চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রলীগের উপ-গ্রুপ সিক্সটি নাইনের এক কর্মীর চোখ মুখ কালো কাপড়ে বেধে দিয়ে একই গ্রুপের ছাত্রলীগ কর্মী দ্বারা নির্যাতনের ঘটনা ফেইজবুকে পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে।
শনিবার (৩০ মার্চ) দুপুর ২টার দিকে ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ কর্মী কামাল মোহাম্মেদ মোস্তফা নিজের ফেইজবুক আইডি থেকে নির্যাতনের ঘটনা বর্ণনা দিয়ে অভিযুক্তদের কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে পোস্ট করে যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পোস্টে যাদের নাম উল্লেখ করেন তারা হল সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ১৮-১৯ সেশনের মাহফুজ আনাম ফারুক, একই সেশনের ইতিহাস বিভাগের আরিফ রাসেল এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের জোবায়ের আহমেদ।
ভুক্তভোগী কামাল মোহাম্মেদ মোস্তফা তার ফেইজবুক পোস্টে লিখেন, ফুটবল খেলোয়াড় মেসি রোনালদোকে নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। আমি যেহেতু তাদের জুনিয়র এবং একই ভগির রাজনীতিতে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী এই জন্য কথাকাটাকাটির তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাকে সরি বলার জন্য সেদিন সারাদিন চাপ দিতে থাকে, আমি পরবর্তীতে সরি বলতে রাজি হই। সরি বলতে রাত ৩ টার দিকে শাহজালাল হল এর টিভি রুমের কাছাকাছি যাওয়া মাত্রই ওরা আমার চোখ মুখ কালো কাপড়ে শক্ত করে বেধে দেয়, এরপর আরিফ রাসেল পিছন থেকে সজোরে লাথি মেরে আমাকে রুমে ঢুকায়। মাহফুজ আনাম ফারুক রড দিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। আর পিছন থেকে জোবায়ের আমাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধরে থাকে যেন নড়াচড়া করতে না পারি।
টানা ৪০-৫০ মিনিট মারধর করার পর ওরা একটা ব্রেক নেয়। তারপর ওরা বিভিন্ন পলিটিক্যাল ইকুয়েশন এর কথাবার্তা বলে।
আমি অর্ধমৃত অবস্থায় ওদের জিজ্ঞেস করি আমার অপরাধ কি টা কি বল। আরিফ রাসেল জবাব দেয়, ” তোর কোনো অপরাধ নাই তোর অভার পলিটিক্যাল এক্টিভিটিজ আমাদের পছন্দ না এজন্যই তোর সাথে এসব হচ্ছে। তোর আব্বু ইকবাল হোসেন টিপু (সাবেক চবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক)
রাজু মুন্সি (সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক) এবং তোর লিডার রাইয়ান আলম ( সাবেক সহ সম্পাদক) কে কল দে, দেখি তোর বাপেরা তোরে বাচাইতে পারে কিনা।”
আমি জবাব দিলাম কাওরে লাগব না, জাস্ট হাত আর চোখের বাধন টা খুলে দে, তারপর ওয়ান ভার্সেস ওয়ান খেলব। বলার সাথে সাথে মাহফুজ আনাম ফারুক রামদা’ দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এরপর কি হয়ছে আমি আর বলতে পারিনা।
ঘটনাটি ঘটে ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে। এত মাস পর পোস্ট করা কারণ জানতে চাইলে ছাত্রলীগ কর্মী বলেন আসলে ওই ঘটনার পর থেকে আমি ফিজিক্যালি এবং মেন্টালি বাজেভাবে ব্রেকডাউন ফেজ পার করতেছি। মেরুদণ্ড মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি যেটা এখন পর্যন্ত রিকভারি করতে পারিনি।
তিনি আরও জানান আমাকে নির্যাতন করার সময় উল্লেখিত তিনজন ছাড়াও আরও ১৫ থেকে ২০ জন ছিল আমার চোখ আর মুখ কালো কাপড়ে বাধা ছিলো বিধায় দেখতে পাইনি। উল্লেখিত তিনজন আমাকে নির্যাতনের সময় কথা বলায় আমি চিনতে পারি বাকিরা কথা না বলায় চিনতে পারিনি।
অভিযুক্ত জোবায়ের আহমেদ বলেন, যে এ বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে ও আমাদেরই হলের ছোট ভাই।
আর এমন একটা ভুল অভিযোগ দিছে সেটা হচ্ছে আমি নাকি ওকে পিছন থেকে বেঁধে রাখছি। এটা একদম পুরোপুরি ভুল কথা। আমি ওকে কোন টাচ করি নাই।
তবে এটা সত্যি যে পলিটিক্যাল কিছু ছেলেপেলে ওকে চড় থাপ্পর দিছে। কিন্তু কেউ ওকে এক্সট্রিম লেভেলের কিছু করে নাই । আর কেউ কখনো কি নিজের বগির ছেলেকে রামদা দিয়ে কোপায়? এ ধরনের অভিযোগ আনার জন্য ওর পিছনে থেকে ওকে কেউ উস্কায় দিচ্ছে। রামদা দিয়ে কোপানোর কথাটা একদম ভিত্তিহীন।
বাকি দুইজন অভিযুক্ত মাহফুজ আনাম ফারুক ও আরিফ রাসেলের মুঠো ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোন সাড়া মেলেনি।
শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও সিক্সটি নাইন গ্রুপের নেতা সাইদুল ইসলাম সাঈদের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা দীর্ঘদিন আগের কথা। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি ছিল। যদি সত্যিকার অর্থে কোন কিছু ঘটে থাকত তাহলে সেটা দেখার বিষয় ছিল তৎকালীন কমিটির। বিষয়টি এতদিন সামনে আসেনি তার মানে এর পেছনে নিশ্চয়ই কেউ ইন্ধন যোগাচ্ছে। তবে কামাল যেভাবে বিষয়টিকে প্রচার করেছেন আসলে বিষয়টি ওরকম কিছু হয়নি। তবে আমরা এটা নিয়ে জানার চেষ্টা করছি।
তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এই ব্যাপারে এখনো কোন কিছু অবগত নয়। এখন যারা দায়িত্বে আছে তারা বলতে পারবে। তবে আমি খোঁজখবর নিচ্ছি।

























