০১:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাংবাদিকদেরও একটা রাজনীতি আছে : মাহমুদা চৌধুরী

স্বাধীন বাংলাদেশে সাংবাদিকতায় যেসব নারী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম মাহমুদা চৌধুরী। তিনি চল্লিশ বছর ধরে এই পেশায় থেকে পেশাকে সমৃদ্ধ করেছেন। দীর্ঘ সাংবাদিকতা ক্যারিয়ারে পেরিয়েছেন নানা চড়াই-উৎরাই। তিনি একান্ত আলাপচারিতায় বলেছেন, তার জীবনের না বলা অনেক কথা। তার সাক্ষাতকার নিয়েছেন দৈনিক সবুজ বাংলা’র রিপোর্টার তাসকিনা ইয়াসমিন। আজ থেকে ধারাবাহিকভাবে তার সাক্ষাতকার ছাপা হচ্ছে। 
পর্ব-৪

বরেণ্য পরিচালক আলমগীর কবীর বিচিত্রা সম্পাদক শাহাদাত চৌধুরীর কাছে রিপোর্টার হবার জন্য নিয়ে যান

আমি বেগমে কাজ করতে করতে ফিল্ম আর্কাইভস এবং ইনস্টিটিউটে যাই। সেইসময় ফিল্ম এপ্রেশিয়েশন কোর্স ছিল ৬ মাসের। একদিন করে তো, বাসা থেকে যেয়ে ক্লাস করতাম। ঐ সময় আমাকে লেখালেখিতে আমার হাতটা ভাল ছিল। আমার সঙ্গে তখন ভর্তি হয়েছে তানভীর মোকাম্মেল, মিলি রেজা, রেহনুমা আহমেদ, মানজারে হাসিন, সাজ্জাদ জহির। এরা সবাই আমার ক্লাসমেট। পরীক্ষা দেয়ার পরে ফরিদুর রহমান বলে একজন টিভির পরিচালক প্রযোজক ছিলেন নিউজের। ও ফার্স্ট হলো। আমি হলাম নাইনথ! মেয়েদের মধ্যে প্রথম, ছেলেমেয়েদের মধ্যে নাইনথ হলাম। মোরশেদুল ইসলাম টেনথ হলো। এই ১০ জনের মধ্যে তারা কিন্তু এখনও ৮০ শতাংশ ফিল্মের মধ্যে রিলেটেড। আর বাকিসব কিন্তু ঐরকম দেখিনা। এই ১০ জনই আমরা দেখলাম ফিল্মটাকে নিয়ে সত্যি খুব সিরিয়াসলি কাজ করছি আমরা।
আলমগীর কবীর একদিন আমাকে বললেন, মাহমুদা তুমি ভাল পত্রিকায় যাও না কেন! এটা তো সিলেক্টিভ পিপলদের জন্য।

