০৩:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রংপুরে আলু চাষ বৃদ্ধি পেলেও ফলন কমেছে

বেশী দামে আলু বিক্রয় করার আশায় অপরিপক্ক আলু ক্ষেত থেকে তোলার ফলে ফলন কম হয়েছে। তবে কৃষকগণ গত কোন বছরই এত বেশী দামে আলু বিক্রয় করতে পারেনি। রংপুরে গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকেই ঊর্ধ্বমুখী ছিল আলুর দাম। মূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ার এক পর্যায়ে সরকার পণ্যটির দাম নির্ধারণ ও আমদানির অনুমতি দেয়। সরকারের সেই উদ্যোগ কোন কাজে আসেনি। যার প্রভাব পড়েছে চলতি মৌসুমে। দাম বেশি থাকায় লাভের আশায় পরিপক্ক হওয়ার
আগেই ক্ষেত থেকে আলু তুলে ফেলেছে অনেক কৃষক। এতে পণ্যটির উৎপাদন কমেছে। চলতি মৌসুমে প্রতি হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদন হয়েছে ২৮ দশমিক ৬০ টন। যেখানে গত বছর প্রতি হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছিল ৩০ দশমিক ১০ টন। প্রতি হেক্টরে ১ দশমিক ৫০ টন উৎপাদন কমেছে। রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ মৌসুমে রংপুর জেলায় ৫৩ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে, যা
গত বছরের চেয়ে ৫৯৫ হেক্টর বেশি। আলু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ লক্ষ ১১ হাজার ৩৫৪ টন। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের মার্চে আলুর দাম ছিল কেজি প্রতি ১৫ টাকা। চলতি বছর বিক্রয় হচ্ছে ৩৪ থেকে ৩৬ টাকায়। যদিও রংপুর শহরে খুচরা পর্যায়ে আলুর কেজি
ছিল ৪০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলেন, চলতি বছর আলুর চাষ বেড়েছে। তবে মৌসুমের শুরুতে দাম ছিল
অস্বাভাবিক। গত বছর আলুর চাহিদা ছিল বেশি। সে অনুযায়ী জোগান ছিল না। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল বাড়তি পরিবহন খরচ ও হিমাগার ভাড়া। ফলে গত বছরই আলুর দাম বাড়ে। এ সুযোগে চলতি মৌসুম শুরুর আগে কৃষক দাম বেশি পাওয়ার আশায় জমি থেকে অপরিপক্ক আলু উত্তোলন করেছেন।
এতে আকার ছোট এবং ওজন কম হয়েছে। প্রভাব পড়েছে রফতানি বাণিজ্যেও। রংপুর থেকে গত বছর প্রায় ১১ হাজার ৮০০ টন আলু রফতানি হয়েছিল। চলতি বছর রফতানি হয়েছে ১৪২ টন। কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রতি টন আলু রফতানি করতে হচ্ছে ৩৩০-৩৫০ ডলারে। যেখানে পাকিস্তানন প্রতি টন আলু রফতানি করে ২৩০-২৫০ ডলারে। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, রংপুরের নব্দীগঞ্জ, মীরবাগ, কাউনিয়া, পাওটানা, হুলাসু, দেওতি, বড়দরগা, রঘু, মীরগঞ্জ, মাহিগঞ্জ,
সাহেবগঞ্জ, দমদমা, ঠাকুরবাড়ী, মিঠাপুকুর এবং বৈরীগঞ্জে প্রচুর আলু উৎপাদন হয়। ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে আলু ক্রয় কমিশনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করেন। ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এসব এলাকা থেকে প্রতিদিনি ২০-২৫ ট্রাক আলু শিপমেন্টের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠানো হয়। এসব আলু সাধারণত শ্রীলংকা, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই এবং সিঙ্গাপুরে রফতানি হয়। রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়,
গত বছর রংপুরের উৎপাদিত প্রায় ১১ হাজার ৮০০ টন আলু শ্রীলংকা, নেপাল, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ আরো কয়েকটি দেশে রফতানি হয়েছে। এবার ১৪২ টন আলু রফতানি হয়েছে মালয়েশিয়া ও শ্রীলংকায়। রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুষ্করণী এলাকার আলু ব্যবসায়ী মোতাহার হোসেন বলেন, বিভিন্ন রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান আলু চাচ্ছে। কিন্তু যে দাম দিতে চাচ্ছে, তা দিয়ে কৃষকের কাছে থেকে আলু ক্রয় করতে পারছি না। জলতি বছর মার্চের শুরুতে ২৮ টন আলু সরবরাহ করা হয়। তবে আলুর বাজার বর্তমান সময়ের মতো ঊর্ধ্বমুখী থাকলে রংপুর থেকে রফতানি করা সম্ভব হবে না। এবার গ্রানুলা জাতের আলু কৃষক পর্যায়ে ২৭ টাকা কেজিতে কওয় করা হচ্ছে। গত বছর ওই আলু ক্রয় করা হয়েছিল ১৭ টাকারও কমে। রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান বলেন, দেরিতে শীত আসা এবং কম সময়ে তীব্র ঠান্ডা অনুভূত হওয়ায় আলুর টিউবারের সংখ্যা কম ও আকারে ছোট। এ কারণে আলু চাষের জমি বাড়লেও ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা ছিল। বর্তমানে ৯৮ শতাংশ অর্থাৎ ৫২ হাজার হেক্টর জমির আলু উত্তোলন হয়েছে। প্রতি হেক্টরে আলু উৎপাদন হয়েছে ২৮ দশমিক ৬০ টন। যেখানে গত বছর প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হয়েছিল ৩০ দশমিক ১০ টন।

