নারায়ণগঞ্জে সোনারগাঁ উপজেলার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মনির হোসেন। নিজ বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন মনোরম পরিবেশে একটি বাগান। সবজি, ফুল, ফল ও ঔষধিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে তাঁর বাগানে। বেশিরভাগ সময় তাঁর কাটে ছাদ কৃষিতে। বাগানে উৎপাদিত ফুল, ফল ও সবজি একদিকে যেমন নিজেদের চাহিদা মেটায়, অপরদিকে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীর মাঝেও বিতরণ করছেন। তাঁর ছাদ কৃষি দেখে অনেকেই উৎসাহী হয়ে উঠছেন।
উপজেলার বাড়ি মজলিস এলাকায় ব্যবসায়ী মনির হোসেন তাঁর নিজ বাড়িতে ছাদ বাগান করেন। ছাদে শুরুর দিকে অল্প কিছু ফুল ও ফলের গাছ দিয়ে শুরু করেন তিনি। বর্তমানে তাঁর বাগানে কয়েক জাতের ফুল, ফল, ঔষধি এবং সবজিসহ বেশ কয়েকটি গাছ রয়েছে। ছাদজুড়েই রয়েছে বারো মাসি আম, কাঁঠাল, পেঁপে, চায়না কমলা, মাল্টা, পেয়ারা ফলের গাছ ও জাম গাছ। তার ছাদ বাগানে আরও রয়েছে কাটিমন, কাঁচমিঠা, আমরূপালী জাতের আম গাছ। এসব গাছের পরিচর্যায় সবসময়ই ব্যস্ত থাকেন তিনি। মাঝে মাঝে তার স্ত্রীও বাগান পরিচর্যায় সময় দেন।
এছাড়া রয়েছে নিম, তুলশী, অ্যালোভেরা, মরিচ, দেশী ও বিলেতি ধনে পাতা, পুদিনা পাতা, পুঁই শাক, লাউ শাক এবং বেগুন গাছ। ধনে পাতা ও বিভিন্ন ফুলের সুবাসিত মৌ মৌ গন্ধ বাড়ির চারদিক ছড়িয়ে পড়ে।
ব্যবসায়ী মনির হোসেন জানান, ছাদ কৃষিতে তেমন পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় না। বাগান থেকে উৎপাদিত ফল ও সবজি নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে বিতরণ করেন তিনি। তার ছাদ কৃষি দেখে অনেকেই উৎসাহীও হচ্ছেন। পরামর্শ নিচ্ছেন কিভাবে নিজ নিজ ছাদে গড়ে তুলবেন বাগান। যাতে নিজ হাতে তৈরি বাগান থেকে পরিবারের জন্য ফল ও সবজির চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়।
প্রতিবেশীরা জানান, ‘আমাদের বাসার পাশেই ব্যবসায়ী মনির হোসেন তার বাড়ির ছাদে খুব সুন্দর একটি ছাদ বাগান তৈরি করেছেন। ছাদ বাগান আমাদেরও খুব পছন্দ। তার ছাদ কৃষি দেখে আমরাও উৎসাহিত হচ্ছি। চেষ্টা করব আমাদের বাসার ছাদেও এ ধরনের ছাদ বাগান করতে।’
স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, ‘আমাদের পাশের বাসার মনির হোসেন তার বাড়ির ছাদে অসাধারণ একটি বাগান করেছেন। তার বাগান থেকে অনেকে তুলসি পাতা ও ফুল নিয়ে যায়। তিনি যেভাবে ছাদে বাগান করেছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমাদের বাড়ির ছাদেও তার মতো এমনি একটি বাগান করার ইচ্ছে আছে।
সোনারগাঁ উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ সাইদুল ইসলাম ও চলচ্চিত্র অভিনেতা মাসুদ পারভেজ রুবেল গত ৪ জুলাই ২০২০ইং সফল এই ব্যবসায়ী মনির হোসেনের বাড়ির ছাদ বাগানের শুভ উদ্বোধন করেন।
তারা বলেন, ‘ব্যবসায়ী মনির হোসেন নিজ উদ্যোগে তার বাড়ির ছাদে বিভিন্ন জাতের ফুল-ফল, সবজি ও বিভিন্ন জাতের পাতাবাহার গাছের চারা দিয়ে অসাধারণ বাগান করেছেন। আমরা মনে করি, তিনি দায়িত্ব নিয়ে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি, ফুল, ফল, ঔষধি গাছ চাষ ও পরিচর্যা করেন। তার মতো যদি অন্যরাও ছাদগুলো ফেলে না রেখে এরকম বিভিন্ন জাতের সবজি অথবা ফুল-ফলের বাগান করেন তারাও লাভবান হতে পারবেন।