তুমি আরও ভাল পত্রিকায় আস না কেন? বললাম স্যার আমার তো কোন লিংক নাই। আমি তো কাউকে চিনি না। তখন স্যার বলল করতে চাও কিনা বলো! আমি সাহস করে বললাম, আমি যদি সুযোগ পাই তো করব! কিন্তু আমি জানি, আমার বাসায় হয়ত বাধা আসবে কিন্তু আমি ডেসপারেট। তখন উনি বললেন, ঠিক আছে আমি একটু কথা বলি। আমাকে উনি বললেন, মাহমুদা তুমি বিচিত্রায় কাজ করবে? আমি বললাম, বিচিত্রায়! সেখানে তো সব বড়রা কাজ করে। কাউকে তারা পাত্তা দেয়না। ওদের আচরণটা আমার ভাল লাগেনা। তাদের সঙ্গে কাজ করা যাবে না।
উনি বললেন, তুমি যদি কাজ করতে চাও তাহলে বলো আমি বললাম স্যার আমি কি পারব?
তখন উনি বললেন, তুমি মেধাবী তুমি পারবে। তুমি নিজেকে এত ছোট ভাব কেন? দেখ চলো। তুমি করতে চাইলে আমি কথা বলতে পারি।
আমি জানি যে, স্যার আমার খুব মঙ্গলাকাঙ্খি। আমি বললাম যে স্যার আমি করব।
আলমগীর কবীর শাহাদাত চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলেছে। শাহাদাত চৌধুরী উনাকে বলেছে, উনাকে আসতে বলো।
তখন শাহাদাত চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, সম্পাদক শামসুর রাহমান। আমাকে স্যার উনার সঙ্গে দেখা করতে বললেন।
তখন আমি বললাম, স্যার আমি যেতে পারব না। আমার ভয় লাগে। আর আমি কাউকে চিনিওনা। আবার উনি যদি আমাকে পাত্তা না দেয় তাহলে আমার আরও খারাপ লাগবে। তখন উনি বললেন, তাহলে আমি যদি তোমাকে নিয়ে যাই। উনি পরে নিয়ে গেছিলেন। উনার অফিস ছিল গুলিস্তানের উল্টাপাশে। তখন উনি আমাকে যেতে বললেন। ওটাও আরেক কাহিনি। কি সব অভিজ্ঞতা যে হয়েছে জীবনে তা বলার নয়! সিনেমার লোকেরা মেয়ে দেখলে যে কি করে, সেটা ওখানে না নামলে বোঝা যেত না আর কি!
আমি উনার অফিস থেকে গেলাম। শাহাদাত চৌধুরীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। উনি বললেন, আপনি যদি লিখতে চান অন্তত তিনটা সংখ্যা আপনার লিখতে হবে। তিনটা সংখ্যা লেখার পর আপনাকে বলব ইয়েস অর নো!
আমি বললাম ঠিক আছে। প্রথম ছবিটা ছিল মতিন রহমানের। সে ঢাকা ফিল্ম ইনস্টিটিউটে আমাদের সঙ্গে ক্লাস করেছিল। ওর প্রথম ছবি লাল কাজল। নায়িকা ছিল শাবানা। সে এই ছবিতে বাচসাস পুরস্কারও পেয়েছে। ফিল্মের সমালোচনা আসলে দুই ধরণের হয়। একাডেমিক্যালিও হয়। আর একটা হয় পাঠকের জন্য সহজভাবে দেখা। এনালাইসিস। যেটা হয় যে, পাঠক যেন মজা পায় এইরকম করে লেখা। যেমন এই যে আমাদের ছেলেরা বিশ্বকাপ জিতল। তখন পত্রিকায় ছাপা হলো দারুণ হেডলাইন। ‘উনিশের হাত ধরে বিশে বিশ্বজয়’ – কী চমৎকার একটা হেডলাইন! এত সুন্দর লেগেছে আমার কাছে এটা বলার কথা না। পরে জানতে পেরেছি এটা সুমনা শারমীনের দেয়া! এটা শুনে আমার খুব ভাল লেগেছে, যে মেয়েরা এটা পেরেছে। এটাতে আমাদের মেয়েদের আর একটা জয় হলো। আমাদের মেয়েরা আসলে খুব ক্রিয়েটিভ।
আমাদের যদি সুযোগ দেয়া যায়, আর আমাদের যদি এত ভার চাপানো না হয়, তাহলে আমরা আরও অনেক ভাল করতাম। সামাজিকভাবে বলো, মানবিকভাবে বলো, আমরা অনেকে এর দায় এড়াতে পারিনা। না হলে, সুমনা যে এত সুন্দর একটা হেডলাইন দিয়েছে এটা কিন্তু একটা ছেলের মাথা থেকে আসেনি।
আমাকে যখন শাহাদাত ভাই কাজটা দিল তখন আমি সিনেমার একাডেমিক্যালি এনালাইসিস করলাম। ওটা ছাপা হয়েছে। পরের সপ্তাহে আমি গেলাম। পরের সপ্তাহে আমাকে বলল, মাহমুদা এত কঠিন শব্দ পাঠক বুঝে না। তারা যা চোখে দেখে তা লিখতে পছন্দ করে। আপনি সেটাই লিখবেন। কেমন ছবিটা হয়েছে সেটা লিখবেন। স্যাটায়ার করে লিখবেন। উনি বললেন, নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিভিউ পড়েছেন? আমি বললাম, মাঝে মাঝে পড়েছি। উনি বললেন, তাহলে আপনি এক কাজ করেন। আমাদের এখানে নিউ ইয়র্ক টাইমস রাখা হয় নিয়ে যান, নিয়ে গিয়ে পড়ে দেখেন ওরা কিভাবে লিখে। সেভাবে আপনি লিখেন।
সমালোচনাগুলো তো আমাদের বাসায় হয়। ছোটবেলা থেকে আমার মামা-চাচা-মা তারা চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা করে। আমার কাছে কাজটা খুবই সহজ হয়ে গেল। দ্বিতীয় সমালোচনাটি দেয়ার পরে তিনি এত খুশি হয়ে গেলেন উনি সঙ্গে সঙ্গে আমাকে নিয়ে নিলেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় আমি কাজ করেছি। আমাকে স্টাফ রিপোর্টার করা হয়নি। অনেক পরে আমি তার ইন্টারভিউ নিয়েছিলাম সেখানে তাকে প্রশ্ন করেছিলাম, আপনি কেন মেয়েদের স্টাফ রিপোর্টার করেন না? আমি তো স্টাফ রিপোর্টারের কাজ করতাম সেখানে কেন নেন নি! খালি মুখে বলছেন তুমি তো স্টাফ রিপোর্টার। তখন উনি যেটা বললেন, সেখানেও রাজনীতি ছিল। যে প্রধান প্রতিবেদক ছিল সে সিনেমার সমালোচনা লিখত। সে খুব উচ্চভিলাষী লোক ছিল। ঐ যে তার কাছ থেকে নিয়ে আমাকে দেওয়া হয়েছে কাজটা এজন্য সে আমাকে শত্রু মনে করত। সবকিছু হলেই খালি বলত, মাহমুদা আমি এফডিসিতে যেতে পারিনা, এফডিসিতে সবাই গালিগালাজ করে। আপনি এগুলো কি লিখেন? এই কথা শোনার পরে আমি বুঝতাম না আসলে আমি কি লিখতাম যার জন্য সবাই উনাকে বকে!

