মোঃ সহিদুল ইসলাম,লক্ষীপুর
সারাদেশের মতো ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাব পড়েছে লক্ষীপুর। এর প্রভাবে হওয়া ভারী বর্ষণে জেলায় আমন ধানসহ ১৯ হাজার ৪২০ হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে। এরমধ্যে কাঁচাপাকা আমন ধান ১৮ হাজার হেক্টর ও শীতকালীন শাকসবজি এক হাজার হেক্টর জমি রয়েছে। ফলে জমিতে চাষ করা কৃষকের স্বপ্ন এখন ধুলিসাতের পথে।
গেল মাসে শুক্রবারের হওয়া এ ঝড়ের কারণে জেলা সদর সহ রামগতি, কমলনগর, রামগঞ্জ ও রায়পুর উপজেলার প্রায় ২১১টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৬১টি ঘর আংশিক
ক্ষতিগ্রস্ত এবং ৫০টি কাঁচাঘর পুরো বিধ্বস্ত হয়। বিভিন্নস্থানে গাছ উপড়ে শতাধিক বিদ্যুতের খুঁটি বিধ্বস্ত হয়। এতে জেলার অনেক জায়গা বিদ্যুৎহীন হয়ে ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। অবশ্য পরে পরিবেশ স্বাভাবিক হয়।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, মিধিলি ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে লক্ষীপুর ভারী বর্ষণে প্রায় ১৯ হাজার ৪২০ হেক্টর জমির ফসল বৃষ্টির পানিতে আক্রান্ত হয়। এরমধ্যে রোপা আমন ১৮ হাজার ও বোনা আমন ধান ৩০০ হেক্টর। টমেটো, মুলা, বাঁধাকপি ও ফুলকপিসহ শীতকালীন শাকসবজির এক হাজার হেক্টর জমি রয়েছে। বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ৭৫ হেক্টর সয়াবিন, ৩০ হেক্টর সরিষা ও ১৫ হেক্টর জমির খেসারির ক্ষেত। জেলায় ৮৩ হাজার ৫০৯ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। শীতের সবজির আবাদ হয় তিন হাজার হেক্টর জমিতে।
সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জের চর-মনসা গ্রামের কৃষক আবু কালাম বলেন, বৃষ্টিতে পানি জমে আমার টমেটো, ফুল-বাঁধাকপি, মুলা, মরিচ ক্ষেত হলদে-বিবর্ণ হয়ে গেছে। এতে দেড় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ঋন নিয়ে চাষ করেছে এখন কি হবে।
একই এলাকার কৃষক মো. আজাদ বলেন, শীতকালীন সবজি ক্ষেত করে আমার দুই লাখ টাকা ব্যয় হয়। এখন বৃষ্টিতে সর্বনাশ হয়ে গেছে। হাতে ১৫ দিন সময় পেলে সব
সবজিই বিক্রি করা যেত। চরভুতা গ্রামের কৃষক আবদুর রশিদ বলেন, তিন লাখ টাকা ধারদেনা করে আমন ধান ও শীতকালীন শাকসবজির আবাদ করেছি। ফসল উঠলে বিক্রি করে ১০ লাখ টাকা লাভ হতো। ভারী বর্ষণে সে স্বপ্ন মাটিতে মিশে গেছে। এখন ঋণ পরিশোধ করা নিয়ে চিন্তায় আছি।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. জাকির হোসেন বলেন, কয়েকটি জায়গায় আমন ধানের গাছ ভেঙে পড়েছে। আমন ও সবজিক্ষেতে পানি জমে আছে। পানি দ্রুত নেমে গেলে ধানসহ ফসলের ক্ষতি কম হবে। আরও দু-একদিন সময় লাগবে ক্ষতির পরিমাণ জানতে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ইউনুস মিয়া বলেন, ঝড়ে ১৬১টি বসতঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত এবং ৫০টি পুরো বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এদিকে ঝড়ের তাণ্ডবে সদর উপজেলার পোদ্দার বাজার, লাহারকান্দি, ভবানীগঞ্জসহ জেলার বিভিন্নস্থানে গাছ ভেঙে বিদ্যুতের খুঁটিতে পড়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। জেলার অধিকাংশ স্থানে বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হয়। মোবাইল নেটওয়ার্ক অকার্যকর হয়ে পড়ে। তবে শনিবার দুপুরে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
লক্ষীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, জেলায় ১০ হাজার কিলোমিটার পল্লী বিদ্যুৎ লাইন রয়েছে। সবশেষ পাওয়া তথ্যমতে ঝড়ে বিভিন্নস্থানে ১০০ এর বেশি খুঁটি পড়ে গেছে। গাছপালা পড়ে ৩০০ এর বেশি স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে গেছে। এতে প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।


























