রংপুরে হাঁড়িভাঙা আম রপ্তানি শুরু হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ২০০ কেজি আম জার্মানিতে রপ্তানি করা হয়েছে। জার্মানি দিয়ে শুরু হলেও অচিরে তা বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশা ব্যক্ত করেছে কৃষি বিভাগ। তবে পরবর্তীতে কী পরিমাণ রপ্তানি হবে তা নির্ভর করছে ওই দেশের ক্রেতাদের পছন্দ ও চাহিদার ওপর। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২১ জুন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠে জিআই পণ্য হাঁড়িভাঙা আম মেলা ও প্রদর্শনী হয়। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ। সেখানে তিনি হাঁড়িভাঙা আম রপ্তানির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। মূলত মন্ত্রীর আগ্রহে ঢাকার গ্রিন প্লোবাল অ্যাগ্রো লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার কাওসার আহমেদ স্যা¤পল হিসেবে ২০০ কেজি হাঁড়িভাঙা আম জার্মানিতে পাঠিয়েছেন।
মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইফুল আবেদীন বলেন, গ্রিন গ্লোবাল অ্যাগ্রো লিমিটেড নিয়মিত বিভিন্ন জাতের আম রপ্তানি করে আসছে। হাঁড়িভাঙা আমে মেলা ও প্রদর্শনী উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুস শহীদের আগ্রহে প্রতিষ্ঠানটি জার্মানিতে আম রপ্তানি করেছে। জার্মানি আরও আম নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জের মো. খলিলুর রহমানের বাগান থেকে ওই আম সরবরাহ করা হয়। তিনি আরও বলেন, রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষি অফিস প্রকল্প নিয়েছে। পাঁচ একর আয়তনের বাগান মালিককে উৎকৃষ্ট আম উৎপাদনে প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি সার ও কীটনাশক সরবরাহ করা হয়েছে। এ ছাড়া কৃষি অফিস থেকে আম বাগানে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। বর্তমানে হাঁড়িভাঙ্গা আম নেপাল ও থাইল্যান্ডে রপ্তানির চেষ্টা চালানো হচ্ছে। হাঁড়িভাঙা জিআই পণ্য হয়েছে তা বেশি বেশি করে প্রচার করতে হবে। আম চাষিদের ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে কৃষি অফিস কাজ করছে বলেও জানান সাইফুল আবেদীন। জানা যায়, গত পাঁচ বছরের মধ্যে রংপুরের জনপ্রিয় হাঁড়িভাঙা আম সরকারের রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় বিভিন্ন দেশে উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে ভারত, পাকিস্তান ও ব্রুনাই রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতার কারণে হাঁড়িভাঙা আম দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও সুমান ছড়িয়েছে বলে মনে করছেন রংপুরের আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা।
রংপুরে প্রতি বছর জুনের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে বাজারে পাওয়া যায় স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় আঁশহীন সুমিষ্ট হাঁড়িভাঙা আম। শুরুর দিকে দাম কিছুটা চড়া হলেও হাঁড়িভাঙার স্বাদ নিতে হাট-বাজারে কমতি নেই ক্রেতাদের। বর্তমানে আকারভেদে প্রতি মণ হাঁড়িভাঙা আম ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। এ বছর প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙার ফলন হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে দুইশত থেকে সোয়া দুইশত কোটি টাকার ওপরে হাঁড়িভাঙা আম বিক্রয় হবে বলে জানিয়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। হাঁড়িভাঙা আমের বৈশিষ্ট্য হলো এটি আঁশবিহীন, মিষ্টি ও সুস্বাদু। আঁটিও খুব ছোট। ছোবলা পাতলা। প্রতিটি আমের ওজন হয় ২০০-৩০০ গ্রাম। মূলত জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে হাঁড়িভাঙা আম পরিপক্বতা পায়। বড় সাইজের এক মণ আম পাইকারি বিক্রয় হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায়। মাঝারি সাইজের আম ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা। আর ছোট সাইজের এক মণ আম বিক্রয় হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা। ভালো মানের হাঁড়িভাঙা আম চেনার উপায় প্রসঙ্গে খোড়াগাছ ইউনিয়নের তেকানি গ্রামের আমচাষি আমজাদ হোসেন বলেন, হাঁড়িভাঙা আমের ওপরটা যত কালচে, ভেতরে ততই সুন্দর। এর স্বাদ ও মিষ্টি লোভনীয়। দেখতে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন আম বাগান কিনে নেওয়া ব্যবসায়ীরা নিজেদের লাভের জন্য কীটনাশক ও ¯েপ্র ব্যবহার করে থাকেন। এতে আম দেখতে ভালো, সুন্দর ও পাকা রঙের মনে হয়। হাঁড়িভাঙা আমের বৈশিষ্ট্য হলো এটি আঁশবিহীন, মিষ্টি ও সুস্বাদু। এ আমের আঁটিও খুব ছোট। ছাল পাতলা। প্রতিটি আমের ওজন হয় ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম। মৌসুমের শুরুতে হাঁড়িভাঙার চাহিদা বেশি থাকায় এর দাম কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে প্রতি কেজি হাঁড়িভাঙা আকারভেদে ৬০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে পারে। এদিকে বিষমুক্ত ও অতি সুমিষ্ট আশঁহীন হাঁড়িভাঙা আমের চাহিদা বাড়ছে দিন দিন। কয়েক বছর ধরে ফলন ভালো হওয়ায় বেড়ে চলেছে আম উৎপাদনের পরিধিও।
রংপুর সদর, মিঠাপুকুর ও বদরগঞ্জ উপজেলার বিস্তৃত এলাকার ফসলি জমি, বাগানসহ উঁচু-নিচু ও পরিত্যক্ত জমিতে চাষ হচ্ছে এই আম। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, চলতি বছর জেলায় ৩ হাজার ৩৫৯ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙার চাষ করা হয়েছে ১ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে। এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৭১০ মেট্রিক টন। শুরুর দিকে প্রতি কেজি আম ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রয় হয়ে থাকে। তবে আমের আকার ও পরিস্থিতির অনেক সময় দামের হেরফের হয়। রংপুর অ লে হাঁড়িভাঙা আমের ফলন বেশি হলেও ফজলি, সাদা ল্যাংড়া, কালা ল্যাংড়া, মিশ্রিভোগ, গোপালভোগ, আম্রপালিসহ আরও নানা প্রজাতির আম উৎপাদন হয়ে আসছে। এসব আমের ভিড়ে এখন সবচেয়ে বেশি চাহিদা হাঁড়িভাঙার। চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি হাঁড়িভাঙা আম রংপুরের ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে।


























