০১:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দিনাজপুরে কলা চাষে লাভবান হচ্ছে কৃষক

দিনাজপুরে বাড়ছে কলা চাষ। জেলার উৎপাদিত কলা এলাকার চাহিদা পূরণ করে পাঠানো হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। কলা চাষে খরচ কম ও ভালো দাম পাওয়ার কারণে কৃষকগণ কলা চাষে আগ্রহী হংে উঠছে। দিনাজপুরের সবকটি উপজেলায় কলা চাষ করা হয়। তবে প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ কলা চাষ হয় জেলার সদর, বীরগঞ্জ, চিরিরবন্দর, কাহারোল ও বিরল উপজেলায়। শ্রাবণ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে আশ্বিন মাসের শেষ পর্যন্ত গাছ থেকে কলা নামানো হয়। এ সময় কাহারোল উপজেলার দশমাইল মোড়ে বসে উত্তরা লের দ্বিতীয় বৃহত্তম কলার হাট। কলা আসে নীলফামারী, প গড় ও ঠাঁকুরগাও জেলা থেকে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা কলা ক্রয় করতে আসেন দশমাইল হাটে। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত ভ্যান, নসিমন, পিকআপে করে দশমাইল হাটে বিক্রয়ের জন্য কলা নিয়ে আসেন কৃষক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। কেনাবেচা শেষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ট্রাকে কলা তোলা হয়। পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে শেষ হয় হাটের কলা বেচাকেনা। তারপর ক্রয়কৃত কলা ট্রাকে লোড হয়। ট্রাক ছুটে চলে ঢাকার বাদামতলী, যাত্রাবাড়ী, তেজগাঁও, ওয়াইজঘাট, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার হাট-বাজারে। দশমাইল হাটে বিভিন্ন জাতের কলা পাওয়া যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মেহেরসাগর, মালভোগ,সাগর ও চিনি চা¤পা কলা। তবে এ হাটে মেহেরসাগর কলারই আধিক্য। দিনাজপুরে উৎপাদিত মেহেরসাগর কলার খ্যাতিও রযেছে দেশজুড়ে। পাশাপাশি সবরি, সুন্দরী (মালভোগ), চিনি চা¤পা কলার চাষও হয় এখানে। কলা চাষের উপযোগী জলমুক্ত উঁচু জমি, ভালো ফলন, চাষে কম পরিশ্রম আর ভালো দাম পাওয়ায় গত কয়েক বছরে কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হয়েছে। কলা চাষের জন্য পর্যাপ্ত রোদ ও আলো বাতাসের প্রয়োজন হয়। চলতি মৌসুমের আবহাওয়া কলার জন্য বেশ উপযোগী হওয়ায় উৎপাদন ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। গত দেড় যুগ ধরে দিনাজপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কলা চাষ। দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছরে খরিপ-১ ও রবি মৌসুমে জেলায় কলা চাষ হয়েছে ১ হাজার ১৪৬ হেক্টর জমিতে। এবছর ৩৪ হেক্টর জমিতে কলা চাষ বেশি হয়েছে। কলা চাষিরা বলেন,অন্য ফসলের তুলনায় কালা চাষে খরচ কম লাভ বেশি হয়। ফলে প্রতিবার কলা গাছই লাগাই। দশমাইল কলার হাটের ইজারাদার বলেন, মৌসুমে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ লক্ষ টাকার কলা কেনাবেচা হয় এ হাটে। প্রতিদিন গড়ে ১৬-২০টি ট্রাক লোড হয়। একটি বড় ট্রাকে সর্বনিম্ন ৭০০ কাদি কলা ধরে। ছোট ট্রাকে ৪৫০ কাদি কলা ধরে। মৌসুমে এ হাটে লোড-আনলোডের কাজ করেন অন্তত ১০০ শ্রমিক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবদ মো. নুরুজ্জামান বলেন, কলা বর্ষজীবী উদ্ভিদ। মেহেরসাগর কলা দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী ফসল। কলা চাষে খরচ কম, ঝুঁকি ও রোগবালাই কম থাকায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কলা চাষ। কলার ক্ষেতে সাথী ফসল হিসেবে অন্যান্য শাকসবজির চাষ করেও লাভবান হচ্ছে কৃষক। উত্তম কৃষি চর্চার আওতায় এনে কলা চাষে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। তবে আমের মতো কলাও বিশেষ কার্বন ব্যাগ দিয়ে ঢেকে বড় করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