জনপ্রিয় সংবাদ

স্মৃতিসৌধে তারেক রহমান

রংপুরে আলু চাষ বৃদ্ধি পেলেও ফলন কমেছে

আপডেট সময় : ০৩:৫৮:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ এপ্রিল ২০২৪

বেশী দামে আলু বিক্রয় করার আশায় অপরিপক্ক আলু ক্ষেত থেকে তোলার ফলে ফলন কম হয়েছে। তবে কৃষকগণ গত কোন বছরই এত বেশী দামে আলু বিক্রয় করতে পারেনি। রংপুরে গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকেই ঊর্ধ্বমুখী ছিল আলুর দাম। মূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ার এক পর্যায়ে সরকার পণ্যটির দাম নির্ধারণ ও আমদানির অনুমতি দেয়। সরকারের সেই উদ্যোগ কোন কাজে আসেনি। যার প্রভাব পড়েছে চলতি মৌসুমে। দাম বেশি থাকায় লাভের আশায় পরিপক্ক হওয়ার
আগেই ক্ষেত থেকে আলু তুলে ফেলেছে অনেক কৃষক। এতে পণ্যটির উৎপাদন কমেছে। চলতি মৌসুমে প্রতি হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদন হয়েছে ২৮ দশমিক ৬০ টন। যেখানে গত বছর প্রতি হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছিল ৩০ দশমিক ১০ টন। প্রতি হেক্টরে ১ দশমিক ৫০ টন উৎপাদন কমেছে। রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ মৌসুমে রংপুর জেলায় ৫৩ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে, যা
গত বছরের চেয়ে ৫৯৫ হেক্টর বেশি। আলু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ লক্ষ ১১ হাজার ৩৫৪ টন। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের মার্চে আলুর দাম ছিল কেজি প্রতি ১৫ টাকা। চলতি বছর বিক্রয় হচ্ছে ৩৪ থেকে ৩৬ টাকায়। যদিও রংপুর শহরে খুচরা পর্যায়ে আলুর কেজি
ছিল ৪০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলেন, চলতি বছর আলুর চাষ বেড়েছে। তবে মৌসুমের শুরুতে দাম ছিল
অস্বাভাবিক। গত বছর আলুর চাহিদা ছিল বেশি। সে অনুযায়ী জোগান ছিল না। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল বাড়তি পরিবহন খরচ ও হিমাগার ভাড়া। ফলে গত বছরই আলুর দাম বাড়ে। এ সুযোগে চলতি মৌসুম শুরুর আগে কৃষক দাম বেশি পাওয়ার আশায় জমি থেকে অপরিপক্ক আলু উত্তোলন করেছেন।
এতে আকার ছোট এবং ওজন কম হয়েছে। প্রভাব পড়েছে রফতানি বাণিজ্যেও। রংপুর থেকে গত বছর প্রায় ১১ হাজার ৮০০ টন আলু রফতানি হয়েছিল। চলতি বছর রফতানি হয়েছে ১৪২ টন। কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রতি টন আলু রফতানি করতে হচ্ছে ৩৩০-৩৫০ ডলারে। যেখানে পাকিস্তানন প্রতি টন আলু রফতানি করে ২৩০-২৫০ ডলারে। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, রংপুরের নব্দীগঞ্জ, মীরবাগ, কাউনিয়া, পাওটানা, হুলাসু, দেওতি, বড়দরগা, রঘু, মীরগঞ্জ, মাহিগঞ্জ,
সাহেবগঞ্জ, দমদমা, ঠাকুরবাড়ী, মিঠাপুকুর এবং বৈরীগঞ্জে প্রচুর আলু উৎপাদন হয়। ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে আলু ক্রয় কমিশনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করেন। ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এসব এলাকা থেকে প্রতিদিনি ২০-২৫ ট্রাক আলু শিপমেন্টের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠানো হয়। এসব আলু সাধারণত শ্রীলংকা, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই এবং সিঙ্গাপুরে রফতানি হয়। রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়,
গত বছর রংপুরের উৎপাদিত প্রায় ১১ হাজার ৮০০ টন আলু শ্রীলংকা, নেপাল, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ আরো কয়েকটি দেশে রফতানি হয়েছে। এবার ১৪২ টন আলু রফতানি হয়েছে মালয়েশিয়া ও শ্রীলংকায়। রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুষ্করণী এলাকার আলু ব্যবসায়ী মোতাহার হোসেন বলেন, বিভিন্ন রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান আলু চাচ্ছে। কিন্তু যে দাম দিতে চাচ্ছে, তা দিয়ে কৃষকের কাছে থেকে আলু ক্রয় করতে পারছি না। জলতি বছর মার্চের শুরুতে ২৮ টন আলু সরবরাহ করা হয়। তবে আলুর বাজার বর্তমান সময়ের মতো ঊর্ধ্বমুখী থাকলে রংপুর থেকে রফতানি করা সম্ভব হবে না। এবার গ্রানুলা জাতের আলু কৃষক পর্যায়ে ২৭ টাকা কেজিতে কওয় করা হচ্ছে। গত বছর ওই আলু ক্রয় করা হয়েছিল ১৭ টাকারও কমে। রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান বলেন, দেরিতে শীত আসা এবং কম সময়ে তীব্র ঠান্ডা অনুভূত হওয়ায় আলুর টিউবারের সংখ্যা কম ও আকারে ছোট। এ কারণে আলু চাষের জমি বাড়লেও ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা ছিল। বর্তমানে ৯৮ শতাংশ অর্থাৎ ৫২ হাজার হেক্টর জমির আলু উত্তোলন হয়েছে। প্রতি হেক্টরে আলু উৎপাদন হয়েছে ২৮ দশমিক ৬০ টন। যেখানে গত বছর প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হয়েছিল ৩০ দশমিক ১০ টন।