০২:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

একজন দাবাড়ু জিয়া ও অন্ধকার ভবিষ্যৎ

দাবার বোর্ডেই মারা গেলেন জিয়াউর রহমান। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে আরেক গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীবের বিপক্ষে খেলার সময়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিবার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়া জিয়া। সংবাদমাধ্যেমে ৫০ বছর বয়সেই অকালে প্রয়াত হওয়া এই মেধাবী মানুষটিকে নিয়ে রোমান্টিক সব গল্প লেখা হচ্ছে। ভালোবাসার দাবা বোর্ডে মারা যাওয়া নিয়ে লেখা হচ্ছে শোকগাঁথা। যদিও এত বড় মাপের একজন খেলোয়াড়, যিনি পুরো দক্ষিণ এশিয়াতেই দাবাড়ু ও দাবাশিক্ষক হিসেবে দারুণ শ্রদ্ধার ছিলেন, তার কীর্তি নিয়ে সেই রকম মাতামাতি নেই।
জিয়া যখন বোর্ডে লুটিয়ে পড়েন তাকে হাসপাতালে বহন করেন প্রতিপক্ষ রাজীবের গাড়ি। জিয়ার স্ত্রী ও তার তরুণ দাবাড়ু পুত্র তাজওয়ারসহ হাসপাতালে আসার পর জানা যায় তিনি মারা গেছেন। প্রশ্ন জাগতে পারে, প্রায় চার যুগ ধরে দাবায় দেশসেরা হওয়ার পরও কি উনার নিজের গাড়ি কেনার সামর্থ্য ছিল না? বহুদিন ধরে দাবা জগতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই জানালেন, মূলত দাবা খেলা ও শেখানোকেই পেশা হিসেবে নেয়া জিয়ার ঢাকা শহরে ফ্ল্যাট থাকলেও গাড়ি ছিল না। জিয়া মোটামুটি সচ্ছল পরিবারে বড় হয়েছেন, প্রকৌশলী বাবা বিদেশে চাকরি করতেন। নিজে দেশের সেরা সব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছেন। তবুও উনার মেধাবী ছেলে তাজওয়ারের ভবিষ্যৎ নিয়ে উনি চিন্তিত ছিলেন বলে জানা গেছে। একজীবনে দেশসেরা, দাবাকেই সাধনা বানানো পিতা হয়তো পুত্রের একই রাস্তায় যাওয়া নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। আর এখন তো এই সম্ভাবনাময় তরুণের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তায় পড়ল।

দাবা বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয় খেলা। বুদ্ধির খেলা বলে সমাজে এর শ্রদ্ধা আছে। অনেক অভিভাবক বিশ্বাস করেন দাবা খেললে সন্তানদের মেধা বিকাশ হয়। সামাজিক খেলা হিসেবেও দাবা প্রতিষ্ঠিত। বিশ্বব্যাপী দাবা অর্থনীতি একদম কমও না। ভারত, চীন, রাশিয়ার মতো দেশে শিশুকাল থেকে দাবাড়ুদের পরিচর্যা করা হয়। এমন একটা ব্যবস্থা করা হয় যাতে, দাবায় যারা ভালো করে তাদের জীবিকার জন্য তেমন কষ্ট করতে না হয়। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় জিয়াউর রহমান যেন সাক্ষাৎ প্রমাণ যে এই দেশে দাবা খেলার কোন ‘প্রতিষ্ঠা’ নাই। কেবল যে সেদিন সতীর্থের গাড়িতে চেপে যাওয়া না, একইসাথে প্রশ্ন আসে, দেশের সর্বোচ্চ টুর্নামেন্টে কি দাবা ফেডারেশনের কোনো মেডিকেল প্রস্তুতি ছিল? এই রকম জরুরি অবস্থার জন্য পরিবহন ব্যবস্থা? দাবা সংশ্লিষ্টরা জানান, ফেডারেশনের পরিবেশ খেলার উপযোগী না, বহু বছর ধরে ক্রীড়া পরিষদে একটা ভালো স্থানের জন্য চাপানউতোর চলছে। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হলে সেগুলো খেলা হয় হোটেল ভাড়া করে। সেগুলোও মূলত স্পন্সরদের টাকায়।

