০৩:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নওগাঁয় পেকিন জাতের হাঁস পালনে স্বাবলম্বী হচ্ছে গ্রামীণ গৃহবধূরা

নওগাঁয় দিন দিন চীনের বেইজিং বা পেকিন জাতের হাঁস পালন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মাংস উৎপাদনের পাশাপাশি গ্রামীণ গৃহবধূদের ভাগ্য বদলে দিচ্ছে মাংসের জন্য প্রসিদ্ধ এই পেকিন হাঁস। স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা মৌসুমীর মাধ্যমে জেলায় গড়ে উঠেছে শতাধিক পেকিন হাঁসের পারিবারিক খামার। সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে গৃহবধূরা বাড়ির উঠানে আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করে কেউ মাচায় আবার কেউ খাঁচায় গড়ে তুলেছেন পারিবারিক খামার। এই দ্রুত বর্ধনশীল হাঁস পালন করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন নওগাঁ সদর ও বদলগাছী উপজেলার শতাধিক গৃহবধূ।
উন্নয়ন সংস্থা মৌসুমীর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: নুর হোসেন জানান চীনের পেকিন জাতের হাঁস মূলত মাংস উৎপাদনের জন্য পালন করা হয়। এই জাতের হাঁস দেখতে আকর্ষণীয় এবং অত্যন্ত দ্রুত বর্ধনশীল। সঠিক পরিচর্যা এবং সুষম খাবারের মাধ্যমে মাত্র ৪৫ থেকে ৫০ দিনের মধ্যেই প্রতিটি হাঁস আড়াই থেকে তিন কেজি ওজন হয়। পেকিন হাঁসের পালনের জন্য মাচা পদ্ধতি সবচেয়ে কার্যকর। ২০২০-২১ অর্থবছরে পিকেএসএফ-এর অর্থায়নে এবং কারিগরি সহায়তায় মৌসুমী জেলার নওগাঁ সদর ও বদলগাছী উপজেলায় একশত গ্রামীণ গৃহবধূদের মাঝে বিনামূল্যে পেকিন হাঁস বিতরণ করে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁপানিয়া ইউনিয়নের একডালা গ্রামে বাসন্তী সমিতির আওতায় দশটি পরিবারের মধ্যে বিনামূল্যে পেকিন হাঁস, মাচার উপকরণ, খাবার এবং ভ্যাকসিন বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, এই উদ্যোগের ফলে একডালা গ্রামে ক্লাস্টার ভিত্তিক পেকিন হাঁস পালনের খামার গড়ে উঠেছে। খামারিদের উৎপাদিত হাঁসের সঠিক দাম নিশ্চিত করতে পাইকার, ফড়িয়া এবং স্থানীয় বাজারে হাঁস বিক্রেতাদের সাথে খামারিদের সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া পিকেএসএফ এর কৃষি ইউনিটভুক্ত প্রাণিসম্পদ খাতের আওতায় ২৫ জন নারীকে পেকিন হাঁস পালনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ১০০টি পেকিন হাঁস পালন করতে খরচ হয় প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। সঠিক পরিচর্যা এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রতিটি খামারি হাঁস বিক্রি করে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লাভ করতে পারেন। একডালা গ্রামের মানুষ বিশেষ করে নারীরা পেকিন হাঁস পালন তাদের জীবনে নতুন দিগন্তের সূচনা করার সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। প্রতিনিয়তই অনেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে পেকিন হাঁস পালনে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
সদর উপজেলার একডালা গ্রামের শেফালী বেগম জানান, সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে পেকিন হাঁস পালন করে তিনি অনেক লাভবান হচ্ছেন। বর্তমানে বাজারে তিনি প্রতিটি পেকিন হাঁস ৩শত থেকে ৪শত টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন। একশত হাঁস বিক্রির অর্ধেক টাকা লাভ হচ্ছে। এতে করে সংসারের টুকিটাকি খরচের জন্য এবং সন্তানদের পড়ালেখার বাড়তি খরচের টাকা স্বামীর কাছ থেকে নিতে হচ্ছে না। তিনি পেকিন হাঁস পালন করে আর্থিক ভাবে লাভবান হয়েছেন এবং সংসারের অনেক অভাবও দূর হয়েছে। আগামীতে তিনি আরো বেশি করে পেকিন হাঁস পালন করবেন বলেও জানান।
সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো: আমিনুল ইসলাম বলেন, দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় বে-সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থাও ভূমিকা রেখে চলেছে। নওগাঁয় বিদেশী দ্রুত বর্ধনশীল পেকিন জাতের হাঁস পালনে গ্রামের গৃহবধূদের উদ্বুদ্ধ করে আসছে মৌসুমীর প্রাণিসম্পদ বিভাগ। আমরা এমন কর্মকান্ডকে শতভাগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ গৃহবধূদের আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী করতে কারিগরি সহযোগিতা দিয়ে আসছি। দেশের প্রাণিসম্পদ খাতকে এগিয়ে নিতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে এমন সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে বলেও তিনি জানান।
জনপ্রিয় সংবাদ

