলের কর্মীদের মূল্যায়ন করা হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. নুরুল আজিম সিকদার বলেন, এখন যে সংঘাতটা খুব ভয়াবহ মনে হচ্ছে এটা অল্পতেই সমাধান হবে যদি কেন্দ্রীয় নেতারা হস্তক্ষেপ করে।

























