পরিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে রংপুর বিভাগে পশুর চাহিদা রয়েছে ১৩ লক্ষ ১৮ হাজার ১১৭টি। তবে কোরবানির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ২১ লক্ষ ৫২ হাজার ৩১৯টি পশু। চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকবে আরও আট লক্ষের বেশি পশু। রংপুর বিভাগের আট জেলার প্রায় ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ৩৬২ জন খামারির মাধ্যমে পশুগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে বলে দাবি বিভাগীয় প্রাণিস¤পদ অধিদপ্তরের। তবে খামারিরা বলেন, পশুখাদ্যের দাম বাড়ায় গত বছরের তুলনায় এবার বাড়তি দামে কোরবানির পশু ক্রয় করতে হবে ক্রেতাকে। রংপুর বিভাগীয় প্রাণিস¤পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধা জেলায় ১ লক্ষ ২৩ হাজার ৫১টি পশুর চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে পশু প্রস্তুত রয়েছে ১ লক্ষ ৯০ হাজার ৪২১টি। কুড়িগ্রামে ২ লক্ষ ১৬ হাজার ৫৩৩টি পশুর চাহিদার বিপরীতে প্রস্তুত রয়েছে ৩ লক্ষ ৬৪ হাজার ৭৫১টি। নীলফামারীতে ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ১০৯টি পশুর চাহিদার বিপরীতে পশু রয়েছে ২ লক্ষ ৭৬ হাজার ২০১টি। লালমনিরহাটে ১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৬৩১টি পশুর চাহিদার বিপরীতে খামারে রয়েছে ২ লক্ষ ৪০ হাজার ৫০০টি। দিনাজপুরে ২ লক্ষ ৬৪ হাজার ৫৭৬টি পশুর চাহিদার বিপরীতে প্রস্তুত রয়েছে ৩ লক্ষ ৯৮ হাজার ৩০টি। ঠাকুরগাঁওয়ে ৯১ হাজার ৭৯৫টি পশুর চাহিদা রয়েছে। সেখানে খামারে কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ১ লক্ষ৩২ হাজার ৫৬০টি। প গড়ে ১ লক্ষ ২২ হাজার ৭৮টি পশুর চাহিদার বিপরীতে প্রস্তুত রয়েছে ১ লক্ষ ৯০ হাজার ৩৭১টি এবং রংপুর জেলায় ২ লক্ষ ২০ হাজার ৩৪৪টি পশুর চাহিদার বিপরীতে বিভিন্ন খামারে পশু রয়েছে ৩ লক্ষ ৫৯ হাজার ৪৮৫টি। প গড় সদর উপজেলার খামারি রেজাউল করিম বলেন, এখানে সবসময় ভারতীয় গরু পাওয়া যায়। কিন্তু সেগুলো আকারে বড় এবং দাম লক্ষ টাকার ওপরে। ঈদে মানুষের চাহিদা থাকে ছোট গরুর। এলাকার মানুষের চাহিদা কথা বিবেচনা করে আমি ২০টি গরু পালন করা হচ্ছে। প্রতিটি গরুর পেছনে খাবারসহ প্রতিদিন ২২০ টাকা খরচ হয়েছে। পশু খাদ্যের দাম বাড়াসহ অন্যান্য কারণে এবার প্রতিটি গরুতে ৩-৫ হাজার টাকা বেশি লাগবে ক্রেতাদের। প্রতি বছর ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় প্রাতিষ্ঠানিক খামারে গরু মোটাতাজাকরণ করা হয়। পাশাপাশি প্রান্তিক পর্যায়েও চরা লে গরু লালন-পালন করা হচ্ছে। তবে ঈদের আগে বন্যার আশঙ্কা না থাকায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা এবং লালমনিরহাট জেলার চর এলাকার খামারিরা চিন্তামুক্ত। খাবার এবং পশু রাখার স্থানের অভাবে কম দামে বিক্রয়ের বিষয় অনুভব করছেন না প্রান্তিক খামারিরা। ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন রংপুরের সভাপতি মো. লতিফুর রহমান মিলন বলেন, পশুখাদ্যসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বদ্ধি অব্যাহত থাকায় রংপুর বিভাগে অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। আবার অনেক খামার বন্ধের পথে। যারা সঠিক আছে তাদের অনেক সংগ্রাম করতে হচ্ছে। এবার গরুর মাংসের কেজি ৭০০-৭৫০ টাকার কমে বিক্রয় করলে খামারিদের লোকসান হবে। প্রতি বছরই সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন হাটে ভারতীয় গরু আসার আশঙ্কা থাকে। এবারো যদি ব্যাপক হারে ভারতীয় গরু আসে তাহলে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। পাশাপাশি গরুর রোগবালাই বাড়বে। রংপুর বিভাগীয় প্রাণিস¤পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, কোরবানি ঈদে চাহিদা পূরণ করেও উদ্বৃত্ত পশু থাকবে আট লক্ষেরও বেশি। ঈদে রংপুর, রাজশাহী এবং খুলনা বিভাগ থেকে সাধারণত উদ্বৃত্ত পশু বিভিন্ন স্থানে যায়। এর মধ্যে রংপুর অন্যতম। হাটগুলোয় যাতে অসুস্থ গরু বিক্রয় করতে না পারে, সেজন্য বিভাগের বিভিন্ন হাটে মেডিকেল টিম কাজ করছে। পাশাপাশি হাটে আসা কোনো গরু অসুস্থ হলে মেডিকেল টিম চিকিৎসা দেবে। মোটাতাজাকরণ খামার বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে খামার বন্ধ হতে পারে। তবে পেশা পরিবর্তন খামার বন্ধের একটি অন্যতম কারণ হতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিক মোটাতাজাকরণ খামারগুলোর চেয়ে বেশি গরু পালন করা হয় প্রান্তিক পর্যায়ে। প্রতি বছর এসব খামারির সংখ্যা বাড়ছে। তাদের লোকসান হয় না বললেই চলে।


