আমি বলতাম, খুব ধন্যবাদ যে আপনি আমাকে ধরিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আমার বিনয়টা তার কাছে কিছু মনে হতোনা। সে আমার নামে খুব অপপ্রচার চালাত। আমাকে বলত, আমি হিন্দুর মেয়ে। সবার কাছে প্রচার করত আমি কনভারটেড মুসলিম। আমি বুঝতাম, যে কেন তার এত ক্ষোভ ছিল।

জনপ্রিয় সংবাদ

সপরিবারে হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন তারেক রহমান

সাংবাদিকদেরও একটা রাজনীতি আছে : মাহমুদা চৌধুরী

আপডেট সময় : ০৫:২৭:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ মে ২০২৪
স্বাধীন বাংলাদেশে সাংবাদিকতায় যেসব নারী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম মাহমুদা চৌধুরী। তিনি চল্লিশ বছর ধরে এই পেশায় থেকে পেশাকে সমৃদ্ধ করেছেন। দীর্ঘ সাংবাদিকতা ক্যারিয়ারে পেরিয়েছেন নানা চড়াই-উৎরাই। তিনি একান্ত আলাপচারিতায় বলেছেন, তার জীবনের না বলা অনেক কথা। তার সাক্ষাতকার নিয়েছেন দৈনিক সবুজ বাংলা’র রিপোর্টার তাসকিনা ইয়াসমিন। আজ থেকে ধারাবাহিকভাবে তার সাক্ষাতকার ছাপা হচ্ছে। 
পর্ব-৪

বরেণ্য পরিচালক আলমগীর কবীর বিচিত্রা সম্পাদক শাহাদাত চৌধুরীর কাছে রিপোর্টার হবার জন্য নিয়ে যান

আমি বেগমে কাজ করতে করতে ফিল্ম আর্কাইভস এবং ইনস্টিটিউটে যাই। সেইসময় ফিল্ম এপ্রেশিয়েশন কোর্স ছিল ৬ মাসের। একদিন করে তো, বাসা থেকে যেয়ে ক্লাস করতাম। ঐ সময় আমাকে লেখালেখিতে আমার হাতটা ভাল ছিল। আমার সঙ্গে তখন ভর্তি হয়েছে তানভীর মোকাম্মেল, মিলি রেজা, রেহনুমা আহমেদ, মানজারে হাসিন, সাজ্জাদ জহির। এরা সবাই আমার ক্লাসমেট। পরীক্ষা দেয়ার পরে ফরিদুর রহমান বলে একজন টিভির পরিচালক প্রযোজক ছিলেন নিউজের। ও ফার্স্ট হলো। আমি হলাম নাইনথ! মেয়েদের মধ্যে প্রথম, ছেলেমেয়েদের মধ্যে নাইনথ হলাম। মোরশেদুল ইসলাম টেনথ হলো। এই ১০ জনের মধ্যে তারা কিন্তু এখনও ৮০ শতাংশ ফিল্মের মধ্যে রিলেটেড। আর বাকিসব কিন্তু ঐরকম দেখিনা। এই ১০ জনই আমরা দেখলাম ফিল্মটাকে নিয়ে সত্যি খুব সিরিয়াসলি কাজ করছি আমরা।
আলমগীর কবীর একদিন আমাকে বললেন, মাহমুদা তুমি ভাল পত্রিকায় যাও না কেন! এটা তো সিলেক্টিভ পিপলদের জন্য।

