০৩:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রংপুরে বোরো ধানের ফলন ভাল হলেও দাম নিয়ে শঙ্কা

রংপুরে চারদিক মাঠ জুড়ে শোভা যাচ্ছে ধান ক্ষেত। সবুজে ঢাকা বোরো ক্ষেতের পরিচর্চার সঙ্গে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন চাষিরা। অনুকুল আবহাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে ভালো ফলনের আশাও করছেন তারা। তবে ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে এবারও হিসাব-নিকাশ কষছেন অনেকেই। মিঠাপুকুর উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর গ্রামের কৃষক সহিদুল ইসলাম বলেন, এবার চার বিঘা জমিত আগুর নমলা (আগাম-লেট) ধান চাষ করছুং বাহে। এ্যলাও তেমন কোনো সমস্যা হয় নাই। আল্লাহর রহমতে ধান ভালোয় হইচে। তেমন পোকামাকড় হয় নাই। ওষুধও তেমন দেওয়া নাগে নাই। গরোম বেশি হইলেও ধান হামার ভালোই হইছে। মনে হয়চে আকাশ ভালো থাকলে গতবারের চেয়া বেশি ধান পামো। কিন্তুক বেচাবার গেইলে দাম পামো কিনা তাকে নিয়্যা চিন্তা।

 

 

এদিকে নিয়মিত পরিচর্যায় বোরো ধানক্ষেতগুলো আশার আলো দেখালেও আবহাওয়ার গতিবিধির ওপর নির্ভর করছে ফলনের ভবিষ্যৎ। বিস্তৃত ফসলের মাঠজুড়ে সবুজের চাদরে ভরছে চলতি মৌসুমে বোরো ধানের ক্ষেতগুলো। সবুজের সমারোহ দেখে চাষিদের মুখে ফুটছে হাসি, বুকে বুনছে সোনালী স্বপ্ন। তবে সার সেচ ও কীটনাশক ব্যবহারে খরচের হিসাব গুনে ধানের দাম নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা। জানা যায়, ভালো ফলনের আশায় ফসলের মাঠে চাষিরা নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। তবে খরাময় প্রকৃতিতে বৃষ্টি ঝড়ার সম্ভাবনা ঘনিয়ে আসায় কোথাও কোথাও চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, ফলন ভালো হওয়াতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

 

 

রংপুর জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় চাষযোগ্য ফসলি জমি ১ লক্ষ ৮৯ হাজার ৫১৪ হেক্টর। চলতি মৌসুমে জেলায় বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লক্ষ ৩২ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে। চাষ করা হয়েছে ১ লক্ষ ৩২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লক্ষ ৯২ হাজার ৮০১ মেট্রিক টন চাল। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ফলন বেশি হবে। আগাম বোরো জাতের ধান মে মাসের প্রথম সপ্তাহ হতে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে কর্তন করা হবে। এছাড়া আউশ ধান চাষে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে। চাষ হয়েছে ৩০ হাজার হেক্টর। উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯২ হাজার ৯২৫ মেট্রিক টন চাল। বদরগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের কৃষক আলমগীর বাদশা বলেন, বোরো ধানের ফলন এবার ভালো হয়েছে, চাষিরা ধান বিক্রয় করে খরচ তুলতে পারে না। এ বছর খরার কারণে দ্বিগুণ সেচ দিতে হচ্ছে জমিতে। সার ও সেচের খরচ বেড়েছে। মধ্যস্বত্বভোগী ও ব্যবসায়ীরা যাতে কৃষকের ঘামে উৎপাদিত সোনালী ধানের দাম নিয়ে সিন্ডিকেট করতে না পারে।

 

 

তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের জগদীশপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ওয়াজেদ আলী বলেন, আগাম উচ্চ ফলনশীল ধান ও দুই ফসলি জমিতে জিংঙ্ক প্রোটিন সমৃদ্ধ ধান চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। বোরো ধানে বা¤পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করা হচ্ছে তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রোগবালাই কম হয়েছে। গংগাচড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ শাহিনুর ইসলাম বলেন, বোরো ধান এবার ভালো ফলন হবে। মাঠ পর্যায়ে বোরো মৌসুমে ব্রি-ধান জিং সমৃদ্ধ ৭৪, ৮৪, বঙ্গবন্ধু ১০০।

 

 