পাশের দেশ ভারতেই দাবার দারুণ জোয়ার। বিশ্বনাথন আনন্দের পর নতুন নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাওয়ার সম্ভাবনায় ভারত। পুরুষ তো বটেই, নারীদের মধ্যেও। অথচ এই উপমহাদেশে প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার হয়েছিলেন নিয়াজ মোর্শেদ। সেই সাফল্যে দেশবাসী উত্তাল হলেও তা কাঠামোগতভাবে আগাতে পারেনি। জিয়া অনেকটা সন্ন্যাসীদের মতো সাধনায় খেলে গেছেন জীবনের শেষদিন পর্যন্ত। যেভাবে খুন হন ঢাকা কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী জোবায়েরযেভাবে খুন হন ঢাকা কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী জোবায়ের। কিন্তু আধুনিক যুগে এই ব্যাপারটা তো অতিমাত্রায় অস্বাভাবিক। যতই আবেগ থাকুক, জীবনের বাস্তবতায় এখানে বেশির ভাগ মানুষ পরাজিত হয়। আর এখনকার দিনে দুনিয়ার বেশির ভাগ দেশ যেখানে উন্নত প্রশিক্ষণ আর বিপুল সমর্থনে উৎকর্ষের চূড়ায় যাচ্ছে সেই দুনিয়ায় একক চেষ্টায় খুব বেশিদূর যাওয়া সম্ভবও না। বিশ্বসেরাদের কাতারে তো নয়ই।

সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তনও বড় প্রতিবন্ধকতা। নব উদারতাবাদের এই দুনিয়ায় সামাজিক শাসন বা হৃদ্যতা এখন নেই। আগের দিনে, পণ্ডিতমশাই কুকুরের এক ঠ্যাং-এর সমান বেতন পেলেও বিপুল একটা সামাজিক সম্মান ছিল। পাড়ার সেরা ফুটবলার বা দাবাড়ুদের প্রতি ছিল দারুণ একটা শ্রদ্ধা। তরুণরা তাদের রোলমডেল মানত। এখন টাকা আর ক্ষমতাই সব। মসজিদ কমিটির সভাপতি হতে হলেও এখন একমাত্র বিবেচ্য বিষয় অর্থসম্পদ আর রাজনৈতিক ক্ষমতা, বাকিসব প্রতিষ্ঠানের কথা তো বলাই বাহুল্য। বাজার আর রাষ্ট্রের কাছে ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা সমাজ এখন আর আবেগের প্রশ্রয়দাতা হতে পারে না। কিন্তু সেই দায়িত্ব তো রাষ্ট্রের কাছে বর্তায়। বেনেডিক্ট এন্ডারসন আমাদের ইমাজিন্ড কমিউনিটির ধারণা দেন। তিনি তত্ত্বগতভাবে প্রমাণ করেন যে, রাষ্ট্র আসলে গঠিত হয় কল্পনায়। এই যে কোটি কোটি মানুষ একই রাষ্ট্রের পতাকাতলে জড়ো হয়, এদের মূল শক্তি হচ্ছে পরস্পরকে একটা কাল্পনিক সম্প্রদায়ের অংশ ভাবা, যাদের বেশির ভাগই তার কাছে অচেনা। কিন্তু এই অচেনা মানুষেরা একক অহংকার এবং আত্মমর্যাদার ভিত্তিতে এক হয়ে যায়। আধুনিক দুনিয়ায় খেলাধুলা সেই সিমেন্টের কাজ করে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের পতাকাবহনকারী কোনো ব্যক্তি বা দল ভালো করলে গোটা দেশের জন্য তা একটা উদ্যম বয়ে আনে। রাষ্ট্রের কাজ এই উদ্যমতাকে ধরে রাখার চেষ্টা করা। নিশ্চিত করা, যাতে একজন জিয়াউর রহমান লাখো লাখো তরুণের রোল মডেল হয়ে উঠেন। এই কাজটা করতে না পারলে কেবল জিডিপির প্রবৃদ্ধি, আর্থিক উন্নয়নের গল্প দিয়ে জাতি গঠিত হয় না।

