দেশব্যাপী নারী নিপীড়ন, ধর্ষণ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক অবনতি ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির প্রতিবাদে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতের দাবিতে দিনভর সরব ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা৷ ধারাবাহিকভাবে ধর্ষণবিরোধী কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল, শাখা ইসলামী ছাত্র আন্দোলন এবং ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীবৃন্দ।
সোমবার (১০ মার্চ) বেলা ১২:০০ টায় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। পরবর্তীতে দুপুর ২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের সামনে ধর্ষণ বিরোধী মানববন্ধন করে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীবৃন্দ। পরবর্তীতে বিকাল পৌনে ৪ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটে মানববন্ধন করেছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার নেতাকর্মীরা।
এসব কর্মসূচীতে শিক্ষার্থীদের হাতে আমার সোনার বাংলায় ধর্ষকের ঠাঁই নাই’; ‘আমার বোনের কান্না, আর না আর না’; ‘ধর্ষকের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না’; ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, ধর্ষকের ফাঁসি চাই’; ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’; ‘আমার বোন ধর্ষিত কেন, ইন্টেরিম জবাব দে’; ‘ধর্ষকের কোনো ক্ষমা নাই, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই’; ‘তনু, তানিয়া নুসরাত, আছিয়া তারপর কে? ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
এসব কর্মসূচীতে বক্তারা বলেন, ‘এর আগে আমাদের বোন তনু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত ন্যক্কারজনক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেই চলছে, কিন্তু আমরা উপযুক্ত বিচার দেখতে পাইনি। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতির কারণেই আমাদের ছোট বোন আছিয়ার ওপর পাশবিক নির্যাতনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তনুর বিচার আমরা পাইনি, এই আছিয়ার বিচার পাব কি না, সেটাও নিশ্চিত না। যেখানে আমার বোন আছিয়া হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে, যেখানে আসামি তাদের দোষ স্বীকার করে নিয়েছে, সেখানে ধর্ষণের বিচার করতে ১৮০ দিন কেন লাগবে? অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি আমাদের মা-বোনদের হয়রানির বিচার সুনিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে এ দেশের মানুষ আইন হাতে তুলে নিতে বাধ্য হবে৷
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি মুহাম্মাদ আল আমিন বলেন, ‘বাংলাদেশে ধর্ষণ আজ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও আমাদের মা-বোনেরা পাশবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, অথচ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব অপরাধ দমনে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। আমরা মনে করি, বর্তমান বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও অপরাধীদের রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য দায়ী। ইসলামই একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যেখানে ধর্ষণের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রয়েছে। ইসলামী অনুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই সমাজ থেকে ধর্ষণ ও সব ধরনের অনৈতিকতা নির্মূল করা সম্ভব।’
শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, সারা বাংলাদেশে ধর্ষণের সিরিজ চলছে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। মনে হচ্ছে, দেশে সরকার নাই। সংস্কারের নামে টালবাহানা চলছে। বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে আমার মা বোনেরা হয়রানির শিকার হচ্ছে। আমার মা-বোনেরা যার যার স্বাধীনভাবে পোশাক পড়বে, কেউ তাতে বাধা দিতে পারবে না। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল উপদেষ্টা হওয়ার আগে খুব লম্বা লম্বা কথা বলতেন। তিনি কি এখন দেখেন না যে দেশে কি হচ্ছে? আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ধর্ষণের তদন্ত শেষ করতে হবে এবং ৯০ দিনের মধ্যে বিচারিক কার্যক্রম শেষ ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে। অনতিবিলম্বে আমরা একটি নিপীড়নমুক্ত বাংলাদেশ চাই।’


