উচ্চ ফলনশীল ব্রি-ধান ২৮, ২৯, ৮৮, ৯২, ৯৬, ১০০, ১০২, ১০৩ ও বিআর ১৪। আউশ হিসেবে ব্রি-ধান ৯৮, ৮৫, ৮৭, বিনা ২০, ২১ চাষ হচ্ছে। বিরুপ আবহওয়ার কারণে সেচ বেশি লেগেছে, তবে নেক ব্লাস্ট, সীট ব্লাস্ট রোগ তেমন হয়নি। চাষিরা ধান কাটা ও মাড়াই শুরু করেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুরের উপ-পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, চলতি মৌসুমে শেষের দিকে অতি খরার কারণে উৎপাদন খরচ কিছুটা বেড়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক আছে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাগণ মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছে। আমরা আশা করা হচ্ছে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। সারা দেশের ন্যায় রংপুর অ লেও তাপমাত্রা বেশি হলেও বোরো ও আউশ ধানের ফলন ভালো হবে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহ হতে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে কর্তন করা হবে। আগাম বোরো ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো ফলন ও ভালো দাম পাবে কৃষকগণ।

 

 

গত ২১ এপ্রিল বোরো মৌসুমের ধান ও চালের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এবার বোরো সংগ্রহ ২০২৪ মৌসুমে ৫ লক্ষ টন ধান, ১১ লক্ষ টন সিদ্ধ চাল, আতপ চাল ১ লক্ষ টন এবং ৫০ হাজার টন গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি কেজি বোরো ধানের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২ টাকা, সিদ্ধ চাল ৪৫ টাকা, আতপ চাল ৪৪ টাকা এবং গম ৩৪ টাকা। ব্রি ধান ৮৯, ব্রি ধান ৯২, বঙ্গবন্ধু ধান ১০০, ব্রি ধান ১০২, বিনাধান ২৫ প্রভৃতি নতুন জাতগুলোর ফলন আগের পুরোনো জাত ব্রি ধান ২৮ ও ২৯ এর তুলনায় অনেক বেশি। এসব জাতের নতুন ধান চাষ করে কৃষকরা ফলন ভাল পেয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

সব রেকর্ড ভেঙে স্বর্ণের দামে নতুন ইতিহাস, ভরি ছাড়াল দুই লাখ ২৭ হাজার

রংপুরে বোরো ধানের ফলন ভাল হলেও দাম নিয়ে শঙ্কা

আপডেট সময় : ০৪:৪০:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ মে ২০২৪

রংপুরে চারদিক মাঠ জুড়ে শোভা যাচ্ছে ধান ক্ষেত। সবুজে ঢাকা বোরো ক্ষেতের পরিচর্চার সঙ্গে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন চাষিরা। অনুকুল আবহাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে ভালো ফলনের আশাও করছেন তারা। তবে ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে এবারও হিসাব-নিকাশ কষছেন অনেকেই। মিঠাপুকুর উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর গ্রামের কৃষক সহিদুল ইসলাম বলেন, এবার চার বিঘা জমিত আগুর নমলা (আগাম-লেট) ধান চাষ করছুং বাহে। এ্যলাও তেমন কোনো সমস্যা হয় নাই। আল্লাহর রহমতে ধান ভালোয় হইচে। তেমন পোকামাকড় হয় নাই। ওষুধও তেমন দেওয়া নাগে নাই। গরোম বেশি হইলেও ধান হামার ভালোই হইছে। মনে হয়চে আকাশ ভালো থাকলে গতবারের চেয়া বেশি ধান পামো। কিন্তুক বেচাবার গেইলে দাম পামো কিনা তাকে নিয়্যা চিন্তা।

 

 

এদিকে নিয়মিত পরিচর্যায় বোরো ধানক্ষেতগুলো আশার আলো দেখালেও আবহাওয়ার গতিবিধির ওপর নির্ভর করছে ফলনের ভবিষ্যৎ। বিস্তৃত ফসলের মাঠজুড়ে সবুজের চাদরে ভরছে চলতি মৌসুমে বোরো ধানের ক্ষেতগুলো। সবুজের সমারোহ দেখে চাষিদের মুখে ফুটছে হাসি, বুকে বুনছে সোনালী স্বপ্ন। তবে সার সেচ ও কীটনাশক ব্যবহারে খরচের হিসাব গুনে ধানের দাম নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা। জানা যায়, ভালো ফলনের আশায় ফসলের মাঠে চাষিরা নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। তবে খরাময় প্রকৃতিতে বৃষ্টি ঝড়ার সম্ভাবনা ঘনিয়ে আসায় কোথাও কোথাও চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, ফলন ভালো হওয়াতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

