আজ সকাল থেকে ভোটারদের উপস্থিতিতে বহু কাঙ্খিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন চট্টগ্রামের প্রায় দেড় হাজার ভোট কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। গতকাল শনিবার চট্টগ্রামে দিনভর কেটেছে এক ধরনের নিরবতা। ব্যস্ততম বন্দর নগরীর রাস্তাঘাট ছিল ফাঁকা। ট্রাফিক সিগন্যাল গুলোতে ছিলনা গাড়ীর চাপ। মার্কেট, শপিংমল গুলোতে ছিলনা ক্রেতার ভীড়। গতকাল নির্বাচনের প্রার্থী ও তাদের একান্ত বিশ্বস্ত লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি কেন্দ্রে বিশ্বস্ত এজেন্ট বসানোর জন্য তালিকা তৈরির কাজ চলছে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন নেয়া অখ্যাত রাজনৈতিক দল গুলোর প্রার্থীরা বেশীর ভাগ কেন্দ্রে নিজেদের এজেন্ট বসানোর জন্য লোকও খুঁজে পাচ্ছেন না বলে সংশ্লষ্টি একাধিক সূত্রে জানা গেছে। চট্টগ্রামের ১৬ টি সংসদীয় আসনে ছোটখাট রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর অবস্থা একই বলে জানা গেছে। এলাকার ভোটারদের কাছে এসব দলের প্রার্থীরা ডামি প্রার্থী হিসাবে পরিচিত। এসব ডামি প্রার্থীর এজেন্ট প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে বসানো হচ্ছে। তবে এসব এজেন্টদের বেশীর ভাগই আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের স্ব- স্ব এলাকার নেতাকর্মী। এছাড়া এলাকার গরীব লোকজনকে মোটা অংকের বেতন দিয়ে এজেন্ট হিসাবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে এসব ডামি প্রার্থীর পক্ষে। ফলে একাধিক ডামি প্রার্থীর এজেন্ট সংগ্রহ নিয়েও কোন কোন এলাকার ভোট কেন্দ্রের আশেপাশের সরকারী দলের প্রার্থীর নেতাকর্মীদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে বিভিন্ন এলাকার নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছেন। চট্টগ্রামের প্রায় প্রতিটি সংসদীয় আসনে পাঁচ থেকে ছয়টি রাজনিতিক দলের ডামি প্রার্থী রয়েছেন। এসব ডামি প্রার্থীর জন্য ভোট কেন্দ্রের প্রতিটি বুথে এজেন্ট বসানোর কাজ অনেকটা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছেন। ভোট কেন্দ্রে দেশী – বিদেশী কোন পর্যবেক্ষক আকস্মিক ভাবে কেন্দ্রে এসে বিভিন্ন প্রার্থীর এজেন্ট আছে কি না জানতে চাইলে, যাতে এসব ডামি প্রার্থীর এজেন্ট পাওয়া যায়, তা নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকদের বাড়তি টেনশন পোহাতে হচ্ছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে। তবে চট্টগ্রামের যে নয় – দশটি আসনে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে এবং লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন, সেইসব এলাকায় ছোটখাট দলের প্রার্থীর এজেন্ট চড়া দামে বেচাকেনা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নয় থেকে দশটি সংসদীয় আসনে নৌকার প্রার্থী কিছু ডামি এজেন্ট কিনেছে, আর কিছু কিনে নিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন।
গতকাল চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংসদীয় আসনের সাধারণ ভোটারদের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তারা জানান, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, সাতকানিয়া, পটিয়া, চন্দনাইশ, মিরসরাই, হাটহাজারী, চান্দগাঁও আংশিক – বোয়ালখালী, পতেঙ্গা – হালিশহর, ডবলমুরিং- আকবরশাহ – পাহাড়তলী, ফটিকছড়ি ও সন্দ্বীপ সংসদীয় আসনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। এসব সংসদীয় আসনে হেভিওয়েট প্রার্থীদের কর্মী – সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করেছেন স্থানীয়রা।প্রার্থীদের কর্মী – সমর্থকরা ইতিমধ্যে নিয়ন্ত্রনাধীন এলাকায় একক আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ, আনসার ও প্রিজাইডিং অফিসারকে ম্যানেজ করে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে জিতে নিতে নানা কৌশলের ছক এঁকেছে লড়াকু ভোটের কারিগর নেতাকর্মীরা। অনেক এলাকায় ক্যাডাররা তাদের প্রিয় নেতাকে যেভাবে হোক নির্বাচনে জয়ী করতে অস্ত্রের মজুদও করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনের নজরদারি না থাকলে, চট্টগামের অধিকাংশ সংসদীয় এলাকায় সংঘাতের আশংকা করেছেন নিরীহ ও সচেতন ভোটাররা।
ভোটারদের প্রত্যক্ষ উপস্থিতি ভোট হওয়ার আশংকা থাকায় চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি সংসদীয় এলাকায় পুঁজিবাদী হেভিওয়েট প্রার্থীরা লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেন করছেন কর্মী – সমর্থকদের মাঝে। প্রয়োজনে নিরব গরীব ও দরিদ্র ভোটারদের ক্যাশ টাকা দিয়ে ভোট কেন্দ্রে এনে ভোট প্রয়োগ করার পরিকল্পনা করছেন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। কেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ টাকা যাতে কারো পকেটে না ঢুকতে পারে, তার জন্য মনিটরিং কমিটি সজাগ দৃষ্টি রেখে যাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন। অনেক হেভিওয়েট প্রার্থী ভোট কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি বাড়াতে ভোটারদের জন্য দুপুরের খাবারের ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। চট্টগ্রামে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী থাকায় এবারের নির্বাচনে কোন প্রার্থী শেষসময়ে বিজয়ের মালা গলায় নিয়ে উৎসব করবেন, তা নিয়ে ব্যাপক সংশয় দেখা দিয়েছে।
উপরের কোন ধরনের হস্তক্ষেপ না আসলে চট্টগ্রামের সংসদীয় আসন গুলোর মধ্যে বেশীর ভাগ আসনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এমন প্রত্যাশা করেছেন ভোটের মাঠে সক্রিয় ভাবে অবস্থান নেয়া নেতাকর্মীরা।
প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা থাকায় নির্বাচন কমিশন চট্টগ্রামের সংসদীয় আসনে দুই হাজার ২৩ টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে প্রায় দেড় হাজার ভোট কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। এসব ভোট কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন নির্বাচন কমিশন। চট্টগ্রামের প্রতিটি এলাকায় বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তারপরও সাধারণ ভোটারদের মাঝে দেখা দিয়েছে অজানা আতঙ্ক।
এদিকে চট্টগ্রাম মহানগরীসহ চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন হাট বাজারে ঝটিকা অভিযান চালিয়ে একদলীয় নির্বাচন প্রতিহত করার আহবানসহ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আহবান জানিয়ে লিফলেট বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন। একই সাথে চট্টগ্রামের বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতারা অনেকটা গা ডাকা দিয়ে আত্মগোপনে রয়েছে গ্রেফতার এড়াতে। সব মিলিয়ে চাপা উত্তেজনাসহ অজানা আতঙ্কের উপর ভর করে চট্টগ্রামে ১৬ সংসদীয় আসনে আজকে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রিটানিং অফিসারের কার্যালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, সকল প্রকার প্রস্তুতি নিয়েই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে সর্বাত্মক কাজ চলেছে। ভোটারদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রেখেই প্রশাসন মাঠে কাজ করছেন। ফলে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে এসে নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন রিটার্নি অফিসারের কার্যালয়ে দায়িত্বরত উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।


