তুমি আরও ভাল পত্রিকায় আস না কেন? বললাম স্যার আমার তো কোন লিংক নাই। আমি তো কাউকে চিনি না। তখন স্যার বলল করতে চাও কিনা বলো! আমি সাহস করে বললাম, আমি যদি সুযোগ পাই তো করব! কিন্তু আমি জানি, আমার বাসায় হয়ত বাধা আসবে কিন্তু আমি ডেসপারেট। তখন উনি বললেন, ঠিক আছে আমি একটু কথা বলি। আমাকে উনি বললেন, মাহমুদা তুমি বিচিত্রায় কাজ করবে? আমি বললাম, বিচিত্রায়! সেখানে তো সব বড়রা কাজ করে। কাউকে তারা পাত্তা দেয়না। ওদের আচরণটা আমার ভাল লাগেনা। তাদের সঙ্গে কাজ করা যাবে না।
উনি বললেন, তুমি যদি কাজ করতে চাও তাহলে বলো আমি বললাম স্যার আমি কি পারব?
তখন উনি বললেন, তুমি মেধাবী তুমি পারবে। তুমি নিজেকে এত ছোট ভাব কেন? দেখ চলো। তুমি করতে চাইলে আমি কথা বলতে পারি।
আমি জানি যে, স্যার আমার খুব মঙ্গলাকাঙ্খি। আমি বললাম যে স্যার আমি করব।
আলমগীর কবীর শাহাদাত চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলেছে। শাহাদাত চৌধুরী উনাকে বলেছে, উনাকে আসতে বলো।
তখন শাহাদাত চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, সম্পাদক শামসুর রাহমান। আমাকে স্যার উনার সঙ্গে দেখা করতে বললেন।
তখন আমি বললাম, স্যার আমি যেতে পারব না। আমার ভয় লাগে। আর আমি কাউকে চিনিওনা। আবার উনি যদি আমাকে পাত্তা না দেয় তাহলে আমার আরও খারাপ লাগবে। তখন উনি বললেন, তাহলে আমি যদি তোমাকে নিয়ে যাই। উনি পরে নিয়ে গেছিলেন। উনার অফিস ছিল গুলিস্তানের উল্টাপাশে। তখন উনি আমাকে যেতে বললেন। ওটাও আরেক কাহিনি। কি সব অভিজ্ঞতা যে হয়েছে জীবনে তা বলার নয়! সিনেমার লোকেরা মেয়ে দেখলে যে কি করে, সেটা ওখানে না নামলে বোঝা যেত না আর কি!
আমি উনার অফিস থেকে গেলাম। শাহাদাত চৌধুরীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। উনি বললেন, আপনি যদি লিখতে চান অন্তত তিনটা সংখ্যা আপনার লিখতে হবে। তিনটা সংখ্যা লেখার পর আপনাকে বলব ইয়েস অর নো!
আমি বললাম ঠিক আছে। প্রথম ছবিটা ছিল মতিন রহমানের। সে ঢাকা ফিল্ম ইনস্টিটিউটে আমাদের সঙ্গে ক্লাস করেছিল। ওর প্রথম ছবি লাল কাজল। নায়িকা ছিল শাবানা। সে এই ছবিতে বাচসাস পুরস্কারও পেয়েছে। ফিল্মের সমালোচনা আসলে দুই ধরণের হয়। একাডেমিক্যালিও হয়। আর একটা হয় পাঠকের জন্য সহজভাবে দেখা। এনালাইসিস। যেটা হয় যে, পাঠক যেন মজা পায় এইরকম করে লেখা। যেমন এই যে আমাদের ছেলেরা বিশ্বকাপ জিতল। তখন পত্রিকায় ছাপা হলো দারুণ হেডলাইন। ‘উনিশের হাত ধরে বিশে বিশ্বজয়’ – কী চমৎকার একটা হেডলাইন! এত সুন্দর লেগেছে আমার কাছে এটা বলার কথা না। পরে জানতে পেরেছি এটা সুমনা শারমীনের দেয়া! এটা শুনে আমার খুব ভাল লেগেছে, যে মেয়েরা এটা পেরেছে। এটাতে আমাদের মেয়েদের আর একটা জয় হলো। আমাদের মেয়েরা আসলে খুব ক্রিয়েটিভ।
