১০:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাইবান্ধায় আমন ধান ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণ

সোনার বাংলায় সোনার মাটিতে কৃষকের পরিশ্রমের ফলে সোনার ফসল। তাদের পরিশ্রমে সচল থাকে অর্থনীতির চাকা। সেই স্বপ্ন নিয়ে নান প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে কৃষক রোপণ করেন আমন ধানের চারা। আমন ধান সবুজ সমারোহ হয়ে উঠে গাইবান্ধার মাঠের পর মাঠ। কোথাও আগাম আমন ধান প্রায় পাকছে, আবার অনেক এলাকায় আমন ধানের শীষ উঁকি দিয়ে বের হতে শুরু করেছে। কিন্তু কৃষকে বিধিবাম, এরইমধ্যেই আমন ধানেেক্ষতে ইঁদুরের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। জেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লক্ষ ৩৩ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছে। যেসব এলাকার জমি নিচু সেখানে ইঁদুরের আক্রমণ বেশি হচ্ছে। সম্প্রতি বৃষ্টি হওয়ায় ইঁদুরের উপদ্রব তুলনামূলকভাবে বেড়ে গেছে। সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি, গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি, সাদুল্লাপুর ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বিভিন্নি গ্রামে দেখা যায়, আমন ধানের ক্ষেতে চাষিরা ইঁদুরের উপদ্রব থেকে ধান রক্ষা করতে ধানের জমির মধ্যে বাঁশের কঞ্চি গেড়ে এতে পলিথিন টাঙিয়ে দিয়েছেন। অনেকে আবার ক্ষেতের চারপাশে ইঁদুর মারার ফাঁদ তৈরি করে রেখেছেন। তবুও কোনো কাজে আসছে না। ক্ষেতে ইঁদুরের হানা দেওয়া ধানের গাছ দেখে মনে হবে কেউ কাঁচি দিয়ে কেটে রেখেছে। একটি নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা যায়, জীবন-জীবিকার জন্য গাইবান্ধার অধিকাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এ জেলার শতকরা প্রায় ৭৫ ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। জেলার অন্যতম ফসল হচ্ছে ধান। কৃষকেরা ধান ঘরে তুলে তাঁদের মৌলিক চাহিদা পূরণের চেষ্টা করেন। ইরি ধানের তুলনায় কম খরচে লাভজনক ফসল হচ্ছে রোপা আমন ধান। জলবায়ু পরিবর্তনে খরা আর বন্যাসহ নানা প্রতিকূল পেরিয়ে ঘরে ধান তুলতে বুকভরা আশা বেঁধে ছিলেন কৃষকেরা। কিন্তু বিধিবাম! বেশ কিছু মাঠে পোকামাকড়ের আক্রমণসহ পাতা ব্লাস্ট বা খোলপচা রোগ দেখা দেয়। এ থেকে রেহাই পেতে না পেতেই দেখা দিয়েছে ইঁদুরের উপদ্রব। ধানগাছ কেটে সাবাড় করছে ইঁদুরের দল। এমন পরিস্থিতিতে ধানক্ষেত নষ্ট হওয়া মাথায় হাত পড়েছে কৃষকের। কৃষকগণ বলেন, ফসলহানি হওয়ার সময় মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের সঠিক পরামর্শ পান না তাঁরা। অনেক এলাকায় কৃষি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের বছরের পর বছর দেখাই মেলে না। যেন তারা ডুমুরের ফল। অনেক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে কৃষি কর্মকর্তাদের সম্পর্ক ভাল। যাঁদের জমির পরিমাণ বেশি তারা খুব সহজেই পরামর্শ পান। সাধারণ কৃষকদের ফসলের পরামর্শের জন্য উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের দেখা মেলে ভাগ্যের ব্যাপার। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কৃষক আব্দুল মতিন বলেন, চলতি রোপা আমন মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। এ থেকে ভালো ফলন ঘরে তোলার স্বপ্ন বুনছিলেন। কিন্তু ইঁদুরের আক্রমণে সেই স্বপ্ন ভেঙে গেছে তাঁর। আরেক কৃষক তাজুল ইসলাম বলেন, ইঁদুরের কবল থেকে রক্ষায় বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোনো সুফল পাচ্ছেন না তিনি। বাধ্য হয়ে বাঁশের ডোঙ্গার ফাঁদ দিয়ে ইঁদুর নিধনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সাদুল্লাপুর উপজেলার মনমথ গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমন ধান ক্ষেতের ইঁদুর মারার জন্য বিভিন্ন কৌশল করে দিন-রাত চেষ্টা করেও ইঁদুরের কবল থেকে ধান ক্ষেত রক্ষা করতে পারছি না। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তানজিমুল হাসান বলেন, খুব বেশি পরিমাণ ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণ নেই। কিছু কিছু ক্ষেতে সামান্য আক্রমণ করেছে। এসব ইঁদুর নিধনে বিষ টোপসহ বিভিন্ন বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কৃষক আবুল হোসেন বলেন, তিনি এবার ১০ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছেন। এখন ধানের শীষ বের হচ্ছে। এ অবস্থায় ক্ষেতে ইঁদুরের উপদ্রব দেখা দেওয়ায় তিনি দুশ্চিন্তায় আছেন। ্কীটনাশক প্রযোগ করে কোনো লাভ হচ্ছে না। তিনি বলেন, ক্ষেতের মধ্যে পলিথিন বেঁধে দিয়েছেন। বাতাসে কাগজ উড়ার শব্দে ইঁদুর পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ এলাকার কৃষক বাবলু মিয়া বলেন, নানা কৌশল অবলম্বন করেও ইঁদুরের হাত থেকে রোপা আমন রক্ষা করা যাচ্ছে না। এখন ফলন নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি। গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, রোপা আমন ক্ষেতে ইঁদুর তাড়ানোর জন্য কীটনাশক প্রয়োগসহ বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। আশা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্য এর সমাধান হয়ে যাবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

