রংপুরে নদী, নালা, খাল-বিল, জলাশয়সহ সর্বত্র পানিতে টইটম্বুর। এ সময়টাতে দেশীয় প্রজাতির মাছ বেশি পাওয়া যায়। গ্রামা লে জাল দিয়ে মাছ শিকারের পাশাপাশি প্রাচীন উপকরণ হচ্ছে চাঁই। জমির আইলে কিংবা অন্য কোনো স্থানে অল্প পানিতে সহজেই মাছ ধরার জন্য চাঁই হলো জনপ্রিয় উপকরণ। চাঁই তৈরীর বিভিন্ন উপকরণের মূল্য বৃদ্ধিসহ সরকারি কোনো প্রণোদনা না থাকায় অবহেলিতই রয়ে যাচ্ছে কারিগররা। রংপুরের বিভিন্ন উপজেলার হাটবাজারে বাঁশের তৈরি চাঁই নামে মাছ ধরার ফাঁদটির চাহিদা ও বিক্রি বেড়েছে। ফলে চাঁইসহ বাঁশের তৈরি বিভিন্ন উপকরণ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগররা। তবে অবহেলিতই রয়ে যাচ্ছে কারিগররা। বিভিন্ন বাজারে দেখা যায, আধুনিকতার ছোঁয়ায় ফাঁদের আকার-ধরণ ও নকশায় পরিবর্তন হলেও এখনো কমেনি চাঁইসহ বাঁশের তৈরি বিভিন্ন উপকরণ। হাটবাজারগুলোতে চাঁইয়ে ভরে গেছে, ক্রেতাও বেড়েছে। কাউনিয়া উপজেলার বনগ্রাম, বড়ুয়াহাটসহ গ্রামীণ এলাকার নারী-পুরুষেরা সারাবছর ধরে চাঁই ও বাঁশের তৈরি বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করেন। মাছ ধরার ফাঁদ হিসেবে বাঁশের তৈরি চাঁইয়ের জুড়ি নেই। উপজেলার টেপামধুপুর, তাকিপল হাট ও খানসামা হাটসহ বিভিন্ন বাজারে চাঁইসহ বাঁশের বিভিন্ন উপকরণের বেচা-কেনার জন্য জনসাধারণের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। তকিপল হাটে বাঁশের তৈরি উপকরণ ক্রয় করতে আসা ক্রেতা আবেদ আলী বলেন, শখের বসে বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরতেই চাঁই ক্রয় করতে হাটে এসেছেন। বর্ষা মৌসুমে বিলে বা জমির আইলে চাঁই পেতে মাছ ধরার মজাই আলাদা। তবে দিন যতই যাচ্ছে ততই এগুলোর দাম বাড়ছে। বর্তমানে প্রতিটি চাঁই প্রকার ও মান ভেদে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাঁই হচ্ছে আড়াই-তিন ফুট লম্বাকৃতির চার কোনা, গোলাকার এবং টইয়া চ্যাপ্টা আকৃতির। বাঁশ শিল্পের কারিগর রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ছোট জাতের মাছ ধরার সুতি, ভাদায় ও কারেন্ট জালের দাপটের কারণে দেশি প্রযুক্তির বাঁশের তৈরি চাঁই সামগ্রী এমনিতেই টিকে থাকতে পারছে না। জীবন বাঁচার তাগিদে বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখেছেন তারা। সারাবছরের তেমন চাহিদা থাকে না, বর্ষা মৌসুমে এর খুব চাহিদা বাড়ে। বিশেষ করে যে বছর বন্যা হয়। চলতি মৌসুমে তিনি সবচেয়ে বেশি চাঁই তৈরি করেছে। বাঁশ শিল্পের সঙ্গে যারা জরিত তাদের সরকারিভাবে পৃষ্টপোষকতা করা প্রয়োজন, তা না হলে গ্রাম বাংলার এ শিল্প একদিন হারিয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন পেশার সঙ্গে যুক্ত পরিবারগুলো ভালো নেই। বছরের কয়েকটি মাস তারা মাছ ধরার চাঁইসহ বাঁশের তৈরি উপকরণ দিয়েই সারাবছর সংসার চালানো অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। অবসর সময়ে তারা সরকারের প্রণোদনা চায়। এছাড়া কম সুদে ঋণ দিলে বেশি করে বাঁশ শিল্পের উপকরণ তৈরি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতো। কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিদুল হক বলেন, এ পেশার সঙ্গে জড়িতদের খোঁজ-খবর নিয়ে তাদের সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।


