ব্যবসায়ী মনির হোসেন শখের ছাদ বাগান করে পুরোপুরি সফল। তার ছাদ বাগানে প্রায় ২ শতাধিক গাছ রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ী মনির হোসেন তার ছাদ বাগান অনেক সুসজ্জিত ও পরিকল্পনা করে সাজিয়েছেন। সংগ্রহ করেছেন বিভিন্ন জাতের গাছের চারা। তার বাগানে বেশির ভাগ গাছে ফুল-ফল ও সবজি ঝুলে আছে। ফুল গাছে ফোটা ফুলগুলো সৌন্দর্য্য মেলে ধরেছে আকাশ পানে। ফুলের মধ্যে রয়েছে পাতা বাহার, গোলাপ, কামিনী, মালতী, দুবলা ফুল, নয়ন তাঁরা ও চাঁপা ফুল গাছ। তার এই ছাদ বাগানের সফলতার গল্প শুনে তার আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীসহ অনেকেই ছুটে আসেন এই ছাদ বাগান দেখতে। তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েও নিজেদের বাড়ির ছাদে বাগান শুরু করেছেন অনেকে।
শৌখিন ছাদ কৃষক মনির হোসেন সবুজ বাংলাকে বলেন, পরিবারে প্রতিদিন ভাতের সঙ্গে সবজি প্রয়োজন। অধিকাংশ কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে সবজি ফলিয়ে বাজারজাত করছে। তাতে অতিমাত্রায় বিষ ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। বিষমুক্ত সবজির জোগান মেটাতে ও ছাদের সৌন্দর্য্য বাড়াতে মূলত ছাদ বাগান করেছি।
তিনি বলেন, বছর কয়েক আগে আমার ছাদ বাগান শুরু। নানা প্রজাতির সবজি, বিভিন্ন জাতের ফুল ও ফলমূলের চাষাবাদ করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বেশি থাকে। সেই সময় পুরো বাড়ি গরম হয়ে ওঠে। ফাঁকা তপ্ত ছাদকে শীতল করতে এবং পরিবেশকে সহনীয় করতেই সবুজ বাগান করা। শখের বসেই ছাদ বাগানে বিভিন্ন ধরনের টব এবং ড্রামে পরম যত্নে বেড়ে উঠছে আমার শখের গাছগুলো। ব্যবসা করার পাশাপাশি যেটুকু সময় পাই অধিকাংশ সময় এই বাগানেই দেই।
তিনি আরও বলেন, চারা সংগ্রহ করে প্লাস্টিকের ড্রাম ও টবে লাগানো হয়। এতে ভবনের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। পরিবারের জন্য ভেজালমুক্ত ফল ও শাকসবজির জোগান দেয়ার পর আত্মীয়স্বজনের বাড়িতেও পাঠাতে পারি। আসলে গাছগুলোকে সন্তানের মতো করে লালন পালন করি।
তিনি বলেন, অধিক জনসংখ্যার এই দেশে অপরিকল্পিতভাবে যেখানে সেখানে ভবন নির্মাণের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে বাগান করার উপযুক্ত জায়গা। বাড়ির ছাদে সবুজ বাগান গড়ে তুলতে আমার এই প্রয়াস।
ছাদ বাগান দেখতে আসা স্থানীয় এক বাসিন্দা সবুজ বাংলাকে বলেন, নগরায়ণের যুগে আমরা ভূমি হারিয়ে ফেলছি। ভূমি বলতে থাকছে আমাদের একখণ্ড ছাদ। ছাদ বাগান করতে কিছু খরচ হলেও শাক-সবজি, ফুল, ফলের নিত্যদিনের পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা মেটানো যায়।
সোনারগাঁ উপজেলার বিভিন্ন বাড়িতে এরকম ছাদ বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। কর্ম জীবনের পাশাপাশি ছাদ কৃষিকাজ করছেন অনেকে। পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে ফল, ফুল, সবজি ও কলমের চারা বিক্রি করেও আয় করছেন অনেকে।
ব্যবসায়ী মনির হোসেনের আরো একটি পরিচয় রয়েছে, তিনি পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটি সোনারগাঁ শাখার সিনিয়র সহ সভাপতি। পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটি আয়োজিত মানবতার কল্যানে তিনি সমাজ সেবক হিসেবে পুরস্কারও পেয়েছেন।


