 

 

রংপুর জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় চাষযোগ্য ফসলি জমি ১ লক্ষ ৮৯ হাজার ৫১৪ হেক্টর। চলতি মৌসুমে জেলায় বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লক্ষ ৩২ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে। চাষ করা হয়েছে ১ লক্ষ ৩২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লক্ষ ৯২ হাজার ৮০১ মেট্রিক টন চাল। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ফলন বেশি হবে। আগাম বোরো জাতের ধান মে মাসের প্রথম সপ্তাহ হতে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে কর্তন করা হবে। এছাড়া আউশ ধান চাষে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে। চাষ হয়েছে ৩০ হাজার হেক্টর। উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯২ হাজার ৯২৫ মেট্রিক টন চাল। বদরগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের কৃষক আলমগীর বাদশা বলেন, বোরো ধানের ফলন এবার ভালো হয়েছে, চাষিরা ধান বিক্রয় করে খরচ তুলতে পারে না। এ বছর খরার কারণে দ্বিগুণ সেচ দিতে হচ্ছে জমিতে। সার ও সেচের খরচ বেড়েছে। মধ্যস্বত্বভোগী ও ব্যবসায়ীরা যাতে কৃষকের ঘামে উৎপাদিত সোনালী ধানের দাম নিয়ে সিন্ডিকেট করতে না পারে।

 

 

তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের জগদীশপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ওয়াজেদ আলী বলেন, আগাম উচ্চ ফলনশীল ধান ও দুই ফসলি জমিতে জিংঙ্ক প্রোটিন সমৃদ্ধ ধান চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। বোরো ধানে বা¤পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করা হচ্ছে তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রোগবালাই কম হয়েছে। গংগাচড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ শাহিনুর ইসলাম বলেন, বোরো ধান এবার ভালো ফলন হবে। মাঠ পর্যায়ে বোরো মৌসুমে ব্রি-ধান জিং সমৃদ্ধ ৭৪, ৮৪, বঙ্গবন্ধু ১০০।

 

 

উচ্চ ফলনশীল ব্রি-ধান ২৮, ২৯, ৮৮, ৯২, ৯৬, ১০০, ১০২, ১০৩ ও বিআর ১৪। আউশ হিসেবে ব্রি-ধান ৯৮, ৮৫, ৮৭, বিনা ২০, ২১ চাষ হচ্ছে। বিরুপ আবহওয়ার কারণে সেচ বেশি লেগেছে, তবে নেক ব্লাস্ট, সীট ব্লাস্ট রোগ তেমন হয়নি। চাষিরা ধান কাটা ও মাড়াই শুরু করেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুরের উপ-পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, চলতি মৌসুমে শেষের দিকে অতি খরার কারণে উৎপাদন খরচ কিছুটা বেড়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক আছে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাগণ মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছে। আমরা আশা করা হচ্ছে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। সারা দেশের ন্যায় রংপুর অ লেও তাপমাত্রা বেশি হলেও বোরো ও আউশ ধানের ফলন ভালো হবে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহ হতে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে কর্তন করা হবে। আগাম বোরো ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো ফলন ও ভালো দাম পাবে কৃষকগণ।

 

 

গত ২১ এপ্রিল বোরো মৌসুমের ধান ও চালের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এবার বোরো সংগ্রহ ২০২৪ মৌসুমে ৫ লক্ষ টন ধান, ১১ লক্ষ টন সিদ্ধ চাল, আতপ চাল ১ লক্ষ টন এবং ৫০ হাজার টন গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি কেজি বোরো ধানের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২ টাকা, সিদ্ধ চাল ৪৫ টাকা, আতপ চাল ৪৪ টাকা এবং গম ৩৪ টাকা। ব্রি ধান ৮৯, ব্রি ধান ৯২, বঙ্গবন্ধু ধান ১০০, ব্রি ধান ১০২, বিনাধান ২৫ প্রভৃতি নতুন জাতগুলোর ফলন আগের পুরোনো জাত ব্রি ধান ২৮ ও ২৯ এর তুলনায় অনেক বেশি। এসব জাতের নতুন ধান চাষ করে কৃষকরা ফলন ভাল পেয়েছে।