একই কথা শিক্ষাদীক্ষা, আবিষ্কার বা অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। দেশের লাখো লাখো কিশোরের মনে যদি একজন দারুণ শিক্ষাবিদ বা বিজ্ঞানীকে রোল মডেল হিসেবে উপস্থিত করা যায়, তবে তারা একটা দারুণ স্বপ্নের পেছনে ছোটার জ্বালানি পায়। দেশের এগিয়ে চলায় এই উদ্যাম অমূল্য। কিন্তু যেই রাষ্ট্র সেই স্বপ্ন মেরে ফেলে সে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। যে রাষ্ট্রের মেধাবী তরুণদের মূল আকাক্সক্ষা হয়ে দাঁড়ায় কোনোমতে দেশ ছেড়ে বাইরের দেশে গিয়ে নিরাপত্তা, জীবিকা আর নিজের আবেগের স্বপ্নপূরণ, সে দেশের ভবিষ্যৎ নিশ্চিতভাবেই শঙ্কার মধ্যে থাকে। একজন দাবাসাধক জিয়াউর রহমানের দাবা বোর্ডে লুটিয়ে পড়া মৃত্যু হয়তোবা একটা দারুণ রোমান্টিক অনুভূতি দিতে পারে; কিন্তু সেই রোমান্টিকতা আমাদের ভবিষ্যতের নিকষ কালো অন্ধকারকে চাপা দিতে পারবে না।

জনপ্রিয় সংবাদ

একনেক সভায় ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকার ২২ প্রকল্প অনুমোদন

একজন দাবাড়ু জিয়া ও অন্ধকার ভবিষ্যৎ

আপডেট সময় : ০৭:০৫:৩৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০২৪

দাবার বোর্ডেই মারা গেলেন জিয়াউর রহমান। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে আরেক গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীবের বিপক্ষে খেলার সময়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিবার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়া জিয়া। সংবাদমাধ্যেমে ৫০ বছর বয়সেই অকালে প্রয়াত হওয়া এই মেধাবী মানুষটিকে নিয়ে রোমান্টিক সব গল্প লেখা হচ্ছে। ভালোবাসার দাবা বোর্ডে মারা যাওয়া নিয়ে লেখা হচ্ছে শোকগাঁথা। যদিও এত বড় মাপের একজন খেলোয়াড়, যিনি পুরো দক্ষিণ এশিয়াতেই দাবাড়ু ও দাবাশিক্ষক হিসেবে দারুণ শ্রদ্ধার ছিলেন, তার কীর্তি নিয়ে সেই রকম মাতামাতি নেই।
জিয়া যখন বোর্ডে লুটিয়ে পড়েন তাকে হাসপাতালে বহন করেন প্রতিপক্ষ রাজীবের গাড়ি। জিয়ার স্ত্রী ও তার তরুণ দাবাড়ু পুত্র তাজওয়ারসহ হাসপাতালে আসার পর জানা যায় তিনি মারা গেছেন। প্রশ্ন জাগতে পারে, প্রায় চার যুগ ধরে দাবায় দেশসেরা হওয়ার পরও কি উনার নিজের গাড়ি কেনার সামর্থ্য ছিল না? বহুদিন ধরে দাবা জগতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই জানালেন, মূলত দাবা খেলা ও শেখানোকেই পেশা হিসেবে নেয়া জিয়ার ঢাকা শহরে ফ্ল্যাট থাকলেও গাড়ি ছিল না। জিয়া মোটামুটি সচ্ছল পরিবারে বড় হয়েছেন, প্রকৌশলী বাবা বিদেশে চাকরি করতেন। নিজে দেশের সেরা সব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছেন। তবুও উনার মেধাবী ছেলে তাজওয়ারের ভবিষ্যৎ নিয়ে উনি চিন্তিত ছিলেন বলে জানা গেছে। একজীবনে দেশসেরা, দাবাকেই সাধনা বানানো পিতা হয়তো পুত্রের একই রাস্তায় যাওয়া নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। আর এখন তো এই সম্ভাবনাময় তরুণের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তায় পড়ল।

