◉কলেজ-বিশ^বিদ্যালয় খোলার কোন সিদ্ধান্ত হয়নি
◉ঝুলে আছে এইচএসসি পরীক্ষা, ৪ আগস্টের পরীক্ষাও অনিশ্চিত
◉চার সিটি ও নরসিংদী পৌর এলাকা বাদে সব প্রাথমিক স্কুল খুলছে রোববার
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট অস্থিতিশিল পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দাবির প্রেক্ষিতে সরকারের উদ্যোগে আদালতের মাধ্যমে কোটা সংস্কার হলেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন মোড় নিয়ে অন্য ইস্যুতে। ফলে চলমান উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সরকার। অবশ্য পরিস্থিতির উন্নতি হলে পর্যায়ক্রমে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার কথা জানানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। এরই অংশ হিসেবে চার সিটি করপোরেশন ও নরসিংদী জেলার পৌর এলাকা বাদে অন্যান এলাকার সব প্রাথমিক স্কুল রোববার থেকে চালু করার ঘোষণা দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে মন্ত্রণালয়টি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রাথমিকের ক্লাসের সময়সূচিতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। আগের রুটিন অনুযায়ী পাঠদান চলবে। তবে সংশ্লিষ্ট জেলার কারফিউর সময় অনুযায়ী শ্রেণিকক্ষের সময় কমানো কিংবা বাড়ানো যাবে। বিষয়টি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নির্ধারণ করবেন। তবে বাকি সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কবে খুলবে তা এখনও অনিশ্চিত হয়ে রয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
এদিকে চলমান অস্থিরতার কারণে ঝুলে আছে এ বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। গত ৩০ জুন থেকে শুরু হওয়া পরীক্ষা জুলায়ের মাঝামাঝি এসে ঝুলে যায়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে কয়েক দফায় আট দিনের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এখন আগামী ৪ আগস্টের নির্ধারিত পরীক্ষাও স্থগিত করার আশঙ্কা রয়েছে। এর আগে বন্যার কারণে সিলেট বিভাগের পরীক্ষা কয়েকটি স্থগিত রেখে শুরু হয়। ফলে ওই পরীক্ষাগুলোও ঝুলে আছে। দীর্ঘ দিন ধরে এসব পরীক্ষা ঝুলে থাকায় সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে বেশ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় বোর্ড সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, পরীক্ষা পেছানো নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সার্বিক পরিস্থিতি আমরা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। আশা করছি বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিতে পারব। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একটি সূত্র জানিয়েছে, দেশে চলমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতই রাখা হবে। পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হওয়ার পর পরীক্ষা শুরুর বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
স্থগিত এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা দ্রুত শেষ করা ও স্বস্তির পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছে স্বাধীনতা শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশন। গত সোমবার সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এ দাবি জানানো হয়। ফেডারেশনের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ ড. মো. শাহজাহান আলম সাজুর সভাপতিত্বে এ সভায় সভায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে অতিদ্রুত অসমাপ্ত এইচএসসি পরীক্ষা সম্পন্ন এবং স্বস্তির পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি জানানো হয়। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের আত্মঘাতী ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং সচেতন দেশবাসীর প্রতি সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়।
কোভিডের ধকলে সিলেবাস শেষ না হওয়ায় এমনিতেই এপ্রিলের এইচএসসি পরীক্ষা এবার শুরু হয়েছে জুনের শেষে। তার ওপর একমাস পার হলেও, এখনও অধিকাংশ বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। তাহলে কবে শেষ হবে পরীক্ষা- তা নিয়ে দুশ্চিন্তার ভাঁজ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কপালে।
বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলছেন, ১১ আগস্টের পর ক্রমান্বয়ে অনুষ্ঠিত হবে স্থগিত হওয়া পরীক্ষাগুলো। স্থগিত পরীক্ষাগুলো নিতে যতদিন সময় লাগবে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে ততদিন দেরি হবে।
কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে গত ১৬ জুলাই থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। যদিও জুলাইয়ের শুরুতেই পেনশন এবং কোটা আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ পেলে পুরোপুরি স্থবিরতা নেমে আসে শিক্ষাব্যবস্থায়। গত ১ জুলাই থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শুর হওয়া এই আন্দোলন ছড়িয়ে যায় সারা দেশে। একপর্যায়ে ব্যাপক সংঘাতে শিক্ষার্থীসহ ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে, আহত হয় কয়েক হাজার মানুষ।
সূত্রমতে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ৩ কোটি ৭০ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। এর বাইরে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে আরো প্রায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থী। এভাবে টানা বন্ধের কারণে ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়ায় প্রায় সব পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা পড়েছে বিপাকে। তবে কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় বন্ধ হয়ে যাওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিতে চায় সরকারও। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ধাপে ধাপে খুলে দেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার পর নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় ধাপে ধাপে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা জননিরাপত্তা এবং ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে চাই। ইন্টারনেট যেহেতু সচল হয়েছে, সেহেতু অনলাইনে ক্লাসের শুরুর বিষয়টি বিবেচনায় নেব।
