একনেক সভায় ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকার ২২ প্রকল্প অনুমোদন

গাইবান্ধায় আমন ধান ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণ

আপডেট সময় : ০১:৪৪:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

সোনার বাংলায় সোনার মাটিতে কৃষকের পরিশ্রমের ফলে সোনার ফসল। তাদের পরিশ্রমে সচল থাকে অর্থনীতির চাকা। সেই স্বপ্ন নিয়ে নান প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে কৃষক রোপণ করেন আমন ধানের চারা। আমন ধান সবুজ সমারোহ হয়ে উঠে গাইবান্ধার মাঠের পর মাঠ। কোথাও আগাম আমন ধান প্রায় পাকছে, আবার অনেক এলাকায় আমন ধানের শীষ উঁকি দিয়ে বের হতে শুরু করেছে। কিন্তু কৃষকে বিধিবাম, এরইমধ্যেই আমন ধানেেক্ষতে ইঁদুরের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। জেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লক্ষ ৩৩ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছে। যেসব এলাকার জমি নিচু সেখানে ইঁদুরের আক্রমণ বেশি হচ্ছে। সম্প্রতি বৃষ্টি হওয়ায় ইঁদুরের উপদ্রব তুলনামূলকভাবে বেড়ে গেছে। সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি, গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি, সাদুল্লাপুর ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বিভিন্নি গ্রামে দেখা যায়, আমন ধানের ক্ষেতে চাষিরা ইঁদুরের উপদ্রব থেকে ধান রক্ষা করতে ধানের জমির মধ্যে বাঁশের কঞ্চি গেড়ে এতে পলিথিন টাঙিয়ে দিয়েছেন। অনেকে আবার ক্ষেতের চারপাশে ইঁদুর মারার ফাঁদ তৈরি করে রেখেছেন। তবুও কোনো কাজে আসছে না। ক্ষেতে ইঁদুরের হানা দেওয়া ধানের গাছ দেখে মনে হবে কেউ কাঁচি দিয়ে কেটে রেখেছে। একটি নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা যায়, জীবন-জীবিকার জন্য গাইবান্ধার অধিকাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এ জেলার শতকরা প্রায় ৭৫ ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। জেলার অন্যতম ফসল হচ্ছে ধান। কৃষকেরা ধান ঘরে তুলে তাঁদের মৌলিক চাহিদা পূরণের চেষ্টা করেন। ইরি ধানের তুলনায় কম খরচে লাভজনক ফসল হচ্ছে রোপা আমন ধান। জলবায়ু পরিবর্তনে খরা আর বন্যাসহ নানা প্রতিকূল পেরিয়ে ঘরে ধান তুলতে বুকভরা আশা বেঁধে ছিলেন কৃষকেরা। কিন্তু বিধিবাম! বেশ কিছু মাঠে পোকামাকড়ের আক্রমণসহ পাতা ব্লাস্ট বা খোলপচা রোগ দেখা দেয়। এ থেকে রেহাই পেতে না পেতেই দেখা দিয়েছে ইঁদুরের উপদ্রব। ধানগাছ কেটে সাবাড় করছে ইঁদুরের দল। এমন পরিস্থিতিতে ধানক্ষেত নষ্ট হওয়া মাথায় হাত পড়েছে কৃষকের। কৃষকগণ বলেন, ফসলহানি হওয়ার