একনেক সভায় ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকার ২২ প্রকল্প অনুমোদন

নওগাঁয় পেকিন জাতের হাঁস পালনে স্বাবলম্বী হচ্ছে গ্রামীণ গৃহবধূরা

আপডেট সময় : ০৪:৩০:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫
নওগাঁয় দিন দিন চীনের বেইজিং বা পেকিন জাতের হাঁস পালন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মাংস উৎপাদনের পাশাপাশি গ্রামীণ গৃহবধূদের ভাগ্য বদলে দিচ্ছে মাংসের জন্য প্রসিদ্ধ এই পেকিন হাঁস। স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা মৌসুমীর মাধ্যমে জেলায় গড়ে উঠেছে শতাধিক পেকিন হাঁসের পারিবারিক খামার। সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে গৃহবধূরা বাড়ির উঠানে আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করে কেউ মাচায় আবার কেউ খাঁচায় গড়ে তুলেছেন পারিবারিক খামার। এই দ্রুত বর্ধনশীল হাঁস পালন করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন নওগাঁ সদর ও বদলগাছী উপজেলার শতাধিক গৃহবধূ।
উন্নয়ন সংস্থা মৌসুমীর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: নুর হোসেন জানান চীনের পেকিন জাতের হাঁস মূলত মাংস উৎপাদনের জন্য পালন করা হয়। এই জাতের হাঁস দেখতে আকর্ষণীয় এবং অত্যন্ত দ্রুত বর্ধনশীল। সঠিক পরিচর্যা এবং সুষম খাবারের মাধ্যমে মাত্র ৪৫ থেকে ৫০ দিনের মধ্যেই প্রতিটি হাঁস আড়াই থেকে তিন কেজি ওজন হয়। পেকিন হাঁসের পালনের জন্য মাচা পদ্ধতি সবচেয়ে কার্যকর। ২০২০-২১ অর্থবছরে পিকেএসএফ-এর অর্থায়নে এবং কারিগরি সহায়তায় মৌসুমী জেলার নওগাঁ সদর ও বদলগাছী উপজেলায় একশত গ্রামীণ গৃহবধূদের মাঝে বিনামূল্যে পেকিন হাঁস বিতরণ করে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁপানিয়া ইউনিয়নের একডালা গ্রামে বাসন্তী সমিতির আওতায় দশটি পরিবারের মধ্যে বিনামূল্যে পেকিন হাঁস, মাচার উপকরণ, খাবার এবং ভ্যাকসিন বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, এই উদ্যোগের ফলে একডালা গ্রামে ক্লাস্টার ভিত্তিক পেকিন হাঁস পালনের খামার গড়ে উঠেছে। খামারিদের উৎপাদিত হাঁসের সঠিক দাম নিশ্চিত করতে পাইকার, ফড়িয়া এবং স্থানীয় বাজারে হাঁস বিক্রেতাদের সাথে খামারিদের সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া পিকেএসএফ এর কৃষি ইউনিটভুক্ত প্রাণিসম্পদ খাতের আওতায় ২৫ জন নারীকে পেকিন হাঁস পালনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ১০০টি পেকিন হাঁস পালন করতে খরচ হয় প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। সঠিক পরিচর্যা এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রতিটি খামারি হাঁস বিক্রি করে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লাভ করতে পারেন। একডালা গ্রামের মানুষ বিশেষ করে নারীরা পেকিন হাঁস পালন তাদের জীবনে নতুন দিগন্তের সূচনা করার সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। প্রতিনিয়তই অনেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে পেকিন হাঁস পালনে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
সদর উপজেলার একডালা গ্রামের শেফালী বেগম জানান, সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে পেকিন হাঁস পালন করে তিনি অনেক লাভবান হচ্ছেন। বর্তমানে বাজারে তিনি প্রতিটি পেকিন হাঁস ৩শত থেকে ৪শত টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন। একশত হাঁস বিক্রির অর্ধেক টাকা লাভ হচ্ছে। এতে করে সংসারের টুকিটাকি খরচের জন্য এবং সন্তানদের পড়ালেখার বাড়তি খরচের টাকা স্বামীর কাছ থেকে নিতে হচ্ছে না। তিনি পেকিন হাঁস পালন করে আর্থিক ভাবে লাভবান হয়েছেন এবং সংসারের অনেক অভাবও দূর হয়েছে। আগামীতে তিনি আরো বেশি করে পেকিন হাঁস পালন করবেন বলেও জানান।
সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো: আমিনুল ইসলাম বলেন, দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় বে-সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থাও ভূমিকা রেখে চলেছে। নওগাঁয় বিদেশী দ্রুত বর্ধনশীল পেকিন জাতের হাঁস পালনে গ্রামের গৃহবধূদের উদ্বুদ্ধ করে আসছে মৌসুমীর প্রাণিসম্পদ বিভাগ। আমরা এমন কর্মকান্ডকে শতভাগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ গৃহবধূদের আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী করতে কারিগরি সহযোগিতা দিয়ে আসছি। দেশের প্রাণিসম্পদ খাতকে এগিয়ে নিতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে এমন সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে বলেও তিনি জানান।