আমাদের যদি সুযোগ দেয়া যায়, আর আমাদের যদি এত ভার চাপানো না হয়, তাহলে আমরা আরও অনেক ভাল করতাম। সামাজিকভাবে বলো, মানবিকভাবে বলো, আমরা অনেকে এর দায় এড়াতে পারিনা। না হলে, সুমনা যে এত সুন্দর একটা হেডলাইন দিয়েছে এটা কিন্তু একটা ছেলের মাথা থেকে আসেনি।
আমাকে যখন শাহাদাত ভাই কাজটা দিল তখন আমি সিনেমার একাডেমিক্যালি এনালাইসিস করলাম। ওটা ছাপা হয়েছে। পরের সপ্তাহে আমি গেলাম। পরের সপ্তাহে আমাকে বলল, মাহমুদা এত কঠিন শব্দ পাঠক বুঝে না। তারা যা চোখে দেখে তা লিখতে পছন্দ করে। আপনি সেটাই লিখবেন। কেমন ছবিটা হয়েছে সেটা লিখবেন। স্যাটায়ার করে লিখবেন। উনি বললেন, নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিভিউ পড়েছেন? আমি বললাম, মাঝে মাঝে পড়েছি। উনি বললেন, তাহলে আপনি এক কাজ করেন। আমাদের এখানে নিউ ইয়র্ক টাইমস রাখা হয় নিয়ে যান, নিয়ে গিয়ে পড়ে দেখেন ওরা কিভাবে লিখে। সেভাবে আপনি লিখেন।
সমালোচনাগুলো তো আমাদের বাসায় হয়। ছোটবেলা থেকে আমার মামা-চাচা-মা তারা চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা করে। আমার কাছে কাজটা খুবই সহজ হয়ে গেল। দ্বিতীয় সমালোচনাটি দেয়ার পরে তিনি এত খুশি হয়ে গেলেন উনি সঙ্গে সঙ্গে আমাকে নিয়ে নিলেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় আমি কাজ করেছি। আমাকে স্টাফ রিপোর্টার করা হয়নি। অনেক পরে আমি তার ইন্টারভিউ নিয়েছিলাম সেখানে তাকে প্রশ্ন করেছিলাম, আপনি কেন মেয়েদের স্টাফ রিপোর্টার করেন না? আমি তো স্টাফ রিপোর্টারের কাজ করতাম সেখানে কেন নেন নি! খালি মুখে বলছেন তুমি তো স্টাফ রিপোর্টার। তখন উনি যেটা বললেন, সেখানেও রাজনীতি ছিল। যে প্রধান প্রতিবেদক ছিল সে সিনেমার সমালোচনা লিখত। সে খুব উচ্চভিলাষী লোক ছিল। ঐ যে তার কাছ থেকে নিয়ে আমাকে দেওয়া হয়েছে কাজটা এজন্য সে আমাকে শত্রু মনে করত। সবকিছু হলেই খালি বলত, মাহমুদা আমি এফডিসিতে যেতে পারিনা, এফডিসিতে সবাই গালিগালাজ করে। আপনি এগুলো কি লিখেন? এই কথা শোনার পরে আমি বুঝতাম না আসলে আমি কি লিখতাম যার জন্য সবাই উনাকে বকে!

আমি বলতাম, খুব ধন্যবাদ যে আপনি আমাকে ধরিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আমার বিনয়টা তার কাছে কিছু মনে হতোনা। সে আমার নামে খুব অপপ্রচার চালাত। আমাকে বলত, আমি হিন্দুর মেয়ে। সবার কাছে প্রচার করত আমি কনভারটেড মুসলিম। আমি বুঝতাম, যে কেন তার এত ক্ষোভ ছিল।