০৬:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দুর্গাপূজা সামনে রেখে খেলনা তৈরীর কারিগরগণ ব্যস্ত

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সব চেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। এরমধ্যে পূজার আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। শহর থেকে গ্রাম সবখানেই বিভিন্ন আয়োজন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রংপুরের মাহিগঞ্জ এলাকায় খেলনা তৈরীর কারিগর ও ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততা দেখা যায়। কেউ বাঁশিতে বেলুন লাগাচ্ছেন তো কেউ তৈরি করছেন গাড়ি, কেউ করছেন রং-বেরঙের ডিজাইন, আবার কেউ বা কাঠ খোদাই করে তৈরি করছেন গাড়ির ফ্রেম। তৈরি হচ্ছে নানান মডেলের আকর্ষণীয় গাড়ি, মাটির তৈজসপত্র। দেখা যায় ট্রাক, ঠেলা গাড়ি, কেরকেরি গাড়ি, ঢোল গাড়ি, টমটম গাড়ি, ছোট মাটির হাড়ি পাতিল, কড়াই, মাটির কলস, এমনকি মাটির হাতি ঘোড়াও বানানো হচ্ছে আর থরে থরে সাজানো আছে। বাঁশি-বেলুনসহ আকর্ষনীয় জিনিস দিয়ে সাজানো রয়েছে প্রতিটি দোকান। আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্লাস্টিকের দাপটে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামীন এসব ঐতিহ্য। এখন শুধু বিভিন্ন মেলাতে এসব খেলনা গাড়ি ও মাটির জিনিস দেখা যায়। কারিগর ও ব্যবসায়ীরা বলেন, মেলা আসলে এসব জিনিসের বিক্রি বাড়ে। অন্যসময় তেমন একটা বিক্রি হয় না। তাই তারাও দেশের বিভিন্ন জেলায় মেলা উপলক্ষ্যে গিয়ে থাকেন। তবে চাহিদা কমে যাওয়ায় অনেকে ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন। খেলনা তৈরির কারিগর আজিজুর মিয়া বলেন, বাপ-দাদারাও খেলনা তৈরি করতেন। এখন আমরা দুই ভাই তৈরি করছি। এগুলোই আমাদের কর্ম। ঈদ-পূজা ও বিভিন্ন মেলায় এসব জিনিস বিক্রি করি। অন্য সময় তেমন একটা বিক্রি হয় না। তাই তো যেখানেই মেলা বসে সেখানেই চলে যাই। এভাবেই চলছে সংসার। খেলনা গাড়িতে দ্রুতগতিতে চাকা লাগাচ্ছিলেন বুলু মিয়া। এসব কাজ করতে করতে অভ্যাস হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমার পরিবারের সবাই এসব কাজ করে। সামনে পূজা এখন কাজের চাপও বেড়েছে। আমাদের এখান থেকে পাইকারি বেশি বিক্রি হয়। তবে কেউ কিনতে চাইলে খুচরাও বিক্রি করা হয়। তিনি আরও বলেন, এসব মালামাল বগুড়া থেকে নিয়ে আসি। সময় থাকলে আমরা নিজে গিয়ে ভালো কাঠ দেখে নিয়ে আসি। নাহলে অন্য লোকের মাধ্যমে আনতে হয়। অন্যবার বেচাকেনা ভালো হলেও এবার আকাশের অবস্থা ভালো না। বলা যাচ্ছে না ব্যবসা কেমন হবে। পীরগাছা উপজেলা থেকে এসেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, আমি সাধারণত কৃষিকাজ করি। পূজা ও বিভিন্ন মেলা উপলক্ষ্যে দোকান করি। এবার পূজাতেও মাহিগঞ্জে দোকান দেওয়া হযেছে। এখন তেমন একটা বেচাকেনা হচ্ছে না। পূজার আগে আগে বিক্রি বাড়বে এমনটা আশা করা হচ্ছে। রংপুরের দেউতি থেকে আসা হেলাল উদ্দিন মাটির বিভিন্ন তৈজসপত্র নিয়ে পসরা সাজিয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন মেলায় ও পূজাতে মাটির বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে থাকি। এরমধ্যে মাটির ছোট হাড়ি, কলস, বিভিন্ন খেলনা, হাতি ঘোড়া রয়েছে। ছোট বাচ্চাদের জন্যই আমাদের এসব জিনিস। কেউ শখের বসে বা ছোটদের উপহার দেওয়ার জন্য এসব কিনে থাকে। বড় বড় মেলাতে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা আয় হয়ে থাকে। এবার কী হবে বলা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। বিক্রি খুবই কম হচ্ছে। চলতি বছর রংপুর মহানগরসহ আট উপজেলার ৮৩৫টি পূজামন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রত্যেকটি মন্ডপে শৃঙ্খলা কমিটির পাশাপাশি থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পুরোহিতদের মতে, গত ২ অক্টোবর দেবীর আবাহনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গাপূজার ক্ষণগণনা। আগামী ১৩ অক্টোবর মহা বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দুর্গোৎসব।

