লাউয়ের বীজ উৎপাদন করে অর্ধকোটি টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিস্তার চরের কৃষক আবু সাঈম। প্রতিবারের ন্যায় চলতি বছরেও চরে আট একর জমি লিজ নিয়ে করেন লাউ চাষ। দীর্ঘ আট মাস পরিচর্যার পর ফলন দেখে খুশি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘন্টা ইউনিয়নের কৃষক আবু সাঈম। তিনি সেই লাউ থেকে উৎপাদন করছেন বীজ। গজঘন্টা ইউনিয়নের ছালাপাক তিস্তার চড়ে দেখা যায়, পরিপক্ক লাউ থেকে বীজ বের করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আবু সাঈমসহ কয়েকজন। বালুচরের উপরে লাউয়ের গাছ থেকে পরিপক্ক লাউগুলো এনে স্তুপ করছে তারা। তবে সারি সারি স্তুপ করা এসব লাউয়ের দিকে তাকালে বোঝার উপায় নেই এমন সোনার ফসল তিস্তার বালুচরের। আবু সাঈম বলেন, স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে চাকরির পাশাপাশি তিস্তার বালুচরে পাঁচ বছর ধরে লাউয়ের বীজ উৎপাদন করে আসছে। এবারও সাঈম চরে বীজ উৎপাদনের জন্য লাউ চাষ করেন।
অসময়ে বর্ষার আতঙ্ক আর খরার শুকনো বালুতে আট মাস ঘাম ঝড়ানো পরিশ্রম করে ফসল দেখে হাসি ফুটেছে। প্রায় ৫ লক্ষ টাকা খরচ করে লাউ চাষ করা হয়েছে। সেই লাউ থেকে উৎপাদিত লাউ বীজে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা আয়ের স্বপ্ন আবু সাঈমের। তবে বাজার দর খারাপ হলে এ আয় কিছুটা কম হতে পারে। আবু সাঈম বলেন, রংপুর নগরীর সিটি বাজার থেকে লাল তীর কো¤পানির ভিত্তি বীজ এনে রোপন করেছিলে। অনেক কষ্ট করে কখনও সেচ বা কখনও নদী থেকে পানি তুলে এনে সতেজ রেখেছিলেন লাউয়ের গাছগুলোকে। মাচাং পদ্ধতিতে চাষ না করে বালির উপরে ছিলো ফসলের লাউগুলো। তবে কোনো ক্ষতি হয়নি এতে বরং ফলন ভালো হয়েছে। একর প্রতি ২০ থেকে ২৫ মণ বীজ উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। খুচরা বাজারে এসব বীজ ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা মণ বিক্রয় হয়।
আর কো¤পানির নির্ধারিত দাম মণ প্রতি ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। তবে কো¤পানি বা বিএডিসির মান সম্পূর্ণ বীজ উৎপাদন করে নির্ধারিত দাম পেতে সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করেন কৃষক আবু সাঈম। শুধু আবু সাঈম নয় তার মতো গঙ্গাচড়ার গজঘন্টা ইউনিয়নের তিস্তার চরের মানিক, আজমল, কালামসহ প্রায় শতাধিক কৃষকের ভাগ্য বদলিয়েছে লাউ, মিষ্টি কুমড়া সবজি বীজ উৎপাদন করে। কয়েক বছর আগেও পরিবার নিয়ে যারা অভাবে দিন কাটাতো এখন তারাই সবজি বীজ উৎপাদন করে স্বচ্ছলতার দেখা পেয়েছেন। লাউ বিক্রয়ের চেয়ে বীজে ৬ থেকে ৭ গুন বেশি লাভ হয় বলে জানান কৃষকরা। বর্ষায় ভাঙন আর শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে ধুধু বালুচর উত্তরের তিস্তার এমন চিত্র যুগের পর যুগ। এসব প্রতিকূল পরিবেশের সাথে যুদ্ধ করে বালুচরে লাউয়ের বীজ উৎপাদন করে ভাগ্য বদলেছে আবু সাঈমসহ প্রায় অর্ধশতাধিক কৃষকের। তাদের সকলের মুখে চোখে স্বচ্ছলতার প্রতিচ্ছবি।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, জেলায় চলতি মৌসুমে ৫শত হেক্টরের অধিক জমিতে লাউ চাষ হয়েছে। তার মধ্যে প্রায় অর্ধেক বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যে চাষ করেছেন কৃষকরা। সবজি হিসেবে লাউ বিক্রয়ের পরিবর্তে বীজ উৎপাদন করলে কয়েক গুন বেশি লাভ হওয়ায় চাষিরা বীজ প্রক্রিয়ার দিকে ঝুঁকছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বীজ উৎপাদনকারী এসব চরে চাষীদের নানাভাবে পরামর্শ প্রদান করে আসছে। তবে চাষীদের ন্যায্য মূল্য পেতে বীজ কো¤পানিগুলোর সাথে কৃষকদের আন্তঃস¤পর্কের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে সবজি উৎপাদন কয়েকগুণ বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে সবজিতে উচ্চ ফলনশীলতা। বিক্ষিপ্তভাবে বীজ উৎপাদনকারীরা প্রশিক্ষণসহ ন্যায্য মূল্যের নিশ্চয়তা পেলে স্বচ্ছলতা ফিরবে হাজারো কৃষক পরিবারে।


