সময় মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের সঠিক পরামর্শ পান না তাঁরা। অনেক এলাকায় কৃষি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের বছরের পর বছর দেখাই মেলে না। যেন তারা ডুমুরের ফল। অনেক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে কৃষি কর্মকর্তাদের সম্পর্ক ভাল। যাঁদের জমির পরিমাণ বেশি তারা খুব সহজেই পরামর্শ পান। সাধারণ কৃষকদের ফসলের পরামর্শের জন্য উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের দেখা মেলে ভাগ্যের ব্যাপার। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কৃষক আব্দুল মতিন বলেন, চলতি রোপা আমন মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। এ থেকে ভালো ফলন ঘরে তোলার স্বপ্ন বুনছিলেন। কিন্তু ইঁদুরের আক্রমণে সেই স্বপ্ন ভেঙে গেছে তাঁর। আরেক কৃষক তাজুল ইসলাম বলেন, ইঁদুরের কবল থেকে রক্ষায় বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোনো সুফল পাচ্ছেন না তিনি। বাধ্য হয়ে বাঁশের ডোঙ্গার ফাঁদ দিয়ে ইঁদুর নিধনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সাদুল্লাপুর উপজেলার মনমথ গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমন ধান ক্ষেতের ইঁদুর মারার জন্য বিভিন্ন কৌশল করে দিন-রাত চেষ্টা করেও ইঁদুরের কবল থেকে ধান ক্ষেত রক্ষা করতে পারছি না। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তানজিমুল হাসান বলেন, খুব বেশি পরিমাণ ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণ নেই। কিছু কিছু ক্ষেতে সামান্য আক্রমণ করেছে। এসব ইঁদুর নিধনে বিষ টোপসহ বিভিন্ন বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কৃষক আবুল হোসেন বলেন, তিনি এবার ১০ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছেন। এখন ধানের শীষ বের হচ্ছে। এ অবস্থায় ক্ষেতে ইঁদুরের উপদ্রব দেখা দেওয়ায় তিনি দুশ্চিন্তায় আছেন। ্কীটনাশক প্রযোগ করে কোনো লাভ হচ্ছে না। তিনি বলেন, ক্ষেতের মধ্যে পলিথিন বেঁধে দিয়েছেন। বাতাসে কাগজ উড়ার শব্দে ইঁদুর পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ এলাকার কৃষক বাবলু মিয়া বলেন, নানা কৌশল অবলম্বন করেও ইঁদুরের হাত থেকে রোপা আমন রক্ষা করা যাচ্ছে না। এখন ফলন নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি। গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, রোপা আমন ক্ষেতে ইঁদুর তাড়ানোর জন্য কীটনাশক প্রয়োগসহ বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। আশা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্য এর সমাধান হয়ে যাবে।