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

চীনে রপ্তানি বাড়েনি, বাণিজ্য ঘাটতি পাহাড়সম

দুর্গাপূজা সামনে রেখে খেলনা তৈরীর কারিগরগণ ব্যস্ত

আপডেট সময় : ০৪:৪৯:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ অক্টোবর ২০২৪

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সব চেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। এরমধ্যে পূজার আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। শহর থেকে গ্রাম সবখানেই বিভিন্ন আয়োজন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রংপুরের মাহিগঞ্জ এলাকায় খেলনা তৈরীর কারিগর ও ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততা দেখা যায়। কেউ বাঁশিতে বেলুন লাগাচ্ছেন তো কেউ তৈরি করছেন গাড়ি, কেউ করছেন রং-বেরঙের ডিজাইন, আবার কেউ বা কাঠ খোদাই করে তৈরি করছেন গাড়ির ফ্রেম। তৈরি হচ্ছে নানান মডেলের আকর্ষণীয় গাড়ি, মাটির তৈজসপত্র। দেখা যায় ট্রাক, ঠেলা গাড়ি, কেরকেরি গাড়ি, ঢোল গাড়ি, টমটম গাড়ি, ছোট মাটির হাড়ি পাতিল, কড়াই, মাটির কলস, এমনকি মাটির হাতি ঘোড়াও বানানো হচ্ছে আর থরে থরে সাজানো আছে। বাঁশি-বেলুনসহ আকর্ষনীয় জিনিস দিয়ে সাজানো রয়েছে প্রতিটি দোকান। আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্লাস্টিকের দাপটে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামীন এসব ঐতিহ্য। এখন শুধু বিভিন্ন মেলাতে এসব খেলনা গাড়ি ও মাটির জিনিস দেখা যায়। কারিগর ও ব্যবসায়ীরা বলেন, মেলা আসলে এসব জিনিসের বিক্রি বাড়ে। অন্যসময় তেমন একটা বিক্রি হয় না। তাই তারাও দেশের বিভিন্ন জেলায় মেলা উপলক্ষ্যে গিয়ে থাকেন। তবে চাহিদা কমে যাওয়ায় অনেকে ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন। খেলনা তৈরির কারিগর আজিজুর মিয়া বলেন, বাপ-দাদারাও খেলনা তৈরি করতেন। এখন আমরা দুই ভাই তৈরি করছি। এগুলোই আমাদের কর্ম। ঈদ-পূজা ও বিভিন্ন মেলায় এসব জিনিস বিক্রি করি। অন্য সময় তেমন একটা বিক্রি হয় না। তাই তো যেখানেই মেলা বসে সেখানেই চলে যাই। এভাবেই চলছে সংসার। খেলনা গাড়িতে দ্রুতগতিতে চাকা লাগাচ্ছিলেন বুলু মিয়া। এসব কাজ করতে করতে অভ্যাস হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমার পরিবারের সবাই এসব কাজ করে। সামনে পূজা এখন কাজের চাপও বেড়েছে। আমাদের এখান থেকে পাইকারি বেশি বিক্রি হয়। তবে কেউ কিনতে চাইলে খুচরাও বিক্রি করা হয়। তিনি আরও বলেন, এসব মালামাল বগুড়া থেকে নিয়ে আসি। সময় থাকলে আমরা নিজে গিয়ে ভালো কাঠ দেখে নিয়ে আসি। নাহলে অন্য লোকের মাধ্যমে আনতে হয়। অন্যবার বেচাকেনা ভালো হলেও এবার আকাশের অবস্থা ভালো না। বলা যাচ্ছে না ব্যবসা কেমন হবে। পীরগাছা উপজেলা থেকে এসেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, আমি সাধারণত কৃষিকাজ করি। পূজা ও বিভিন্ন মেলা উপলক্ষ্যে দোকান করি। এবার পূজাতেও মাহিগঞ্জে দোকান দেওয়া হযেছে। এখন তেমন একটা বেচাকেনা হচ্ছে না। পূজার আগে আগে বিক্রি বাড়বে এমনটা আশা করা হচ্ছে। রংপুরের দেউতি থেকে আসা হেলাল উদ্দিন মাটির বিভিন্ন তৈজসপত্র নিয়ে পসরা সাজিয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন মেলায় ও পূজাতে মাটির বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে থাকি। এরমধ্যে মাটির ছোট হাড়ি, কলস, বিভিন্ন খেলনা, হাতি ঘোড়া রয়েছে। ছোট বাচ্চাদের জন্যই আমাদের এসব জিনিস। কেউ শখের বসে বা ছোটদের উপহার দেওয়ার জন্য এসব কিনে থাকে। বড় বড় মেলাতে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা আয় হয়ে থাকে। এবার কী হবে বলা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। বিক্রি খুবই কম হচ্ছে। চলতি বছর রংপুর মহানগরসহ আট উপজেলার ৮৩৫টি পূজামন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রত্যেকটি মন্ডপে শৃঙ্খলা কমিটির পাশাপাশি থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পুরোহিতদের মতে, গত ২ অক্টোবর দেবীর আবাহনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গাপূজার ক্ষণগণনা। আগামী ১৩ অক্টোবর মহা বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দুর্গোৎসব।