দিনাজপুরে কলা চাষে লাভবান হচ্ছে কৃষক

আপডেট সময় : ০৭:২০:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ অগাস্ট ২০২৪

দিনাজপুরে বাড়ছে কলা চাষ। জেলার উৎপাদিত কলা এলাকার চাহিদা পূরণ করে পাঠানো হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। কলা চাষে খরচ কম ও ভালো দাম পাওয়ার কারণে কৃষকগণ কলা চাষে আগ্রহী হংে উঠছে। দিনাজপুরের সবকটি উপজেলায় কলা চাষ করা হয়। তবে প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ কলা চাষ হয় জেলার সদর, বীরগঞ্জ, চিরিরবন্দর, কাহারোল ও বিরল উপজেলায়। শ্রাবণ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে আশ্বিন মাসের শেষ পর্যন্ত গাছ থেকে কলা নামানো হয়। এ সময় কাহারোল উপজেলার দশমাইল মোড়ে বসে উত্তরা লের দ্বিতীয় বৃহত্তম কলার হাট। কলা আসে নীলফামারী, প গড় ও ঠাঁকুরগাও জেলা থেকে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা কলা ক্রয় করতে আসেন দশমাইল হাটে। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত ভ্যান, নসিমন, পিকআপে করে দশমাইল হাটে বিক্রয়ের জন্য কলা নিয়ে আসেন কৃষক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। কেনাবেচা শেষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ট্রাকে কলা তোলা হয়। পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে শেষ হয় হাটের কলা বেচাকেনা। তারপর ক্রয়কৃত কলা ট্রাকে লোড হয়। ট্রাক ছুটে চলে ঢাকার বাদামতলী, যাত্রাবাড়ী, তেজগাঁও, ওয়াইজঘাট, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার হাট-বাজারে। দশমাইল হাটে বিভিন্ন জাতের কলা পাওয়া যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মেহেরসাগর, মালভোগ,সাগর ও চিনি চা¤পা কলা। তবে এ হাটে মেহেরসাগর কলারই আধিক্য। দিনাজপুরে উৎপাদিত মেহেরসাগর কলার খ্যাতিও রযেছে দেশজুড়ে। পাশাপাশি সবরি, সুন্দরী (মালভোগ), চিনি চা¤পা কলার চাষও হয় এখানে। কলা চাষের উপযোগী জলমুক্ত উঁচু জমি, ভালো ফলন, চাষে কম পরিশ্রম আর ভালো দাম পাওয়ায় গত কয়েক বছরে কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হয়েছে। কলা চাষের জন্য পর্যাপ্ত রোদ ও আলো বাতাসের প্রয়োজন হয়। চলতি মৌসুমের আবহাওয়া কলার জন্য বেশ উপযোগী হওয়ায় উৎপাদন ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। গত দেড় যুগ ধরে দিনাজপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কলা চাষ। দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছরে খরিপ-১ ও রবি মৌসুমে জেলায় কলা চাষ হয়েছে ১ হাজার ১৪৬ হেক্টর জমিতে। এবছর ৩৪ হেক্টর জমিতে কলা চাষ বেশি হয়েছে। কলা চাষিরা বলেন,অন্য ফসলের তুলনায় কালা চাষে খরচ কম লাভ বেশি হয়। ফলে প্রতিবার কলা গাছই লাগাই। দশমাইল কলার হাটের ইজারাদার বলেন, মৌসুমে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ লক্ষ টাকার কলা কেনাবেচা হয় এ হাটে। প্রতিদিন গড়ে ১৬-২০টি ট্রাক লোড হয়। একটি বড় ট্রাকে সর্বনিম্ন ৭০০ কাদি কলা ধরে। ছোট ট্রাকে ৪৫০ কাদি কলা ধরে। মৌসুমে এ হাটে লোড-আনলোডের কাজ করেন অন্তত ১০০ শ্রমিক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবদ মো. নুরুজ্জামান বলেন, কলা বর্ষজীবী উদ্ভিদ। মেহেরসাগর কলা দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী ফসল। কলা চাষে খরচ কম, ঝুঁকি ও রোগবালাই কম থাকায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কলা চাষ। কলার ক্ষেতে সাথী ফসল হিসেবে অন্যান্য শাকসবজির চাষ করেও লাভবান হচ্ছে কৃষক। উত্তম কৃষি চর্চার আওতায় এনে কলা চাষে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। তবে আমের মতো কলাও বিশেষ কার্বন ব্যাগ দিয়ে ঢেকে বড় করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।