দাবা বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয় খেলা। বুদ্ধির খেলা বলে সমাজে এর শ্রদ্ধা আছে। অনেক অভিভাবক বিশ্বাস করেন দাবা খেললে সন্তানদের মেধা বিকাশ হয়। সামাজিক খেলা হিসেবেও দাবা প্রতিষ্ঠিত। বিশ্বব্যাপী দাবা অর্থনীতি একদম কমও না। ভারত, চীন, রাশিয়ার মতো দেশে শিশুকাল থেকে দাবাড়ুদের পরিচর্যা করা হয়। এমন একটা ব্যবস্থা করা হয় যাতে, দাবায় যারা ভালো করে তাদের জীবিকার জন্য তেমন কষ্ট করতে না হয়। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় জিয়াউর রহমান যেন সাক্ষাৎ প্রমাণ যে এই দেশে দাবা খেলার কোন ‘প্রতিষ্ঠা’ নাই। কেবল যে সেদিন সতীর্থের গাড়িতে চেপে যাওয়া না, একইসাথে প্রশ্ন আসে, দেশের সর্বোচ্চ টুর্নামেন্টে কি দাবা ফেডারেশনের কোনো মেডিকেল প্রস্তুতি ছিল? এই রকম জরুরি অবস্থার জন্য পরিবহন ব্যবস্থা? দাবা সংশ্লিষ্টরা জানান, ফেডারেশনের পরিবেশ খেলার উপযোগী না, বহু বছর ধরে ক্রীড়া পরিষদে একটা ভালো স্থানের জন্য চাপানউতোর চলছে। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হলে সেগুলো খেলা হয় হোটেল ভাড়া করে। সেগুলোও মূলত স্পন্সরদের টাকায়।

পাশের দেশ ভারতেই দাবার দারুণ জোয়ার। বিশ্বনাথন আনন্দের পর নতুন নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাওয়ার সম্ভাবনায় ভারত। পুরুষ তো বটেই, নারীদের মধ্যেও। অথচ এই উপমহাদেশে প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার হয়েছিলেন নিয়াজ মোর্শেদ। সেই সাফল্যে দেশবাসী উত্তাল হলেও তা কাঠামোগতভাবে আগাতে পারেনি। জিয়া অনেকটা সন্ন্যাসীদের মতো সাধনায় খেলে গেছেন জীবনের শেষদিন পর্যন্ত। যেভাবে খুন হন ঢাকা কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী জোবায়েরযেভাবে খুন হন ঢাকা কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী জোবায়ের। কিন্তু আধুনিক যুগে এই ব্যাপারটা তো অতিমাত্রায় অস্বাভাবিক। যতই আবেগ থাকুক, জীবনের বাস্তবতায় এখানে বেশির ভাগ মানুষ পরাজিত হয়। আর এখনকার দিনে দুনিয়ার বেশির ভাগ দেশ যেখানে উন্নত প্রশিক্ষণ আর বিপুল সমর্থনে উৎকর্ষের চূড়ায় যাচ্ছে সেই দুনিয়ায় একক চেষ্টায় খুব বেশিদূর যাওয়া সম্ভবও না। বিশ্বসেরাদের কাতারে তো নয়ই।

সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তনও বড় প্রতিবন্ধকতা। নব উদারতাবাদের এই দুনিয়ায় সামাজিক শাসন বা হৃদ্যতা এখন নেই। আগের দিনে, পণ্ডিতমশাই কুকুরের এক ঠ্যাং-এর সমান বেতন পেলেও বিপুল একটা সামাজিক সম্মান ছিল। পাড়ার সেরা ফুটবলার বা দাবাড়ুদের প্রতি ছিল দারুণ একটা শ্রদ্ধা। তরুণরা তাদের রোলমডেল মানত। এখন টাকা আর ক্ষমতাই সব। মসজিদ কমিটির সভাপতি হতে হলেও এখন একমাত্র বিবেচ্য বিষয় অর্থসম্পদ আর রাজনৈতিক ক্ষমতা, বাকিসব প্রতিষ্ঠানের কথা তো বলাই বাহুল্য। বাজার আর রাষ্ট্রের কাছে ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা সমাজ এখন আর আবেগের প্রশ্রয়দাতা হতে পারে না। কিন্তু সেই দায়িত্ব তো রাষ্ট্রের কাছে বর্তায়। বেনেডিক্ট এন্ডারসন আমাদের ইমাজিন্ড কমিউনিটির ধারণা দেন। তিনি তত্ত্বগতভাবে প্রমাণ করেন যে, রাষ্ট্র আসলে গঠিত হয় কল্পনায়। এই যে কোটি কোটি মানুষ একই রাষ্ট্রের পতাকাতলে জড়ো হয়, এদের মূল শক্তি হচ্ছে পরস্পরকে একটা কাল্পনিক সম্প্রদায়ের অংশ ভাবা, যাদের বেশির ভাগই তার কাছে অচেনা। কিন্তু এই অচেনা মানুষেরা একক অহংকার এবং আত্মমর্যাদার ভিত্তিতে এক হয়ে যায়। আধুনিক দুনিয়ায় খেলাধুলা সেই সিমেন্টের কাজ করে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের পতাকাবহনকারী কোনো ব্যক্তি বা দল ভালো করলে গোটা দেশের জন্য তা একটা উদ্যম বয়ে আনে। রাষ্ট্রের কাজ এই উদ্যমতাকে ধরে রাখার চেষ্টা করা। নিশ্চিত করা, যাতে একজন জিয়াউর রহমান লাখো লাখো তরুণের রোল মডেল হয়ে উঠেন। এই কাজটা করতে না পারলে কেবল জিডিপির প্রবৃদ্ধি, আর্থিক উন্নয়নের গল্প দিয়ে জাতি গঠিত হয় না।

একই কথা শিক্ষাদীক্ষা, আবিষ্কার বা অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। দেশের লাখো লাখো কিশোরের মনে যদি একজন দারুণ শিক্ষাবিদ বা বিজ্ঞানীকে রোল মডেল হিসেবে উপস্থিত করা যায়, তবে তারা একটা দারুণ স্বপ্নের পেছনে ছোটার জ্বালানি পায়। দেশের এগিয়ে চলায় এই উদ্যাম অমূল্য। কিন্তু যেই রাষ্ট্র সেই স্বপ্ন মেরে ফেলে সে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। যে রাষ্ট্রের মেধাবী তরুণদের মূল আকাক্সক্ষা হয়ে দাঁড়ায় কোনোমতে দেশ ছেড়ে বাইরের দেশে গিয়ে নিরাপত্তা, জীবিকা আর নিজের আবেগের স্বপ্নপূরণ, সে দেশের ভবিষ্যৎ নিশ্চিতভাবেই শঙ্কার মধ্যে থাকে। একজন দাবাসাধক জিয়াউর রহমানের দাবা বোর্ডে লুটিয়ে পড়া মৃত্যু হয়তোবা একটা দারুণ রোমান্টিক অনুভূতি দিতে পারে; কিন্তু সেই রোমান্টিকতা আমাদের ভবিষ্যতের নিকষ কালো অন্ধকারকে চাপা দিতে পারবে না।